Wednesday, June 1

ধূমপানে বন্ধ্যাত্বও আনে!


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস প্রতিবছরই ঘটা করে পালিত হয়।এর খারাপ প্রভাব সম্পর্কে বিশদ আলোচনাও হয়। গণমাধ্যমেও ধূমপানের নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়। তার পরও প্রতি বছরই বিশ্বব্যাপী বিশাল সংখ্যক মানুষ মৃত্যবরণ করে শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, প্রতি বৎসর ৬০ লাখ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে। তারমধ্যে ছয় লাখ মানুষ মারা যায় পরোক্ষ ধূমপনের কারণে। সিগারেট এবং তামাকের ব্যবহার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ফুসফুসজনিত রোগ এবং ক্যানসারের অন্যতম কারণ। শুধু সিগারেটের ধোঁয়া থেকেই সাত হাজারের বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। আর এসব রাসায়নিক পদার্থের অধিকাংশই দেহের জন্য ক্ষতিকারক। রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশের পর দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং কার্ডিওভ্যাসকুলার সিস্টেমের ক্ষতি শুরু করে। তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার কারণে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গের কী কী ক্ষতিসাধন করে তা বিস্তারিত জানালেন ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়াটি বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিকেল অ্যানকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা: ব্রিগ অনিল কুমার ধর। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র: তামাকের একটি উপাদান হচ্ছে নিকোটিন। এটিকে মেজাজ পরিবর্তনকারী ড্রাগও বলা হয়। তামাক গ্রহণের কয়েক সেকেন্ড পর মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এটি আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে এবং প্রবলভাবে সক্রিয় করে। কিন্তু ধূমপানের প্রভাব প্রশমিত হওয়ার পর ক্লান্তিদায়ক অনুভূতি তৈরি করে এবং ধূমপানের আকাঙ্ক্ষা বাড়ায়। নিকোটিন অভ্যাস তৈরি করে। ধূমপান চোখে প্রভাব ফেলে এবং চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ছানি এবং দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়। ধূমপান আপনার স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতিও কমিয়ে দেয়। যার কারণে ধূমপায়ীরা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ধূমপান মেধাশক্তির কার্যক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং ধূমপায়ীর উদ্বেগ, বিরক্তি এবং বিষণ্নতা বাড়ায়। তাছাড়া, মাথা ব্যথা এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। শ্বসনতন্ত্র: ধূমপান কারণে ফুসফুসের ক্ষতি হয়। দীর্ঘ সময় ধূমপানের ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিশোধিত করতে ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারায়। কাশি শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে না। ফলে বিষাক্ত পদার্থগুলো ফুসফুসে জমা হয়। ধূমপায়ীদের শ্বাসযন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে। সর্দি, কাশি ছাড়াও ধূমপান ফুসফুসজনিত জটিল রোগ তৈরি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কার্ডিওভ্যাসকুলার সিস্টেম: পুরো কার্ডিওভ্যাসকুলার সিস্টেম নষ্ট করে দিতে পারে ধূমপান। নিকোটিন শরীরে প্রবেশের পর রক্তনালীগুলোকে দৃঢ় বা আঁটসাঁট করে ফেলে। ফলে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়। ধূমপান শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং রক্তচাপ বাড়ায়। ফলে ধমনী প্রসারিত হয় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ধূমপানের কারণে রক্ত জমাটের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যার কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ধূমপায়ীদের মধ্যে ব্লাড ক্যানসার(লিউকেমিয়া) হওয়ার বিশাল ঝুঁকি থাকে। ত্বক, চুল এবং নখ(ইন্টেগুমেন্টারি সিস্টেম): ধূমপান ত্বকের ক্ষতি করে এর সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। তামাকের মধ্যে থাকা উপাদান ত্বকের গঠন পরিবর্তন করে দিতে পারে। ধূমপানজনিত কারণে ত্বকের বিবর্ণতা, বলিরেখা এবং অকাল বার্ধক্য দেখা দিতে পারে। হাতের নখ এবং আঙ্গুলের ত্বকের উপর হলুদ দাগ তৈরি হয় ধূমপানজনিত কারণে। ডাইজেস্টিভ সিস্টেম বা পাচনতন্ত্র: ধূমপায়ীদের মধ্যে মুখগহ্বরের রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। ধূমপানের কারণে গাম প্রদাহ(জিনজিভিটিস) এবং সংক্রমণ(পেরিওডনিটিজ) তৈরি করে। এই সমস্যার কারণে দাঁত ক্ষয়, দাঁত পড়া এবং দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস তৈরি হয়। মুখ, গলা, গলনালী, খাদ্যনালী, কিডনি এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার উচ্চ মাত্রায় দেখা যায় ধূমপানের কারণে। যৌন এবং প্রজনন পদ্ধতি: সীমিত রক্ত প্রবাহ পুরষদের যৌন ক্ষমতায় বাধাসৃষ্টি করতে পারে। ধূমপান পুরুষ-নারী উভয়ের মধ্যে যৌন তৃপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। ধূমপায়ী নারীদের মধ্যে গর্ভধারণে জটিলতা, গর্ভপাত, গর্ভের ফুলে সমস্যা এবং অপরিণত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটতে পারে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়