Saturday, January 2

হাজী কুরবান আলী!কানাইঘাটের এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব


মাহবুবুর রশিদ:
 সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ৬নং কানাইঘাট ইউপির অন্তর্গত ছোটদেশ একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে যে গ্রামের সুনাম ছিলো সর্বজন বিধিত।সেই প্রাচীন আমলেও যে গ্রামের ঘরে ঘরে একাধিক শিক্ষিত লোক ছিল। প্রবাদ ছিল ‌মাস্টার বেশ, দেখোতে যাও ছোটদেশ।অর্থ্যাৎ প্রায় প্রতিটি ঘরে গড়ে একজন করে শিক্ষক ছিলেন।শুধু শিক্ষক নন গ্রামকে ধন্য ও গর্বিত করেছেন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ সরকারী পেশাজিবী মানুষ। তাদের মধ্যে একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মরহুম হাজী মো: কোরবান আলী। ব্যক্তিগত জীবনে মরহুম মোকোরবান আলী অত্যন্ত ধর্মানুরাগী ও সজ্জন ছিলেন। ছাত্রজীবনে চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন করার জন্য ভারতে গমন করলেও পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা সার্ভে ইনস্টিটিউট থেকে সার্ভে কোর্স সম্পন্ন করে তৎকালীন সার্ভে অব পাকিস্থানে কর্মজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ইহা সার্ভে অব বাংলাদেশ নামে নামকরণ করা হয়। পাকিস্তান আমলে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি থাইল্যাণ্ড গমণ করেন। তৎকালীন সময়ে সম্ভবত তিনিই প্রথম কানাইঘাটি যিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশগমণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় উর্ধ্বতন জেলা জরিপ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মরহুম কুরবান আলী ছয় পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। আলোকিত পরিবারের সদস্যরা হলেন প্রথম পুত্র বদর উদ্দিন আহমদ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্রিয়েটিভ ডেভেলপমেন্ট (এসিডি)।তিনি আমেরিকায় প্রবাসী।সমাজসেবা ও এলাকার উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষার উন্নয়নে এলাকায় তার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয় ও প্রশংসার দাবী রাখে। দ্বিতীয় পুত্র বিশিষ্ট চিকিৎষক ডা: জালাল উদ্দিন আহমদ সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ছিলেন
বর্তমানে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তৃতীয় পুত্র জিয়া উদ্দিন আহমদ ২০০৮ সালে ইন্তেকাল করেন। চতুর্থ পুত্র জসিম উদ্দিন আহমদ,পঞ্চম পুত্র শরীফ উদ্দিন আহমদ,৬ষ্ট পুত্র বশির উদ্দিন আহমদ(সাবেক প্রভাষক কানাইঘাট ডিগ্রী কলেজ,৭ম পুত্র রেদওয়ান উদ্দিন আহমদ।তারা সবাই বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মরহুমের একমাত্র কন্যা সাজেদা আক্তার ও জামাতা মো অলিউর রহমান চৌধুরী,অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, মদন মোহন কলেজ, সিলেট। তারা বর্তমানে সপরিবারে সিলেট শহরে বসবাস করেন। এছাড়াও মরহুম কুরবান আলীর নাতি-নাতনিরা দেশে-বিদেশে কর্মরত ও উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত। বর্ণ্যাঢ্য জীবনের অধিকারী হাজী কুরবান আলী(৯০) দীর্ঘ রোগভোগের পর প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ মঙ্গলবার দুপু্র আড়াইটার দিকে ইহজগতের সকল মায়া ছিন্ন করে পরকালে গমণ করেন(ইন্নালিল্লাহি …… রাজিউন)।পরদিন বুধবার ২৩ ডিসেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায় ছোটদেশ ঈদগাহ ময়দানে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে তাঁর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের চাচাতো ভাই মৌলভী সিরাজ উদ্দিন। নামাজে জানাজায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উমরগঞ্জ দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আফতাব উদ্দিন, তালবাড়ি মাদ্রাসার মাওলানা শিহাব উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ৬নং কানাইঘাট সদর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মামুন রশিদ,সাবেক বানীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ প্রমুখ। জানাজা শেষে তাঁকে নিকটস্থ কবরস্থানে সমাহিত ও তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়