Tuesday, December 29

উম্মতের প্রতি রাসুল (সা.) এর দাবি


মাওলানা কাজী মারুফ বিল্লাহ: আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যদি তোমরা আমার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, তবে আমি তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি বড় কঠিন।' (সূরা ইবরাহিম : ৭)। কোরআনের ভাষায় আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সূরা আলে ইমরানের ১১০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'কুনতুম খায়রা উম্মাতিন'- তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, উখরিজাত লিন্নাস- তোমাদের বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তামুরুনা বিল মারুফ- তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে, ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার- অসৎকাজের নিষেধ করবে। ওয়া তুমিনুনা বিল্লাহ এবং আল্লাহর ওপর ঈমান রাখবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী প্রেরণ করেছেন এবং আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো, নবী আদর্শের ধারক-বাহক, প্রচারক-প্রসারক হিসেবে নিজকে উৎসর্গ করা। নবীর হক আদায় করা। সিরাত গবেষক আল্লামা কাজী আয়াজ (রহ.) তার 'কিতাবুশ শিফা বি তারিফিল মুস্তফা' গ্রন্থে নবীর প্রতি মানব এবং জিন জাতির কর্তব্য সম্পর্কে লেখেন, মানুষ ও জিন জাতির ওপর রাসুলের প্রথম হক হলো তাঁর প্রতি ঈমান আনা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং তিনি যে নুর (কোরআন) অবতীর্ণ করেছেন তার ওপর ঈমান আন।' (সূরা তাগাবুন : ৮)। 'হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আন। তাঁকে সাহায্য করো, তাঁর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখাও।' (সূরা ফাতহ : ৯)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'আমাকে আদেশ করা হয়েছে মানুষের সঙ্গে জিহাদ করার জন্য যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। (বোখারি : ২৫, মুসলিম : ২২)। উম্মতের ওপর রাসুল (সা.) এর দ্বিতীয় অধিকার হলো তার আনুগত্য করা। আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসুলের নির্দেশ মেনে চল ... তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎপথ পেয়ে যাবে। (সূরা নুর : ৫৪)। 'আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো। আশা করা যায়, তোমাদের ওপর দয়া করা হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৩২)। 'আসলে যে রাসুলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসা : ৮০)। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'আমার প্রত্যেক উম্মতই জান্নাতে যাবে। তবে যে অস্বীকার করেছে সে ব্যতীত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, কে অস্বীকার করেছে? রাসুল (সা.) বললেন, যে আমার আনুগত্য করেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, সেই অস্বীকার করেছে। (বোখারি : ৬৮৫১, মুসনাদে আহমাদ : ৮৫১১)। রাসুলের অবাধ্য হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। রাসুল (সা.) ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি-দলাদলি নিষেধ করেছেন। আমাদের দেশে প্রিয় নবীর শুভাগমনের মাসে মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবীকে কেন্দ্র করে আমরা বিভক্ত হয়ে যাই। ধর্মে দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, 'তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে মজবুতভাবে অাঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না।' (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, মিলাদ যার, সিরাতও তার এবং একটি অপরটির পরিপূরক। সুতরাং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। যারা অতিরঞ্জিত করে তারা রাসুলের প্রকৃত আদর্শের অনুসারী নয়। ইসলামের এ ক্রান্তিলগ্নে সিরাত ও মিলাদ নিয়ে অনৈক্য সুস্থ মস্তিষ্ক, পরিশুদ্ধ বিবেক ও নির্মল আত্মার পরিচয় নয়। অনুলিখন : আল ফাতাহ মামুন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়