Wednesday, June 24

রমজানে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা


শায়খ ড. সাউদ আশ শুরাইম: হে মুসলিম জাতি! তোমাদের কাছে এমন এক অতিথি আগমন করেছে যার সাক্ষাতের জন্য নেককার লোকদের অন্তর অধীর হয়ে থাকে। যে মেহমানের জন্য আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হৃদয়ে রুদ্ধদ্বার তাঁবু সাজানো থাকে। তাঁকে স্বাগত জানাতে তাদের শ্রেষ্ঠ ঘোড়াগুলো সবেগে ছুটতে থাকে। অনুগত অন্তরগুলো সে মেহমানের সাহচর্যের জন্য আকুল হয়। রুগ্ণ দিল সে অতিথির শুভাগমনে উজ্জ্বল হয়। এ মেহমানের সঙ্গে মহৎ সরল ব্যক্তিই ঘনিষ্ঠ হতে পারে। নিকৃষ্ট ধোঁকাবাজ ব্যক্তি ছাড়া কেউ তার থেকে দূরে থাকে না। তোমাদের কাছে হাজির হয়েছে মসজিদগুলো আলোকিত করার মাস। জিকির ও আল্লাহর প্রশংসা কীর্তনের মাস। বিজয় ও বীরত্বের মাস। নফস, প্রবৃত্তি ও শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাস। 'রমজান মাস হলো সেই মাস যাতে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য সুস্পষ্টরূপে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআনে কারিম অবতীর্ণ হয়েছে।' (সূরা বাকারা : ১৮৫)। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ বরকতময় রমজান মাস ছায়া বিস্তার করেছে। অথচ তারা এমন হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-বিবাদ ও শত্রুতা-বৈরিতায় লিপ্ত, যা সমাজে বিভেদ তৈরি করেছে, মিত্রকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বস্তকে অভিযুক্ত করেছে আর দুর্নীতিগ্রস্তকে সমাদৃত করেছে। মিথ্যুক হয়েছে স্বীকৃত, সত্যবাদী হয়েছে পরিত্যক্ত। প্রিয় অতিথি হিসেবে রমজান মাসের আগমন তাই বিচ্যুতির পর প্রত্যাবর্তন, উৎকণ্ঠার পর স্বস্তি ও উদাসীনতার পর জেগে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। রমজান মাস যদি মুসলিম উম্মাহর জর্জরিত অতীত ও শক্তিশালী বুদ্ধিদীপ্ত সজাগ বর্তমানের মাঝে টার্নিং পয়েন্ট না হতে পারে তাহলে তা উপোস ও তৃষ্ণা বৈ কিছুই নয়। এটি জীবনের আড়ম্ব্বর ও অহেতুক উপসর্গ থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার মাস, যা ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, কামনা-বাসনায় মজে যাওয়া ও ভোগ-বিলাসিতা থেকে ব্যক্তিকে সংযত রাখে। এটি একনিষ্ঠচিত্তে জবাবদিহিতা ও আত্মসমালোচনার মাস। প্রতিটি নিকৃষ্ট চরিত্র ও ঘৃণ্য আচরণ থেকে মনকে ধিক্কার জানানোর মাস। পাপাচার দমন ও শয়তানের বিভিন্ন সৈন্য-সামন্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাস। 'সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের প্রলুব্ধ করে। বস্তুত শয়তান তাদের প্রবঞ্চনাই দেয়। (সূরা নিসা : ১২০)। আল্লাহ যখন রমজান মাসের সিয়াম প্রবর্তন করলেন তখন সর্বসাধারণের জন্য ইবাদতের প্রতিযোগিতাকে সুলভ করে দিয়েছেন। তা শুধু ধনীদের জন্য ফরজ করেননি, শুধু দরিদ্র কিংবা ইবাদতগুজার বান্দাদের জন্যও না, বরং সমগ্র উম্মতের জন্যই। তাই এ মাস ইবাদতগুজার বান্দাদের জন্য প্রশান্তি ও সান্ত্বনা, ধনীদের জন্য সওয়াবের বাণিজ্য, জিকিরকারীদের জন্য নির্জনতাস্বরূপ। সবই হবে আল্লাহ প্রদত্ত সঙ্কল্প ও তেজস্বিতা সাপেক্ষে। তাতে ধনী, দরিদ্র, কোরআন পাঠকারী, রাত জেগে ইবাদতকারী প্রত্যেকের জন্যই ভাগ ও প্রতিদান রয়েছে। তবে সবকিছুই অর্জিত হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে, যে তাকওয়া অর্জনের জন্য আল্লাহ তায়ালা সিয়াম ফরজ করেছেন।' হে ঈমানদার বান্দারা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্ব্বন করো। (সূরা বাকারা : ১৮৩)। শয়তানকে বন্দি রাখার পর রোজায় অন্তরের ঔদ্ধত্য দমন করে এ বরকতময় মাসে রোজাদারদের যে মহান গুণাবলি ও চরিত্র বিকশিত হয় তার অন্যতম হলো সেই মহান চরিত্র যা ফুটে ওঠে পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে। তা বৃদ্ধি পেয়ে জ্বলজ্বল করে ওঠে। মনের স্বভাব কোমল হতে বাধ্য হয়। হৃদয় হয় অনুতপ্ত। রোজাদার ব্যক্তি তখন মানবতার প্রকৃত অর্থ বহন করে সংকীর্ণতা বিসর্জন দেয়। বড় উদার মনের ফলে বড়াই অহঙ্কার ত্যাগ করে তার মহত্ত্ব অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। আর যখন মানুষের মন মহৎ হয়ে ওঠে তখন তার জন্য ধন-সম্পদ, দানশীলতা ও মহানুভবতা প্রদর্শন করা সহজ হয়ে যায়। কৃপণতা দমিত হয়। আত্মম্ভরিতা দাফন হয়ে যায়, অথচ তা জীবন্ত। তখন সে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, উদাসীনতা অথবা দীর্ঘসূত্রতার শিকার হয় না। সে গভীরভাবে নবীর এ বাণী চিন্তা করে : 'নিশ্চয় জান্নাতে কতগুলো কামরা আছে যেগুলোর ভেতরভাগ থেকে বহিরভাগ দেখা যায়, বহিরদিক থেকে ভেতরদিক দেখা যায়।' সাহাবায়ে কেরাম বললেন, এগুলো কার জন্য হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, 'যে ব্যক্তি কথাকে সুন্দর করেছে, অন্যকে খাবার খাইয়েছে, সর্বদা রোজা রেখেছে, মানুষ যখন ঘুমন্ত তখন নামাজ পড়েছে তার জন্য।' (তিরমিজি)। রমজান মাস যদি তার মর্যাদা ও গাম্ভীর্যের অনুভূতি জাগানো, আল্লাহর বিধান মনে রাখা ও অর্থহীন খেলতামাশা থেকে দূরে থাকার কারণ না হতে পারে তখন রুগ্ন হৃদয় নিকৃষ্টতম পর্যায়ে চলে যায়। সে টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে সব ধরনের বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, গোনাহ ও পাপাচারে জড়িত থেকে পবিত্রতা ও লাজলজ্জার মাথা খেয়ে দ্বীনকে বরবাদ করে দেয়। রাসুলের এ বাণী কি তাকে সহায়তা করে না? 'যে মিথ্যা কথা, মিথ্যা বাস্তবায়ন ও অজ্ঞতা ছাড়ল না, আল্লাহর কাছে তার খাবার ও পানীয় বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই।' (বোখারি)। উম্মতের ইবাদতের মৌসুমে এসব পাপাচারী দুর্বৃত্ত যেন আল্লাহকে ভয় করে। রহমত বরকতের এ মাসে পরিবেশ নষ্ট করা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকে। ২ রমজান ১৪৩৬ হিজরি মসজিদে হারামের জুমার খুতবাটি সংক্ষেপে ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়