Monday, June 1

মৌসুমি ফল আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি


কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক: জ্যৈষ্ঠ শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ এখনও কাঠ ফাটাতে না পারলেও ঠিকই ঘাড়ের ওপর দিয়ে গরম নিশ্বাস ফেলে জানান দিচ্ছে তার আগমনী বার্তা। গরমে নিজের তৃষ্ণা মেটাতেই পানীয়ের সঙ্গে আজকাল অনেকেই বেছে নিচ্ছেন মৌসুমি ফল। এসব ফলমূল মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি আল্লাহপাকের এমন এক নেয়ামত, যা সবাই পছন্দ করে। ফলের কথা মনে পড়লে কার না লোভ লাগে? ফল খেতে জোয়ান-বুড়ো সবাই ভালোবাসে। আমাদের সমাজে কেউ অসুস্থ হলে আমরা ফল নিয়ে দেখতে যাই। এটি হাদিসের নির্দেশও বটে। মূলত পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে এ ফল। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ফল সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে বিভিন্ন ফল সহজলভ্য হয়ে ওঠে। মৌসুমি ফল আল্লাহর নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের বিশাল অংশজুড়ে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নেয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন। এ নেয়ামতরাজিই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার পরিচয় বহন করে। তাঁর সৃষ্ট সবকিছু একমাত্র মানুষের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যা কিছু আছে ভূমিতে।’ (সূরা বাকারা : ২৯)। আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামতের গণনা করতে শুরু কর তবে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না।’ (সূরা ইবরাহিম : ২৪)। মৌসুমি ফলফলাদির উপকার বলে শেষ করা যাবে না, তবে সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মানুষের শরীরে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মৌসুমি ফলফলাদির চেয়ে অধিক কার্যকরী কোনো ওষুধ নেই। এসবকিছু চিন্তাফিকির করে এক আল্লাহ তায়ালার ওপর দিল থেকে বিশ্বাস করার নামই হলো ঈমান ও শোকর বা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি (আল্লাহ তায়ালা) এমন যিনি তোমাদের জন্য আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, যা থেকে তোমরা পান করতে পার এবং তার দ্বারা উদ্ভিদগুলো (উৎপন্ন) হয়, যাতে তোমরা (জীবজন্তুগুলোকে) চরানোর জন্য ছেড়ে দাও। তিনি (আল্লাহ) তা দ্বারা তোমাদের জন্য শস্য এবং জয়তুন, খেজুর, আঙুর এবং সব ধরনের ফল উৎপাদন করেন, নিঃসন্দেহে এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নাহল : ১০-১১)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার সাহায্যে সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন করেছেন। এরপর তা থেকে সবুজ শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করেছেন। আর খেজুর গাছের মাথি থেকে খেজুরের কাঁদির পর কাঁদি সৃষ্টি করেছেন, যা বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে। আর সজ্জিত করেছেন আঙুর, জয়তুন ও ডালিমের বাগান। এসবের ফল পরস্পরের সঙ্গে সাদৃশ্যও রাখে আবার প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যেরও অধিকারী। এ গাছ যখন ফলবান হয় তখন ফল ধরা ও তা পাকার অবস্থাটি একটু গভীর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করোÑ এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা আনআম : ৯৯)। জ্যৈষ্ঠের মতো বছরের প্রত্যেক সময়ই কোনো না কোনো ফল আমাদের দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা কখনও কি ভেবে দেখেছি এ ফলের উৎপত্তি কোথা থেকে? এত সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারিগর কে? এসবই মহান আল্লাহর দান। একটি বৃক্ষের এমন কী গুণ আছে যে, সে সুস্বাদু ফল দেবে? এমন কী ক্ষমতা আছে যে, সে ফুল দেবে? গাছের কোনো ক্ষমতা নেই ফল কিংবা ফুল দেয়ার, যদি আল্লাহ তার মধ্যে ক্ষমতা না দেন। আমরা মাটিতে চারা রোপণ করি, আর তাতে ফলের ব্যবস্থা করেন আল্লাহ তায়ালা। তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, তাতে ফল মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়। এভাবে প্রতিটি বৃক্ষই আল্লাহর কুদরতি ইশারায় বড় হয় এবং ফল দেয়। যারা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে, তারা এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পায়, যার ফলে আল্লাহ তায়ালার তাওহিদে বিশ্বাস আরও উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠে। এ কারণেই নেয়ামতগুলো উল্লেখ করে বারবার এ বিষয়ের প্রতি আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সতর্ক করেছেন। এ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, এতে চিন্তাশীলদের জন্য প্রমাণ রয়েছে। কেননা ফসল, বৃক্ষ এবং এসবের ফল ও ফুলের যে সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালার কারিগরি ও রহস্যের সঙ্গে রয়েছে তা চিন্তাভাবনার দাবি রাখে। মানুষের চিন্তা করা দরকার যে, শস্যকণা কিংবা আঁটি মাটির নিচে পুঁতে রাখলে এবং পানি দিলেই আপনা আপনি বিরাট মহীরুহে পরিণত হতে পারে না এবং তা থেকে রঙবেরঙের ফল ও ফুল উৎপন্ন হতে পারে না। যা হয়, তাতে কোনো কৃষক বা চাষির ভূস্বামীর কোনো দখল নেই। বরং সবই সর্বশক্তিমানের কারিগরি ও রহস্য। সবই মহান আল্লাহর অপার করুণা। আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত এ ফলের বেশিরভাগই উৎপন্ন হয় গ্রীষ্মকালে। আর ফল পাকার জন্য রোদ ও গরমের খুবই প্রয়োজন। গরমের তীব্রতা বাড়লে ফল দ্রুত পেকে যায়। মানুষের জন্য আল্লাহর নেয়ামত ত্বরান্বিত হয়। সে হিসেবে গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ আমাদের জীবনের জন্য রহমত বলেই গণ্য হবে। এ ঋতুর কারণেই আমরা রসে ভরা সুস্বাদু ফলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি। আল্লাহ কোনো দিনকালকেই অভিশপ্ত করেননি। সাময়িক দৃষ্টিতে কোনো কোনো সময়কে আমাদের জীবনের জন্য অভিশাপ হিসেবে মনে হলেও এতে রহমত নিহিত।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়