Monday, May 25

সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ


সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নাইমুল ইহসান: মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ করার এক মহান দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতদেরও প্রেরণ করা হয়েছে। তাই তো পবিত্র কোরআন সাধারণভাবে সব উম্মতের অন্যতম দায়িত্ব ঘোষণা দিয়ে বলেছে, 'তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে।' (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি; বরং তাদের হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসুল। যারা নিজ নিজ জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছেন এবং অসৎ ও অকল্যাণকর কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) কেও একই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। তাঁকে হেদায়েতের মশাল হিসেবে যে মহাগ্রন্থ আল কোরআন প্রদান করা হয়েছে তার এক গুরুত্ব্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে অন্ধকার থেকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা, গোমরাহি থেকে হেদায়েতের দিকে, কুফরির অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোর দিকে আহ্বান জানানো। পৃথিবীতে মানুষ ধোঁকাপ্রবণ, দুনিয়ার চাকচিক্য ও মোহে পড়ে অনন্ত অসীম দয়ালু আল্লাহর কথা স্মরণ থেকে ভুলে যেতে পারে। সেজন্য প্রত্যেক সৎ কর্মপরায়ণের উচিত পরস্পর সদুপদেশ দেয়া, সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা। মহান আল্লাহ বলেন, 'তোমরা পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।' (সূরা মায়েদা : ২)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ গুণের পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি নবুয়তের আগে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল ফুজুলে অংশ নিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ গুণাবলি তাঁর চরিত্রে ফুটে ওঠায় আল আমিন, আস সাদিক উপাধিতে তিনি ভূষিত ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্তা, যাঁর কর্মকা- সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 'তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি সৎ কাজের আদেশ দেন, সব অসৎ কর্ম থেকে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।' রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হলো সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ ও অন্যায় কাজ থেকে মানুষকে বারণ করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ শরিয়তবিরোধী কাজ হতে দেখলে সেটাকে নিজের হাতে (শক্তির মাধ্যমে) প্রতিহত করবে, যদি ক্ষমতা না থাকে তবে মুখ দ্বারা প্রতিবাদ করবে, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তরে সেটা খারাপ জানবে, আর এটিই হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।' (মুসলিম)। নবী করিম (সা.) আরও এরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি কোনো সুন্দর আদর্শের প্রচলন করবে সে সেটার প্রতিফল (সওয়াব) তো পাবেই, তদুপরি কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সবার সম্মিলিত আমলের সওয়াবও ওই প্রচলনকারী পাবে, (অথচ) ওইসব অনুসরণকারীর সওয়াবে কোনোরূপ ঘাটতি হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোনো খারাপ আদর্শের প্রচলন করবে সে সেটার ফলে পাপী তো হবেই, তদুপরি কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সবার সম্মিলিত পাপরাশির পরিমাণ পাপের দায়ীও সে ব্যক্তি হবে, (অথচ) ওইসব অনুসরণকারীর পাপে এতটুকুও ঘাটতি হবে না।' (মুসলিম)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়