Friday, April 17

খাঁটি তওবার পাঁচ শর্ত


যে কোনো গোনাহ সংঘটিত হতেই অবিলম্বে তার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। মুখে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলাই তওবা নয়, নিম্নের শর্তগুলো মেনে তওবা করলেই সেটি হবে প্রকৃত তওবা। প্রথম শর্ত : একান্ত আল্লাহর জন্য হওয়া আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি সম্মান, সওয়াবের আশা, শাস্তির ভয় থেকে তওবায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। এ তওবার মধ্যে মাখলুকের মহব্বত বা দুনিয়ার তুচ্ছ কোনো স্বার্থ থাকতে পারবে না। অন্যথায় তওবা কবুল হবে না। কারণ সে আল্লাহর কাছে তওবা করেনি, বরং ওই উদ্দেশ্যের কাছে সে তওবা করেছে। দ্বিতীয় শর্ত : লজ্জিত হওয়া অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে। হায়! এ গোনাহ যদি না হতো- এমন আশা করবে। ফলে এ লজ্জা ও পেরেশানির কারণে সে আল্লাহর দিকে ফিরে যাবে। তাঁর সমীপে নত হবে এবং যে নফস তাকে অন্যায় করতে প্ররোচিত করেছিল তার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হবে। তৃতীয় শর্ত : তৎক্ষণাৎ গোনাহ বর্জন গোনাহ যদি হারাম কাজ করার পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তা পরিত্যাগ করতে হবে। আর যদি নাফরমানি ওয়াজিব বর্জন করার কারণে হয়, তবে তা তখনই করতে হবে। যেমন- জাকাত, হজ। কারণ গোনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা কবুল হয় না। উদাহরণস্বরূপ কেউ সুদি লেনদেনে লিপ্ত থেকে বলল, আমি সুদ থেকে তওবা করছি। তাহলে তওবা সহিহ হবে না, বরং এ হলো আল্লাহর সঙ্গে ঠাট্টার শামিল, যা বান্দাকে আল্লাহ থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেয়। অনুরূপ জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় না করার গোনাহ থেকে তওবা করল অথচ এখনও জামাতে নামাজ আদায় বর্জন করেই চলে তবে তার সে তওবা বিশুদ্ধ হয়নি। আর যদি গোনাহ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তাদের থেকে নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত তওবা সহিহ হবে না। সুতরাং যদি গোনাহটি হয় কারও সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া অথবা সম্পদ অস্বীকার করা, তাহলে সেটার হকদারের কাছে তা পৌঁছাতে হবে, যদি সে জীবিত থাকে। আর যদি হকদার মারা যায় তবে তা ওয়ারিশদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আর যদি ওয়ারিশও না থাকে তাহলে বায়তুল মালে (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) জমা দিতে হবে। আর যদি প্রাপক জানা না থাকে, তার পক্ষ থেকে দান করে দেবে। চতুর্থ শর্ত : পুনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় সঙ্কল্প গোনাহ ত্যাগ করার পর সেটি পুনরায় না করার প্রতিজ্ঞা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তা তওবাকারীর সত্যবাদিতার প্রমাণ। যদি বলে যে, ‘সে তওবাকারী’ অথচ সে কোনো একদিন গোনাহ করার সঙ্কল্পবদ্ধ বা দোদুল্যমান থাকে, তাহলে তার তওবা বিশুদ্ধ হবে না। কারণ এটা সাময়িক তওবা, এ তওবাকারী উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় আছে যখন সে আবার এ গোনাহটি করবে। এর মাধ্যমে লোকটিকে ঘৃণাবশত গোনাহ থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বোঝায় না। পঞ্চম শর্ত : সময় অতিক্রান্ত না হওয়া সময় অতিক্রম করার পর তওবা করলে তা গৃহীত হবে না। তওবা কবুলের শেষ সময় দুইটি, ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হওয়া এবং কেয়ামত সংঘটিত হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয়ের আগে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’ (মুসলিম : ২৭০৩)। আরেক হাদিসে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বান্দার তওবা গরগরার (রুহ ওষ্ঠাগত হওয়ার) আগ পর্যন্ত কবুল করেন।’ (তিরমিজি : ৩৫৩৮)। মুফতি আল-আমিন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়