Friday, April 17

আকাশের সূর্য বনাম হেদায়েতের সূর্য


মুফতি আহমদ মফিজ: আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আহজাব : ৪৫-৪৬)। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী (সা.) কে আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সূর্য সম্পর্কে এরশাদ করেন, ‘আমি তাতে (আকাশে) আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা নাবা : ১৩)। সূর্যের সঙ্গে নবী (সা.) এর বেশ কতগুলো দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে। সূর্যের মাধ্যমে উত্তাপের ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা প্রাণিজগতের জীবন ধারণের জন্য যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর হচ্ছে সূর্য। সূর্য এ পৃথিবীতে যে উত্তাপ দিয়ে থাকে তা যদি না দিত তাহলে তাতে একটি প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারত না। অনুরূপভাবে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে যে মানবতা ও নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন তা যদি না দিতেন তাহলে এ পৃথিবীর বুকে মানুষ মানুষরূপে বেঁচে থাকতে পারত না। তাই নবী (সা.) এর আবির্ভাবের আগে আইয়ামে জাহেলিয়াতে মানুষ মানুষ ছিল না, বরং পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেদের হাতে নিজেদের মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। সাধারণ থেকে সাধারণ বিষয় নিয়ে যুগ যুগ ধরে লড়াই করত। সূর্যের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা সূর্যের প্রখর উত্তাপে প্রতি মুহূর্তে অপরিমেয় পানি সমুদ্র ও মহাসমুদ্র থেকে বাষ্প আকারে আকাশে উত্থিত হয়। অতঃপর সে পানি আল্লাহ তায়ালার কুদরতে বৃষ্টির আকারে বর্ষিত হয়। এর মাধ্যমে বিশ্বজগৎ সুজলা-সুফলা হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমেই প্রাণিজগতের খাদ্যের ব্যবস্থা হয়। সূর্যের মাধ্যমে যেমন আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতে পানির ব্যবস্থা করেন, যে পানির অপর নাম জীবন, তেমনি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর হেদায়েতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির আত্মসঞ্জীবনী সুধা পানের ব্যবস্থা করেন, যা ব্যতীত মানবজাতির আত্মা বেঁচে থাকতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমাকে যে হেদায়েত দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে পানির মতো।’ (বোখারি : ২৯/১)। সূর্যের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা আকাশে চাঁদ ও অসংখ্য তারকারাজি উদিত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর আঁধার সম্পূর্ণরূপে দূর হয় না। কেবল কিছুটা আলোর ব্যবস্থা হয়। অথচ একটিমাত্র সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হয়। তেমনি হেদায়েতের আলোকোজ্জ্বল সূর্য রাসুল (সা.) এর আবির্ভাবের পরও সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠেছে। চাঁদ ও তারকারাজির আলো আহরিত বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, চাঁদ ও তারকারাজির নিজস্ব কোনো আলো নেই। বরং চাঁদ ও তারকারাজির আলো সূর্যের আলো থেকেই আহরিত। ঠিক তেমনি অন্য নবী-রাসুলরা হেদায়েতের যে আলোর মশাল জ্বেলেছিলেন, সে আলোও নূরে মুহাম্মদি থেকে আহরিত ছিল। ঈসা (আ.) নবী হওয়া সত্ত্বেও মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেদন করেছিলেন। তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করা হয়েছে, কেয়ামতের আগে তিনি পুনরায় এ পৃথিবীতে মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হয়ে আসবেন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘ওই সত্তার কসম যার হাতে আমি মুহাম্মদের প্রাণ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মের পুত্র (ঈসা) ন্যায়পরায়ন বাদশাহ হয়ে নেমে আসবেন।’ (বোখারি : ৮২/৩)। সূর্যের আলোয় চাঁদ ও তারকার আলো নিষ্প্রভ বিজ্ঞানীদের মতে, দিনের বেলায়ও আকাশে চাঁদ ও তারকারাজি বিদ্যমান থাকে; কিন্তু সূর্যের আলোক প্রবাহের কারণে চাঁদের কিরণ ও তারকারাজির আলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। অনুরূপভাবে নবী (সা.) এর আবির্ভাবের পর পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের হেদায়েতের বাতি (তথা পূর্ববর্তী নবীদের শরিয়ত) নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। তাই এখন সমগ্র পৃথিবীর অধিবাসীকে একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) এর শরিয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। যেমনটি ইঙ্গিত করা হয়েছে সূরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াতে। সূর্য উদিত হওয়ার পর চাঁদ ও গ্রহ-উপগ্রহ নিষ্প্রভ হয়ে যায় সূর্যের উপস্থিতি যেমন চাঁদ ও অন্যান্য তারকারাজির কার্যকারিতা বাকি থাকে না, তেমনি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপস্থিতিতে অন্য নবী-রাসুলদের কার্যকারিতা বাকি থাকবে না। এর প্রমাণ হচ্ছে কেয়ামতের দিন সব হাশরবাসী যখন অসহনীয় দুঃখ-যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উঠবে, তখন তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করে বিচারকার্য শুরু করার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে সুপারিশ করার ব্যাপারে অন্য নবী-রাসুলরা অক্ষমতা প্রকাশ করবেন, আর একমাত্র নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সুপারিশে আল্লাহ তায়ালা বিচারকার্য শুরু করবেন। (বোখারি : ২৪০১/৫; মুসলিম : ১২৩/৬)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়