দেলোয়ার হোসেন : বুক চেতিয়ে গর্ব করে বলতে পারেন, বাংলাদেশ এখন আর সাটামাটা দল নয়। সিরিজ জিততে পারে যে কোনো দলের বিপক্ষেই, তা সে যতোই শক্তিশালী হোক। মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও টাইগারদের হাতে বিধ্বস্ত সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচের পর এদিনও জ্বলে উঠলেন তামিম ইকবাল খান। তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটের বিরাট ব্যবধানে। গত ম্যাচে করেছিলেন ১৩২। আজ করলেন ১১৬ রান, ১১৬ বলে । তামিম যে জ্বলে উঠেছেন রীতিমত।
এক ম্যাচ হাতে রেখে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে ( ২-০) নয়া ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। হ্যাঁ, নতুন ইতিহাসই তো। শুক্রবারের আগে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ফরমেট মিলে একটা জয় ছিল বাংলাদেশের। দুই দিনের ব্যবধানে টানা দুই জয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান আসলেই বিস্ময়কর।
পাকিস্তানের করা ২৩৯ রান টপকাতে এতোটুকু বেগ পেতে দিলেন না তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। ১১.৫ ওভার বাকি থাকতে ৭ উইকেট হাতে রেখে দাপটে জয়ে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
যদিও টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ২২ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরে যান ওপেনার সৌম্য সরকার। শুরুর চাপ উড়িয়ে দলকে পথ দেখান ওপেনার তামিম ইকবাল ও ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আগের ম্যাচে ১৩৫ বলে করেছিলেন ১৩২ তামিম। আজ আরও বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন এ মারকুটে ব্যাটসম্যান। মাত্র ৩১ বলে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের ২৯ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। তামিমের সঙ্গে দেখেশুনেই খেলছিলেন রিয়াদ। কিন্তু ১৭ রানে আজমলের বলে হঠাৎই বোল্ড হয়ে যান রিয়াদ। তবে তাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ ছিল না। কারণ তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবং মিস্টার কন্সিসটেন্ট মুশফিকুর রহিম। এদিনও যথারীতি সাবলীল ব্যাটিং। ৫০ রান পূরণ করেন ৫৭ বলে। ৭০ বলে ৬৫ করে মুশফিক যখন জুনায়েদ খানের বলে আউট হন তখন কাজের কাজটি করা হয়ে গেছে। জয় থেকে মাত্র ২২ রান দূরে বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে সে কাজটুকু সারেন তামিম।
দুপুরে টসে জিহতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। ৫ উইকেটে ৭৭। সঙ্গতকারণেই পাকিস্তানকে অল্পতে গুটিয়ে দেওয়ার হিসেব কষেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হযনি। হারিস সোহেলের পর সাদ নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজের রেকর্ড পার্টনারশিপে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান করে ফেলেছে পাকিস্তান। মানে জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ২৪০ রান।
শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না সফরকারীদের। ভালোই এগুচ্ছিলেন দুই ওপেনার আজহার আলী ও সরফরাজ আহমেদ। মাশরাফির বৃুদ্ধিদীপ্ত বোলিং পরিবর্তনে কাজ হলো। প্রথম বলেই সরফরাজ আহমেদকে ফিরিয়ে দেন রুবেল। অফষ্ট্যাম্পের বাইরে অতিরিক্ত বাউন্স করা বলে শট খেলেন সরফরাজ। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে স্লিপে। সৌম্য সরকার ঠিক যেন ঈগলের মতো লুফে নেন সেই ক্যাচ। এরপর ৬ বল খেলা হাফিজ সানির শিকারে পরিণত হয়ে শুন্য রানে ফিরতে বাধ্য হন। নবম ওভার করা সানির শেষ বলটি ছিল আর্ম ডেলিভারি। হাফিজ তা ঠেকাতে যান যবুথবু ভাবে। কিন্তু বল ততক্ষণে মাঝের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেছে। ম্যাচের ভিত গড়ার চেষ্টায় থাকা অধিনায়ক আজহারকে ফিরিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এরপর ফুয়াদ আলমকে ০ রানে ফেরান অনিয়মিত বোলার নাসির হোসেন। বিপদে লড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বেশীক্ষণ টিকতে পারেনি রিজওয়ান। ১৩ রানে তাকে ফেরান সাকিব। ২১.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৭। রীতিমত ব্যাটিং বিপর্যয়ে পাকিস্তান। কতোদূর যেতে পারবে পাকিস্তান, ১৫০, ১৬০? না, তেমনটি হয়নি। চরম বিপদে পাকিস্তানকে পথ দেখান হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম।। দারুণ ব্যাট করতে থাকা হারিস সোহেলকে ৪৪ রানে ফেরান মাশরাফি। জুটি ভাঙ্গার পর স্বস্তি এসেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু ওয়াহাব রিয়াজ এদিন হাজির হলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ভুমিকায়। সাদ নাসিমের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটি বেঁধে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত রইলেন তারা। মাত্র ৪০ বলে ৫১ রান করে নট আউট থাকলেন রিয়াজ। আর ৯৫ বলে ৭৭ করে পাকিস্তানের ত্রাতার ভূমিকা নেন সাদ নাসিম। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ২ উইকেট নেন। একটি করে নেন মাশরাফি, রুবেল, আরাফাত সানি ও নাসির।
-----ঢাকাটাইমস

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়