Saturday, October 18

আত্মসাৎ করা উপার্জন হারাম


মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী অসৎ উপার্জন আমাদের কারও কারও জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। একদিকে চলছে নামাজ, রোজা, হজ পালন, অন্যদিকে থেমে নেই অসৎ পথে উপার্জন। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হালাল উপার্জন এবং হালাল খাদ্য। আল্লাহ বলেছেন, 'আমি উত্তম রিজিকদাতা' (সূরা জুমা : ১১)। এ অমোঘ সত্য জেনেও আমরা অসৎ পথের রিজিক অন্বেষণে পুরোপুরি অন্ধ। অসৎ অর্থের ব্যাংক ব্যালেন্স যতই গোপনীয় থাকুক, আলেমুল গায়েব আল্লাহর ফেরেশতাদের হাতে তা তাৎক্ষণিক রেকর্ড হচ্ছে। আত্মীয়-পরিজনের কাছে যতই অজানা থাকুক, মহান আল্লাহর দফতরে অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে তা লিপিবদ্ধ হচ্ছে। আল্লাহর মহা রাডারকে ফাঁকি দেয়া ক্ষুদ্র ও দুর্বল মানবের পক্ষে অসম্ভব। সুইস ব্যাংক বা দুবাই, ব্যাংকক, মালয়েশিয়ার ব্যাংকে গোপনে অসৎ উপার্জন সঞ্চিত রেখে আমরা কি আসলে পার্থিব জীবনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করছি, নাকি জাহান্নামে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানকে নিশ্চিত করছি? প্রতিটি চাকরি, পেশা ও ব্যবসায়ে অসৎ উপার্জনের হাতছানি আমাদের প্রলোভিত করছে। আল্লাহ বলেছেন, 'আমার প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করো'। সৎ পথের উপার্জনে আছে অনাবিল শান্তি, স্বস্তি। শয়তানের প্ররোচনায় অসৎ উপার্জনের মোহ আমাদের ক্ষণস্থায়ী এ পার্থিব জীবনকে জাহান্নাম অভিমুখী করছে। অপেক্ষা করছে অসৎ উপার্জনকারীদের জন্য জাহান্নামের দীর্ঘ যন্ত্রণা, কষ্ট এবং শাস্তি। অনেকে বলে, পরকাল তো আসবেই, সেটা অনেক দূরে, যখন আসবে তখন হিসাব দেব। এখন নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শূন্য থাক। ওমর খৈয়ামের এ বাণীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে আমাদের জীবনে। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের যবনিকাপাত হবে এবং পরজীবন হবে অনন্তকালের, এ বিশ্বাস কি আমাদের সত্যিই টলমলে? ছলে, বলে, কৌশলে কিভাবে আমরা অসৎ উপার্জনে লিপ্ত হচ্ছি, তার হিসাব অপরিমেয়। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের বারবার অসৎ উপার্জন থেকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি। এ উপার্জনের জন্য আমাদের কৌশল, পরিকল্পনা এবং বুদ্ধির শেষ নেই। চারপাশে ঘুষ, দুর্নীতির হাতছানিতে বিভ্রান্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট হচ্ছে। অসহায় মানুষ ঘুষ দুর্নীতির শিকার হয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করছে। একমাত্র সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে তা তুলে দিচ্ছে আমাদের হাতে। অথচ ওই অর্থেই লুকিয়ে আছে অসহায় মানুষের দীর্ঘশ্বাস, অভিসম্পাত। কত ফন্দিফিকির করে অসৎ আয়ের ক্ষেত্র রচনা করি আমরা! সরকারি কাজে বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করে বিমান ভাড়া তুলছি, কিংবা অফিসের তহবিলে ব্যক্তিগত আপ্যায়ন বা পারিবারিক খরচ নির্বাহ করছি। এসব অর্থ কি প্রকৃতই শুদ্ধ? এসব কীভাবে বৈধ হবে কলমের খোঁচায়? এসব কর্মকা- সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার নিদর্শন। শয়তানের প্ররোচনায় আমরা হারামকে হালাল বলছি। অসৎ উপার্জনের খাদ্য আমাদের শিরা-উপশিরায় প্রবেশ করা মাত্রই শরীরের রক্ত-মাংস দূষিত হয়ে যায়। হারাম অর্থে মানুষকে আদর-আপ্যায়ন এবং অকাতরে দান-সদকা করে সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা লাভ করছি। অসৎ উপার্জনের দান-অনুদান যেসব মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় যাচ্ছে, দাতার সঙ্গে গ্রহীতারাও সমান্তরালে গর্বিত, তুষ্ট হচ্ছে। ভয়ঙ্কর এক বিভ্রান্তির বেড়াজালে সমাজ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। অসৎ অর্থ উপার্জনের নেশা এখন আমাদের মধ্যে আকাশচুম্বী হয়েছে। স্ত্রী, পুত্র, পরিবার-পরিজনের জন্য বড় অঙ্কের শপিং, এজন্য প্রয়োজন মোটা অঙ্কের ঘুষ। একদিকে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের বাধ্যবাধকতা মেনে আল্লাহ্র অনুশাসনের আনুগত্য করছি, আবার অন্যদিকে হারাম অর্থ ব্যয়ের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ছি। ইদানীং অবৈধ অর্থে হজও পালন করছি অনেকে। বৈধ আয়ে হজ পালনের সামর্থ্য নেই কিন্তু যে কোনোভাবে অসৎ উপার্জনে হজ পালনের মাধ্যমে আলহাজ উপাধি ব্যবহার করে সামাজিক খ্যাতি অর্জন করছি। এসব প্রতারণা কার সঙ্গে? আল্লাহ বলেছেন, 'আল্লাহ সূক্ষ্ম, শ্রেষ্ঠতম কৌশলি' (সূরা আলে ইমরান : ৫৩)। ৩০ দিনের এ রোজা স্রেফ উপবাস ব্রতে পরিণত হবে, যদি আত্মশুদ্ধির পথ আমরা না খুঁজি। সামাজিক অবক্ষয়ের এ চরম সন্ধিক্ষণে দিশেহারা মুসলমান কোথায় যাবে? শূকরের মাংস, মদ ও জুয়া বর্জনেই কি অনুশাসন মেনে চলা? অসৎ পথে উপার্জন এসবের মতোই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মুসলমান হয়ে যদি হালাল পথে অর্থ উপার্জনে আমরা ব্যর্থ হই, তবে সব ইবাদতই নিষ্ফল হবে। কর্মজীবনে সহকর্মীদের বুঝিয়েছি, যত বেশি হবে অবৈধ আয়ের পরিমাণ, তত দীর্ঘস্থায়ী হবে জাহান্নামে অবস্থান এবং ডেকে আনবে ভয়ঙ্কর পরিণাম। আল্লাহ আমাদের অসৎ উপার্জন থেকে নিজেকে মুক্ত করার সুমতি দান করুন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়