Monday, October 13

সিলোনীয়ার নারিকেলের হাট!


আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী: ‘বৃহত্তর নোয়াখালীর সোনালী ফসল নারিকেল’ একথাটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। এঅঞ্চলের মানুষের জীবিকার সাথে নারিকেলের ভূমিকা কম নয়। কেবল নারিকেল, ডাব এগুলো শুধু নয়, এর ছোগলাও ফেলনা নয়। সময়ের ধারাবাহিকতায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও এঅঞ্চলের মানুষের জীবনের সাথে নারিকেলের সম্পর্ক আজও গভীর। নারিকেল গাছ লাগানো এখনো অনেকেরই প্রিয় শখ। তাই দেখা যায় ৯ থেকে ৯০ বছরের শৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা নারিকেল গাছ রোপন করছেন মনের আনন্দে, ভালোবাসার টানে। নিজেদের ভালোবাসাকে একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সপ্তাহে দুইদিন তারা একত্র হচ্ছেন নারিকেলের হাটে। বিভিন্ন বিখ্যাত বাজার, শৌখিন মার্কেটে নারিকেল থাকলেও সেখানে যেন নেই ভালোবাসার টান, নেই প্রাণের সম্মিলন। শৌখিন নারিকেল প্রেমীরা তাই প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার সারা দিনের জন্য একত্র হচ্ছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনীয়ার নারিকেলের হাটে। বিভিন্ন সাইজ ও জাতের নারিকেল মেলে এখানে। ছোট, বড়, এক এক জাত এক এক গুণে গুণান্বিত। বাজারে বেশি দেখা যায় স্থানীয় জাতের নারিকেল। বিপুল অর্থকরী ফল নারিকেল এখানে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। নারিকেল শিল্পকে ঘিরে কয়েক হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। নারিকেলের চোবড়াকে আঁশজাত করে তৈরি হচ্ছে রশি, ঝাড়–, পাপস, কারপেট, সিট। নারিকেল থেকে তৈরি পাউডার ব্যবহৃত হয় বিস্কিট, লজেন্স, সন্দেশ, লাড়– তৈরিতে। যা থেকে আয় হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। নারিকেল দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরণের তৈল, পাউডার, বার্জিন ওয়েল, মাছের খাদ্য, ফিড, ক্যান্ডি, লাড়–, চিপস্, ক্রিম, পাওয়ার সেল (মালা) দিয়ে ব্যাটারির কার্বণ। এছাড়া দৈনিক দুই কাপ নারিকেল ডাবের পানি পান করলে কিড়নি জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। বাজারের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, ফেনী-মাইজদী মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম, দারোগাহাট, নিমসার, বারইয়ার হাটের প্রায় ১৫ জন পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে নারিকেল কিনে নিয়ে যান। তারা এ বাজার থেকে নারিকেল কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। নারিকেলের সাইজ অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। এখানে প্রতি জোড়া নারিকেল সাইজ অনুযায়ী ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। ভালো দামের আশায় বিক্রেতারা সিলোনীয়া নারিকেল বাজারে নিয়ে আসেন তাদের উৎপাদিত নারিকেল। প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ হাজার নারিকেল বিক্রি হয় এই হাটে। যার আনুমানিক মূল্য ৮-১০ লাখ টাকা। প্রচুর জনসমাগমের কারণে সিলোনীয়া বাজারের অন্যন্য ব্যবসায়ের ও উন্নতি হচ্ছে। চট্টগ্রামের বারইয়ার হাট থেকে আসা নারিকেলের পাইকারী ব্যবসায়ী আবদুল খালেক জানান, যোগাযোগ সুবিধার কারণে ও প্রচুর নারিকেলের সমাগম হওয়ায় তারা এই বাজার থেকে নারিকেল ক্রয় করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ তারেক জানান, নারিকেল যেমন বেশি পাওয়া যায় তেমনি অন্যান্য সুবিধার কারনে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন এবং প্রচুর পরিমান নারিকেল কিনে নিয়ে যান। আমির গাঁও গ্রাম থেকে আগত ব্যবসায়ী আহছান উল্লাহ জানান, প্রতি বাজারের তারিখে সিলোনীয়া নারিকেল হাট থেকে ১০-১৫ হাজার নারিকেল ট্রাক বোঝাই করে কিনে নিয়ে যান। ভালো দাম পাওয়ায় বিক্রেতাদের কাছে ও বেশি নারিকেল জড়ো হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে বাজারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নারিকেল গাছ লাগালে যেমন শখ পূরণ হয়, তেমনি এ খাত থেকে আসতে পারে কিছু বাড়তি আয়। তেমনটাই বলছিলেন ওমরাবাদ এলাকার আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছর বয়স থেকে নারিকেল গাছ রোপন করি। পরিচর্যা করি। কয়েক বছরের ব্যবধানে নারিকেল বিক্রি করে হাজার টাকা বাড়তি আয় করি।’ স্থানীয় জায়লস্কর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, যোগাযোগ সুবিধা ও প্রাচীন বাজার হিসেবে সিলোনীয়ার ব্যাপক নাম ডাক রয়েছে। ফলে নারিকেল ব্যবসার সাথে অন্যন্য ব্যবসাও এখানে জমজমাট। অন্যদিকে গাড়ি, মোটর সাইকেল, বাসে করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন এই নারিকেলের হাটে। কেউ আসেন বাজার দর দেখতে, কেউ আসেন নারিকেল বিক্রি করতে। আবার ব্যবসায়ীরা আসেন নারিকেল সংগ্রহ করতে। তাই প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ফেনীর সিলোনীয়ার এই হাটে জমে উঠে বেচাকেনা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়