Tuesday, October 14

মসজিদ কি শুধু নামাজের জন্য


হাফেজ শফিকুল ইসলাম খোকন ইসলামের একটি সামগ্রিক ধর্ম, যা বাস্তবে আমরা সবাই মনে রাখি না। একদিকে যেমন ঈমান, রোজা, নামাজ, হজ ও জাকাতের বিধান মানতেই হবে প্রতিটি বিশ্বাসী বা মোমিনকে; অন্যদিকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তথা বৈষয়িক দায়িত্ব ও সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে ইসলামের বিধান পালন করাও প্রত্যেক মোমিনের কর্তব্য। ইসলামের মৌলিক নীতিমালার মধ্যে অর্থনৈতিক আচরণ (জাকাত, ফিতরা, দান, সুদবিহীন ঋণ দান ও গ্রহণ, কর্জে হাসনা ইত্যাদি) সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক সমাজমুখী ব্যবস্থা। তেমনি জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষালাভ, পরিবারের জ্যেষ্ঠতম থেকে কনিষ্ঠের প্রতি শোভনীয় আচরণ, প্রতিবেশীর প্রতি মার্জিত ব্যবহার, দারিদ্র্যের প্রতি কর্তব্য, রুজি-রোজগারে সততা, কর্মনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করা প্রভৃতি শিক্ষার সুন্দর জায়গা হচ্ছে পবিত্র মসজিদ। বর্তমানে অনেক মসজিদ নামাজের সময় ব্যতীত অন্য সময় বন্ধ করে রাখা হয়; অথচ এ সময়ে মসজিদে কোরআন শিক্ষার আসর, হাদিসের আলোচনা, ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়। মসজিদভিত্তিক পাঠাগারের উদ্যোগ নিয়ে সেখানে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। মসজিদে নববিতে বসে রাসূল (সা.) তো সমগ্র মদিনা শাসন করেছেন, সেখানে শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল। পবিত্র কোরআনেও মসজিদের অপরিসীম গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোরআনের ভাষায় 'এবং প্রত্যেক সালাতে তোমাদের মুখম-ল স্থির রাখবে এবং তারই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাকবে।' (সূরা আরাফ : ২৯)। অন্য এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে, 'ওই সমস্ত ঘর, যেগুলোকে আল্লাহ সম্মান করার জন্য এবং সেখানে আল্লাহ তাঁর নাম স্মরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে। তারা এমন ধরনের লোক যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখতে পারে না।' (সূরা নূর : ৩৬)। এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, নামাজ জামাতের সঙ্গে মসজিদেই আদায় করা কর্তব্য। এ আয়াতে বর্ণিত ঘরগুলোর অর্থ মসজিদ। প্রতিটি মহল্লা ও শহরের বিভিন্ন এলাকার মসজিদ নির্মাণের একমাত্র মূল কারণ এটি। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির আবু বকর জাসসাস লিখেছেন, এতে জানা গেল, নামাজ মসজিদে আদায় করা দরকার। তা দ্বারা প্রমাণিত হলো, ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। কেননা মসজিদগুলোকে জামাত সহকারে নামাজ আদায়ের মূল স্থান হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হচ্ছে মসজিদ আর সবচেয়ে অপছন্দীয় স্থান হলো মেলা।' (মুসলিম শরিফ)। হজরত ওসমান (রা.) বলেন, 'রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ বানাবে, আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করবেন।' (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)। আমরা যদি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করি বা মানি, তাহলে ওই সমাজের প্রতি আমাদের যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে, তেমনি সে সমাজ বা মহল্লার মসজিদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বা গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধকে লালন করতে হলে মসজিদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব অপরিসীম। কিন্তু আজ যদি আমরা মসজিদের দিকে তাকাই তাহলে কী দেখতে পাই? মনে হয় মসজিদের প্রতি আমাদের কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই, নেই কোনো দায়বদ্ধতা। ইবাদাত করতে হলে যেমন পূর্বশর্ত হচ্ছে পাক-পবিত্র হওয়া এবং অজু করা, তেমনি একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হলে আগে ভাবতে হবে কীভাবে এর অজুখানা এবং টয়লেট তৈরি করা যায়। আমরা দেখছি একটি অডিটোরিয়াম, সেমিনার ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল ইত্যাদি নির্মাণ করলে সেখানে জমির অভাব হয় না, টাকার অভাব হয় না। কিন্তু একটি মসজিদ নির্মাণ করতে গেলে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইক বাজিয়ে চেয়ার-টেবিল দিয়ে একরকম ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়। অনেক সময় প্রতারকরা এ জাতীয় ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নেয়। প্রশ্ন হলো, আমদের সমাজ কেন এমন ভিক্ষাবৃত্তি বা প্রতারণাকে প্রশ্রয় দেবে। এছাড়া আল্লাহর ঘর মসজিদ পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা আমাদের ঈমানী শক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়