Saturday, October 18

মোমিনের বিশ্বাস দৃঢ় করতে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান


নূরুজ্জামান বিশ্বাসের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে ধার্মিকের ধর্ম। আর এ বিশ্বাসের মূলে রয়েছে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিতে বিশ্বাস করতে হলে চাই তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ। স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ করার একমাত্র পথ ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত বক্তব্যকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাহায্যে যাচাই করা। তাই আমরা পবিত্র কোরআনের বক্তব্যের সঙ্গে মহাজগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সারকথার তুলনা করার চেষ্টা করব। মহান আল্লাহ এজন্য পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর সৃষ্টি এবং আল্লাহ কর্তৃক, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি প্রদত্ত শাস্তি ও তাদের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করার ও সে সম্পর্কে জানার তাগিদ দিয়েছেন। 'তারা কি লক্ষ (গবেষণা) করে না, কীভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর এটা আবার সৃষ্টি করেন? এটা তো আল্লাহর জন্য সহজ।' (সূরা আনকাবুত : ১৯)। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ মানুষকে তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে গবেষণা করে জানার তাগিদ দিয়েছেন; যাতে মানুষ অনুসন্ধান করে কোরআনের সত্যতা যাচাই করতে পারে। আর আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে হলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার বিকল্প নেই। সেজন্য কোনো সভ্যতার জ্ঞানার্জনেই নিষেধ নেই। শুধু অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ পদ্ধতি পরিত্যাজ্য। বিংশ শতকে বিজ্ঞান মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অনুসন্ধান করতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে পরিষ্কার করে তুলছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সর্বশেষ ও গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হলো- 'মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব' (ইরম ইধহম ঃযবড়ৎু)। এ 'মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব'ও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন তথ্যের সমীকরণ করলে সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি পরিষ্কার হয়ে যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে কার্যরত অবস্থায় তার বিশাল টেলিস্কোপটির মাধ্যমে মহাকাশের জ্যোতিষ্কগুলোর আলোর বর্ণালির (ঝঢ়বপঃৎঁস) লাল প্রান্তের দিকে একটি সাধারণ (ঝযরভঃ) বিচ্যুতি দেখতে পান। তিনি আরও লক্ষ করেন, পৃথিবী থেকে যে জ্যোতিষ্কগুলো যত বেশি দূরবর্তী সেগুলোর লোহিত বিচ্যুতিও ঠিক ততটাই বেশি। তার এ আবিষ্কারের ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অনুসিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে। পদার্থবিজ্ঞানের স্বীকৃত বিধিমতে পর্যবেক্ষণ স্থল থেকে যে বস্তু যত বেশি দূরবর্তী সেই বস্তু থেকে বিচ্ছুরিত আলোক বর্ণালি তত বেশি লোহিত বিচ্যুতি সম্পন্ন হবে এবং ওই একই বস্তু পর্যবেক্ষণ স্থলের যত বেশি নিকটবর্তী হবে তার লাল বর্ণচ্ছটা ততই বেগুনির (নীল) দিকে পরিবর্তিত হতে থাকবে। হাবল হিসাব করে দেখেন, মহাকাশের জ্যোতিষ্কগুলোর এ লোহিত বিচ্যুতি ক্রমবর্ধমান; অর্থাৎ দৃশ্যমান যাবতীয় জ্যোতিষ্ক ক্রমেই আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একটি জঙ্গলি ছাপযুক্ত বেলুন ফোলাতে থাকলে যেমন বেলুনের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে তার গায়ের ছাপগুলোও পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকে ঠিক তেমনভাবেই মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটছে। অন্যদিকে ক্রমসম্প্রসারণশীল কোনো বস্তুর সম্প্রসারণ শুরুর দিকে বিপরীতক্রমে পশ্চাৎধাবন করলে বস্তুটি ক্রমসঙ্কোচনশীল হয়। ফলে ক্রমসঙ্কোচনশীল বস্তুটি এক সময় সঙ্কুচিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়। তাই ঘড়ির কাঁটাকে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দিলে এটা তাত্তি্বকভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়, অতীতে কোনো এক সময়ে মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল। সর্বশেষ মহাবিশ্ব সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করে বিংশ শতকের শেষের দিকে স্টিফেন হকিং এ 'মহাবিস্ফোরণ' তত্ত্বকেই যৌক্তিক ও পরীক্ষিতরূপে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পান, যা আজ পর্যন্ত স্বীকৃত তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আর আল্লাহ বলেন, 'আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী। (আমি অবশ্যই একে ক্রমাগত সম্প্রসারিত করছি)।' (সূরা যারিয়াত : ৪৭)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়