Sunday, October 12

হারিয়ে যাচ্ছে ঐহিত্যবাহী নৌকা বাইচ


তপন বসু, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : আবহমান গ্রাম বাঙলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নিজস্বতা ও লাখো প্রাণের আনন্দ উচ্ছালতায় চিরপরিচিত নৌকা বাইচ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় বারো মাসের তেরো পার্বনের বাঙালীর বিভিন্ন উৎসবে নদ-নদীতে আয়োজন করা হতো নৌকা বাইচ। প্রতিটি বাইচের নৌকার সর্দারদের মনভোলানো উচ্চারন যেমন, এই যে গ্যালো, আইয়া গ্যালো। জোরো মারো-আরো জোরো, হেঁইওরে-হেঁইও। বুলি ও ঢোল বাদ্যের তালে তালে বাইচের নৌকার মাঝিদের উজ্জ্বীবিত করা হতো। যেকারনে অংশগ্রহনকারী মাঝিদের বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টির পাশাপাশি নদীর দুকূলে দাঁড়িয়ে থাকা লাখো মানুষের হৃদয়ে দোলা জাগাতো। তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনিতে গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে উঠতো, সঞ্চারিত হতো উৎসবের আমেজে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেসব এখন অনেকটাই গল্পের মতো। জেলার উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান ইকবাল জানান, একসময় জলাভূমি বেষ্টিত উজিরপুরের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা। ১৫৪ বছর পূর্বে লক্ষ্মীপূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ পাশ্ববর্তী উপজেলার জমিদার বাড়িতে যেতেন। পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পালা হতো। সেই থেকে নৌকা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে এ অঞ্চলে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে অদ্যবর্ধি লক্ষ্মীপূজার পরেরদিন উপজেলার হারতাপাড়া এলাকার সন্ধ্যা নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গত ৮ অক্টোবর বিকেল থেকে নান্দনিক এ নৌকা বাইচ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাদারীপুরের রাজৈর, গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে আসা সু-সজ্জিত ১০টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নেয়। প্রতিযোগী ১০টি নৌকার মধ্যে তুলিকা মজুমদার ও প্রভাতি হালদারের নেতৃত্বে দুটি নৌকার চালকের আসনে ছিলেন প্রায় ১৮০জন নারী প্রতিযোগী। ঢোল বাদ্যের তালে তালে ১০টি সু-সজ্জিত নৌকা নিয়ে হাজারের অধিক নারী-পুরুষের নৌকা যখন মাঝ নদীতে প্রতিযোগীতায় নামে তখন নদীর দু’পাড়ের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উৎসুক লাখো দর্শনার্থীদের ঢল নামে। তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনি মাঝ নদীতে প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া নৌকার প্রতিযোগীদেরকে মাতিয়ে রাখে। এর সাথে যোগ হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের ¯প্রীড বোর্ড নিয়ে মাঝ নদীতে ঘুরে প্রতিযোগী ও দর্শনার্থীদের উৎসাহ প্রদানের দৃশ্য। প্রতিযোগীতায় রাজৈরের সুকুমার বাইনের নৌকা প্রথমস্থান, কোটালীপাড়ার রনজিত বালা দ্বিতীয়স্থান, একই উপজেলার নিত্যানন্দ রায় তৃতীয়স্থান অর্জন করেন। সন্ধ্যায় বাইচ শেষে প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরন করেন এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি। উজিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অপূর্ব কুমার বাইন রন্টু বলেন, ছোট বেলা থেকেই এ নৌকা বাইচ দেখে আসছি। নৌকা বাইচ প্রথম দেখতে আসা বানারীপাড়ার স্কুল ছাত্রী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, জীবনে প্রথম নৌকা বাইচ দেখে খুব আনন্দ উপভোগ করেছি। বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, নদী মাতৃক এ অঞ্চলের ১৫৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করা হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়