Monday, October 20

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি


আজান। মুসলমানদের একটি ধর্মীয় অনুষঙ্গ। হাজারো মিনারে ভেসে বেড়ানো কিছু সুনির্দিষ্ট শব্দগুচ্ছ। প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ধ্বনিত হচ্ছে এ অপার্থিব আহ্বান। বাংলা কবিতা আর গানে নানাভাবে এসেছে আজানের কথা। এক্ষেত্রে কবি কায়কোবাদ এবং কাজী নজরুল ইসলামের কথা প্রণিধানযোগ্য। কায়কোবাদের কালজয়ী আজান কবিতা রসপাল নামক যমুনার তীরবর্তী ছোট্ট একটি গ্রামে প্রায় ১৩২ বছরের পুরনো ভগ্নপ্রায় মসজিদের ছায়াঢাকা বারান্দায় বহুকাল আগে লেখা হয়েছিল একটি অনন্য জাগরণী কবিতা। কবিতাটির নাম 'আজান'। লিখেছিলেন কায়কোবাদ নামে পরিচিত কাজেম আল কোরায়শী নামক একজন কবি। হৃদয়ের অনুধাবনে আজান তার ভেতর এক মধুর ঝঙ্কারের অপার্থিব ভাবাবেগ তৈরি করে। 'কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী কি মধুর আযানের ধ্বনি!' সেই আজানের ধ্বনি যখন কবির 'মর্মে বাজিয়া উঠে সুমধুর', তখন আমাদের সংশয়ী মন চিন্তিত হয়। ভাবনা জাগে, কী করিয়া একটি শব্দগুচ্ছ মর্মে বেজে ধমনী আকুল করে তোলে! ভক্তির তুফান উঠিয়ে কবি ছুটে চলেন মসজিদ পানে। সংশয়বাদী আমরাও সহযাত্রী হই কবির। 'নদী ও পাখীর তানে তারি প্রতিধ্বনি! 'নদী ও পাখির তান' কিংবা 'ভ্রমরের গুণগান' অথবা 'ভূধরে সাগরে জলে, নির্ঝরণী কলকলে' সবখানে বেজে উঠতে থাকে আজানের ধ্বনি। আমরা অবাক হই কবির এ বর্ণনায়। কবি আমাদের নিয়ে চলেন কালহীন এক পরিভ্রমণে। নতুন বীক্ষণ, সুচারু অন্তর্বয়ান আর তীব্র আবেগে কবি এঁকে চলেন নব-নতুন ভাবনার জলছবি। 'ঊষা যবে ফুল সাজে আসে ধরাধামে! বিশ্বপতি পূজা তরে শেফালী ঝরিয়া পড়ে' সুনির্মল ফ্রেমে প্রতিভাত হয় কবির ভক্তহৃদয়ের অনুপম শ্রদ্ধাঞ্জলি আর তার ভাবনার স্বর্গীয় টেঙ্চার। শেফালির পবিত্র শুভ্রতায় অবগাহন করে ভোরের ধরাধাম। পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠে আমাদের আজন্ম পরিচিত প্রকৃতি। মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণের সাহসী নকিব। সাহসী সেই কবির কবর ফলকে উৎকীর্ণ আছে_ 'মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই, যেন গোরে থেকে মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই...' এখানে গানের বিষয়ভৈবব, ভাবপ্রাচুর্য, শব্দপ্রকরণের সুসংহত মলাটে আত্মমগ্ন একাগ্রতায় সমর্পিত না হয়ে বরং তার অন্তর্গত ব্যঞ্জনা, উচ্চকিত কলরোলে আমাদের মনোজগতে অমোচনীয় নকশা এঁকে দিয়ে যায়। তিনি আজানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবেই এনেছেন নামাজকে। নামাজকে ইসলামী জাগরণের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন নজরুল। লিখেছেন_ 'মসজিদে ঐ শোনরে আযান, চল নামাজে চল। দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই, বক্ষে পাবি বল। ওরে চল নামাজে চল।।' অথবা, 'আমির-উল-মুমেনিন, তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন। তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি, বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কিরে গগনে মরুর শশী? ও-আযান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান? মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্বান?' যে সুধার সন্ধানে মানবহৃদয় বহুকাল অবধি অনিশ্চিত ঘুরে ফিরছে, সেই সুধার সন্ধান, সেই সুমহান স্রষ্টার 'মেজবানির দাওয়াত' আমরা পেয়ে যাই 'আজানের লেফাফায়।' 'রহমতের দস্তরখানে করুণার তশতরিতে' যেখানে জেগে ওঠে শত 'গাফেলের মুর্দাদিল'। মোয়াজ্জিনের কণ্ঠে বেজে ওঠা সেই অপার্থিব কল্যাণী আহ্বান, আমাদের হৃদয়পুরের গহিন অন্দরে অনুরণিত হয়। আমরা ভেতর থেকে খাঁটি হয়ে ওঠার কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হই। * আইমান হাফিজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়