Wednesday, October 1

আত্মশুদ্ধির জন্য কোরবানি


আল ফাতাহ মামুন: 'কোরবানি' শব্দটি আরবি 'কুরবুন' থেকে এসেছে, যার অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য তাঁর নামে পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, 'আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।' (সূরা আল হজ : ৩৪)। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর প্রেমে স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করার মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনি প্রথমে স্বপ্নযোগে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য আদিষ্ট হন। তিনি বুঝতে পারলেন, প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র ইসমাঈলকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। হজরত ইসমাঈল (আ.)ও নিজের প্রাণ আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে নির্দ্বিধায় সম্মত হয়ে আত্মত্যাগের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) এর প্রতি এটা ছিল আল্লাহর মহা পরীক্ষা। পৃথিবীর বুকে এটাই ছিল স্রষ্টাপ্রেমে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কোরবানি। আত্মত্যাগের সুমহান ও অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য পশু কোরবানি করাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাদের স্মরণে এ বিধান অনাদিকাল তথা রোজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের (কোরবানির) গোশত এবং রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো।' (সূরা আল হজ : ৩৭)। কালপরিক্রমায় প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহা ফিরে আসে, যার প্রধান আকর্ষণ কোরবানি। ঈদের দিন কোরবানিকে কেন্দ্র করে চলে মনের পশুপ্রবৃত্তি ত্যাগের মহোৎসব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। কোরবানিকারী কেয়ামতের দিন জবাইকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পেঁৗছে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানি করে নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে নাও।' (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)। কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে ও এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া মুস্তাহাব। কোরবানির চামড়া বা তার নগদ অর্থ এতিমখানা বা গরিব-মিসকিনদের দান করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত, দীন-দুঃখীরাও যাতে ঈদের আনন্দ করতে পারে সে লক্ষ্যে শুধু ভোগ নয়, ত্যাগ-তিতিক্ষার মনোভাব নিয়ে তাদের মধ্যে কোরবানির গোশত বিলিয়ে দিতে হবে বা সদকা করতে হবে। হালাল উপার্জন, তাকওয়া ও একনিষ্ঠতাই হলো কোরবানি কবুল হওয়ার প্রধান ও প্রথম শর্ত। মুসলমানদের কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণের জন্য সবাইকে উৎসর্গিত ও নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। মানুষের অন্তর থেকে পাশবিক শক্তি ও চিন্তা-চেতনা কোরবানি করে দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে কোরবানি জীব-জানোয়ার বা পশু হনন করতে আসে না, বরং কোরবানির মাধ্যমে পশুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই যে জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, তা স্মরণ করিয়ে দিতে ঈদুল আজহা প্রতি বছর ফিরে আসে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়