ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
এ বছর হজ করা যাদের নসিব হবে তাদের অনেকেই এখন পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনায় পৌঁছে গেছেন। সেখানে ঈমান ও ইসলামের বসন্তকাল বিরাজ করছে। তীব্র তাপ প্রবাহের পর কোনো জনপদে শীত নামলে আলাদা ফ্যান বা এসির প্রয়োজন হয় না। শীতের হিমেল আমেজে সবার দেহ-মন ভিজে যায়। তেমনি রহমতের অবিরাম বরিষণে হজযাত্রীদের হৃদয় আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে আরবের জমিনে। বলা হয় ' ওল্ড ইজ গোল্ড'_ পুরনোই স্বর্ণ। অন্তত প্রত্নতত্ত্বের বেলায় উক্তিটি শতভাগ সত্য। যে কোনো জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য গাছের শিকড়ের সঙ্গে তুলনীয়। যে গাছের শিকড় গভীরে যায়নি, সামান্য ঝড়ের ঝাপটায় উপড়ে যায়। এজন্য সচেতন জাতিগুলো নিজস্ব ঐতিহ্য ও জাতীয় ভিত্তিকে মজবুত করায় প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন খোঁজার জন্য অজস্র সম্পদ ব্যয় করে। সেই বিচারে মক্কা ও মদিনার জমিনে বিরাজিত ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর গুরুত্ব মুসলিম জাতিসত্তার জন্য অতুলনীয়। বিশেষত মক্কা শরিফে অবস্থিত 'কাবাঘর' এর স্মৃতি মানুষকে বিশ্বসৃষ্টির সূচনায় নিয়ে যায়। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী_ 'এ কাবাঘর হচ্ছে মানুষের জন্য নির্ধারিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম গৃহ।' অর্থাৎ কাবাঘরের আগে পৃথিবীর বুকে অন্য কোনো গৃহ বা ইবাদতের নির্দিষ্ট জায়গা নির্মিত হয়নি। আদি পিতা আদম (আ.) এর সৃষ্টির আগে বা তার সমকালে ফেরেশতারা নির্মাণ করেন কাবাঘর। তারপর থেকে সব নবী-রাসূল তাওয়াফ করেছেন এ ঘরের চারদিকে। নূহ (আ.) এর মহাপ্লাবনে যখন নৌকায় আরোহীরা ছাড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়, তখন কাবাঘরের দেয়ালগুলো আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় মর্মে বর্ণনা আছে। পরে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে ওই একই জায়গায় চার দেয়ালের পবিত্র ঘরটি নির্মাণ করেন। পরে কাবাঘরের কাঠামো ভেঙে গেলে জুরহুম সম্প্রদায় এবং একবার আমালেকা সম্প্রদায় নির্মাণ করেন পবিত্র কাবা। শেষবারে জাহেলি যুগে কোরাইশরা যখন কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন, তখন হজরত নবী করিম (সা.) নির্মাণ কাজে অংশ নেন এবং মর্যাদাপূর্ণ কালোপাথর কাবাঘরের দেয়ালে স্থাপন নিয়ে বিভিন্ন গোত্রে বিরোধ দেখা দিলে তিনি একটি চাদরে পাথরখানি রাখেন আর প্রত্যেক গোত্রপ্রধানকে চাদরের কোনা ধরে বহন করার সমাধান দেন। এভাবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে জাতি রক্ষা পায় আর হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র হাতের স্পর্শে 'হাজরে আসওয়াদ' ধন্য ও যথাস্থানে স্থাপিত হয়। সেই নির্মাণে কোরাইশরা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর কাঠামোর চেয়ে ছোট করায় মূল কাবার অংশ দেয়ালের বাইরে থেকে যায়। নবীজি (সা.) হজরত আয়েশাকে বলেছিলেন, অবুঝ লোকদের ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা না থাকলে আমি কাবাঘর ইবরাহিম (আ.) এর কাঠামোর আদলে বর্ধিত আকারে নির্মাণ করতাম। আয়েশা (রা.) এর সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.) নবীজির এ অভিপ্রায়ের কথা অবহিত হয়েছিলেন। কারবালার ঘটনার পর মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়েরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে তিনি বর্তমান হাতিমকে অন্তর্ভুক্ত করে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন; কিন্তু তার শাহাদাতের পর হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ সে কাঠামো ধ্বংস করে জাহেলি যুগের আদলে পুনরায় নির্মাণ করেন। পরে মুসলিম শাসক আবার ভেঙে ইবরাহিম (আ.) এর কাঠামোতে নির্মাণ করতে চাইলে সমকালীন মুফতি মালেক ইবনে আনাস হাজ্জাজ নির্মিত কাঠামো স্থায়ী রাখার ফতোয়া দেন, যাতে কাবাঘরের নির্মাণকাজ ক্ষমতাসীনদের খেয়াল-তামাশায় পরিণত না হয়।
কাবাঘরের সেই কাঠামোই এখনও বিদ্যমান। চার দেয়ালের কালোপাথরের এ ঘরখানির বাহ্যিক জৌলুস না থাকলেও তার আধ্যাত্মিক আকর্ষণের কারণে দুনিয়ার মুসলমানরা পাগলপারা। কারণ এ ঘরের অতুলনীয় মর্যাদার কারণে আল্লাহ পাক বলেছেন, 'এটি আমার ঘর।' এমনকি বান্দার কাছে নিজের পরিচয়ের দলিল হিসেবে সূরা কোরাইশে বলেছেন 'এই ঘরের যিনি প্রভু।' এই ঘর বেষ্টিত মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজের সওয়াব এক লাখ রাকাতের সমান। এখানে আছে আল্লাহর অফুরন্ত নির্দশন, তন্মধ্যে একটি মাকামে ইবরাহিম। এ পাথরে দাঁড়িয়ে ইবরাহিম (আ.) নির্মাণ করেছিলেন কাবাঘর। তখন উঁচু দেয়ালে পাথর বসাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওঠানামা করত। এ পাথর নিজের বুকে ধারণ করে রেখেছে ইবরাহিম (আ.) এর পায়ের ছাপ। মানুষের পক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। তবে আল্লাহর নিদর্শন কাবাঘর ঈমানদারদের প্রাণ জুড়ায়। যতই দেখে আরও দেখার আগ্রহ প্রবলতর হয়। অঝর ধারায় আল্লাহর অফুরন্ত রহমত নামছে কাবার ওপরে। যারা কাবার দিকে ভক্তিভরে অপলকে তাকিয়ে থাকে কিংবা পাগল বেশে তাওয়াফ করে, তারা সেই রহমতের অংশ পায়। আপ্লুত হয় তাদের মন ও জীবন।
Tuesday, September 16
এ সম্পর্কিত আরও খবর
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) আজ (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এই দিনে মানব জাতির জ
চাটুকারিতা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণিত কাজহাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: সুবিধাবাদী, মতলববাজরা সব সময় প্রভাবশালীদের ঘিরে রাখে। রাজনীতির মাঠ, বিভিন
ইতিহাসের প্রথম জুমা যেমন ছিল‘জুমা’ শব্দের অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। শুক্রবার মসজিদে জোহরের চার রাকাতের পরিবর্ত
বর্তমানে কোন সিমের কত গ্রাহক দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকসংখ্যা ১৯ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার। বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল কোম্পান
প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে অদম্য নারী পুরস্কার পেলেন কানাইঘাটের হালিমানিজস্ব প্রতিবেদক:আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশের অদম্য নারীদের হাতে ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৫’ সম্মানন
যে কারণে আমাদের নামাজ গোনাহ থেকে ফেরায় না প্রিয় পাঠক,ঢাকা টাইমসের আয়োজনে আজ আমরা পবিত্র কোরআনুল কারীমের ২১তম পারা থেকে ধারাবাহিক তাফসি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়