ঢাকা:নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের দুটি টি-টোয়েন্টিতে হারলেও এবার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। অন্যদিকে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্যও জয়। তাদের যেমন করে হউক শেষ ম্যাচটি জয় নিয়ে দেশে ফেরা। মুশফিক বলেন, অবশ্যই জয়ের লক্ষ্য আমাদের। আশা করছি সিরিজের শেষটা যেন ভালো হয়। এ মুহূর্তে আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং টি-টোয়েন্টির জন্য দলের সবাই প্রস্তুত। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি নেয়ারও ভালো সুযোগ এটি। আমরা এটা কাজে লাগাতে চাই। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি শুরু হবে বেলা দেড়টায়। ৩-০ ব্যবধানে জেতা ওয়ানডে সিরিজটাকে মুশফিক বাহিনী আরো উপভোগ্য করে রাখতে চায় ম্যাচটি জিতে। টি- টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৭৮ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারের লজ্জায় ডুবিয়েছিল স্বাগতিকরা। আর গত বছর শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের শতকে ১৯১ রান করা নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ৫৯ রানে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও জানেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা সাত ওয়ানডে জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে অতিথিদের হারানো বেশ কঠিন হবে। তবে চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য তার দল সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে তিনি জানান। এবার সবাই ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এই ধরনের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার জন্য যা দরকার দলের সবাই সেরকম ছন্দে আছে। ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলেও নিউজিল্যান্ডকে সমীহই করছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অতিথিদের আরো শক্তিশালী হিসেবেই বিবেচনা করছেন জানিয়ে বলেন, ওয়ানডেতেও কিন্তু ওরা খারাপ দল ছিল না। হয়ত ওদের অনেক খেলোয়াড় ছিল না। তবে আমাদের দলেও অনেকে ছিল না। আমাদের তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে ওরা অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তবে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিনশ'র বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার পর কোনো কিছুকেই আর অসম্ভব মনে হচ্ছে না বাংলাদেশের অধিনায়কের। টি-টোয়েন্টিতে লড়াই করার মতো পুঁজি কত হতে পারে জানতে মুশফিক বলেন, এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ বল বাকি থাকতে জিতেছিলাম। আবার ওরা ১৮০ রান করেও হেরে যাচ্ছিল। তবে আমারে কাছে মনে হয় ১৫০/১৬০ লড়াই করার মতো সংগ্রহ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিটি চলতি বছর বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এক বছরে তাই মাত্র ৬টি টেস্ট, ৯টি ওয়ানডে আর চারটি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেল মুশফিক বাহিনী। অন্যান্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের তুলনায় কম ম্যাচ খেলায় তাই হতাশ অধিনায়ক। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এখনো পর্যন্ত খেলিনি। টেস্ট যত বেশি খেলতে পারবো অন্য ধরনের ক্রিকেটেও তত ভালো করতে পারবো। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও আমরা বেশি খেলি না। আর টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক নই বলে এ ধরনের ক্রিকেট আরো বেশি খেলা উচিৎ। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত একটি জয় নিয়ে দেশে ফিরতে চায় নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে সিরিজে সবগুলো ম্যাচে হারের সান্ত্বনা পেতে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য উদগ্রীব অতিথিদের পেসার টিম সাউদি। বুধবারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে নিউজিল্যান্ড। কিউই দলের অন্যতম পেসার টিম সাউদি বলেন, ওয়ানডে সিরিজ হারা হতাশাজনক। একটি সিরিজ জিতে দেশে ফিরতে চাই। কয়েকমাস পরে এখানেই হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যে ধরনের কন্ডিশনে বিশ্বকাপ হবে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এটি একটি চমৎকার সুযোগ। বাংলাদেশের কন্ডিশনে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সহজ হবে না স্বীকার করে সাউদি বলেন, কঠিন কন্ডিশনে খেলা হবে। বিশ্রাম নিয়ে সবাই সতেজ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড অন্যতম শক্তিশালী দল। ম্যাচের ফরম্যাট তাদের খেলার ধরনের সঙ্গে মানানসই কি না জানতে চাইলে টিম সাউদি বলেন, আমরা সব ফরম্যাটেই ভালো দল। ওয়ানডেতে ভালো খেলেছি। তবে এখানে হেরে যাওয়াটা হতাশাজনক। দলে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। তাদের শেখার দারুণ সুযোগ। কোরি অ্যান্ডারসন, জেমস নিশামের মতো অলরাউন্ডাররা যে কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাদের উপস্থিতি অন্তত একটি জয় নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে অতিথিদের। অন্যদিকে জয় দিয়েই বছর শেষ করতে চান বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ শেন জার্গেনসন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চমৎকার একটি বছর কাটছে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি চলতি বছর তাদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। জয় দিয়ে বছরটা শেষ করার পরিকল্পনা বাংলাদেশের প্রধান কোচের। এ বছর শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দু'টি করে ছয়টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১-০ ব্যবধান হারলেও জিম্বাবুয়ে (১-১) ও নিউজিল্যান্ডের (০-০) বিপক্ষে শেষ দুটি সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ। তিনটি সিরিজেই তিনটি করে ওয়ানডে খেলেছে মুশফিকুর রহিমের দল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে ড্রয়ের পর জিম্বাবুয়ের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় তারা। তবে সর্বশেষ সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন নতুন উচ্চতায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি হারলেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ক্রিকেটের নতুন এই সংস্করণের দুই ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ড্র করে ১-১ ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচটি জিতে বছরের শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে চান জার্গেনসেন। তিনি বলেন, এ বছর আমরা ভালো খেলছি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জয় দিয়েই বছর শেষ করতে চাই আমরা। এক বছরে মাত্র ৬টি টেস্ট, ৯টি ওয়ানডে আর চারটি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ মেলায় ভীষণ হতাশ জার্গেনসেন। বেশি ম্যাচ না খেলায় বাংলাদেশের উন্নতিটা আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারছেন না বলে মনে করেন তিনি। আমরা ম্যাচ অনেক খেলি না। তাই খুব ভালো করার পরও র্যাঙ্কিংয়ে খুব একটা হেরফের হয় না। এ জন্য আমাদের আরো অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্স জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে চার মাসের কঠোর পরিশ্রমের ফল বলে মনে করেন জার্গেনসেন। জিম্বাবুয়ে কঠিন সময় কেটেছে। সেখান থেকে ফিরে গত চার মাস ছেলেরা অনেক পরিশ্রম করেছে। সে জন্য সাকিব আর তামিমকে ছাড়াও জিততে পেরেছে তারা। বাংলাদেশের কাছে শোচনীয়ভাবে ওয়ানডে সিরিজ হেরে ভীষণ হতাশ হলেও একমাত্র টি-টোয়েন্টি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান কলিন মানরো। মানরো সাংবাদিকদের জানান, শ্রীলঙ্কা সফরের আগে এ ম্যাচে জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে চায় তার দল। শ্রীলঙ্কা সফরের আগে আমরা একটি জয় চাই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরে যাওয়া খুব হতাশাজনক। এমন একটি ফলাফল আমাদের কারোরই প্রত্যাশিত নয়। যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই, আমরা জয় দিয়ে শেষ করতে চাই। ফতুল্লায় ৮৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলা মানরো বলেন, আমাদের দলটি তরুণ, শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ভবিষ্যতে আমরা খুব ভালো দল হিসেবে গড়ে উঠবো। শেষ ম্যাচে রস টেইলর শতক পেয়েছেন। একটু দেরিতে হলেও তিনি রান পেয়েছেন। এটা দলের জন্য ইতিবাচক।
এদিকে ওয়ানডে সিরিজ জিতে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা বাংলাদেশ চায় একমাত্র টি-টোয়েন্টিও জিততে। স্বাগতিকরা ওয়ানডে সিরিজ একপেশে বানিয়ে ফেললেও লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের একমাত্র টি- টোয়েন্টিতে। এদিকে ৩-০ ব্যবধানে জেতা ওয়ানডে সিরিজটাকে মুশফিক বাহিনী আরো উপভোগ্য করে রাখতে চায় ম্যাচটি জিতে। টি- টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই অতিথিদের সেরা খেলোয়াড় ম্যাককালামের অনুপস্থিতি বাংলাদেশকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তবে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশের অধিনায়ককে। মুশফিক বলেন, তামিমের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ওকে নিয়ে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আশা করছি, নতুন যারা সুযোগ পাবে, তারা তা কাজে লাগাবে। ওয়ানডে সিরিজের কম্বিনেশনে খুব একটা পরিবর্তন হবে না জানালেও নতুন কেউ সুযোগ পেতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুশফিক। তিনি বলেন, নতুনদের কেউ কেউ সুযোগ পেতে পারে। আসলে দলের সবাই পারফরম করছে। কাকে রেখে কাকে নেব, এ সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা অবশ্য দলের জন্য ভালো লক্ষণ। আগামীকাল সৌম্য খেললেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। তৃতীয় ওয়ানডের দলটিই রাখা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টির জন্য, যাতে ইলিয়াস সানির জায়গায় স্বাগতিক দলে এসেছেন অলরাউন্ডার সৌম্য সরকার। আর ম্যাচের দিন সকালে উইকেট দেখে নিউজিল্যান্ড একাদশ নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন পেসার টিম সাউদি।--ডিনিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়