Thursday, October 24

দুই নবাগত আরচ্যার হিরা-প্রেননয়ের লক্ষ্য ভাল করা

ঢাকা: অভিজ্ঞতা নিয়ে কেউ জন্ম নেয় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা অর্জন করতে হয়। অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে, নিজের জীবনে সাফল্যের পালকের ছোঁয়া লাগাতে হলে কঠিন পরিশ্রম ভিন্ন শর্টকার্ট রাস্তা বলে কিছুই নেই। চূড়ায় পৌঁছুতে হলে কিংবা অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে উপনীত হতে হলে চাই প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, পরিকল্পনা, সুযোগ, অনুশীলন আর ভাগ্যের ছোঁয়া। আমাদের দেশের হিরা মনি এবং প্রেননয় মুরং হচ্ছে তেমনই দুই আরচ্যার, যাদের অভিজ্ঞতার ভা-ার বলতে গেলে শূণ্যই। তারপরও বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশন তাদের ওপর আস্থা রেখেছে। তাদেরকে যথাসম্ভব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলতে চায় ভবিষ্যতের সফল আরচ্যার হিসেবে। সেজন্য প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুব অলিম্পিক গেমস ২০১৪-এর আরচ্যারির কন্টিনেন্টাল বাছাইপর্বের আসরকে। আসরটি অনুষ্ঠিত হবে চাইনিজ তাইপের তাইপে সিটির সংসান ডিসট্রিক্টে। বাংলাদেশ থেকে রিকার্ভ (ব্যক্তিগত ও মিশ্র দলগত) ইভেন্টে অংশ নেবে দুই আরচ্যার হিরা মনি এবং প্রেননয় মুরং। সঙ্গে থাকবেন কোচ বাবুল মিয়া এবং দলনেতা ফজলুর রহমান মুকুল। 
এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের ডাচ-বাংলা অডিটেরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের পর কথা হয় হিরা ও প্রেননয়ের সাথে। 
হিরা বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে আরচ্যারি ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১০ সালে। নবম শ্রেণীর ছাত্রী হিরা ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। আরচ্যারিতে তার সাফল্য বলতে ২০১২ সালে পঞ্চম জাতীয় আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে এককে রৌপ্য, মিশ্র দলগতে ব্রোঞ্জ এবং ২০১৩ অষ্টম বাংলাদেশ গেমসে মিশ্র দলগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক। 
এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে বিদেশে যাচ্ছেন হিরা-প্রেননয়। এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনে (বিওএ) এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে আরচ্যারি ফেডারেশন। সম্মেলনের পর কথা হয় হিরা-প্রেননয়ের সাথে। হিরা জানালো, তার নাকি ভয় লাগছে। কেন? প্লেনে ওঠার ভয়ে, নাকি পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরে যাবার ভয়ে? ‘কোনটাই না। আমি আসলে ভয় পাচ্ছি, সেখানে গিয়ে কেমন রেজাল্ট করব, সেটা ভেবে। তবে আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চপল ভাই আমাদের অভয় দিয়েছেন, বলেছেন কোন চাপ না নিতে, মনের আনন্দে খেলতে। 
আরচ্যারি অনুশীলনের জন্য হিরাদের ক্যাম্প শুরু হয়েছে গত ৭ অক্টোবর থেকে। এ প্রসঙ্গে সে জানায়, ‘মোটামুটি ভালই প্র্যাকটিস হচ্ছে। ভুল-ত্রুটি হলে কোচ ( দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আরচ্যার কোচ হিসেবে নিয়োজিত আছেন ভারতের কলকাতার নিশীথ দাস, বর্তমানে তিনি এদেশেই বিয়ে থা করে রয়ে গেছেন প্রথম দিকে তার বেতন ছিলো ৩০০০টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ২৫হাজার টাকা হয়েছে। আরচ্যারি ফেডারেশন সম্পাদক কাজী রাজিবউদ্দিন আহমদ চপল তাকে পরিচয় করে দেবার সময় এটা বললেন। তিনি আরো বলেন, এবার একটা স্বর্ণ পেলে কোচের বেতন আরো বাড়বে বলে অঙ্গিকার করেন।) সেটা শুধরে দিচ্ছেন।’ 
হিরা চার বোনের মধ্যে তৃতীয়। ব্যবসায়ী বাবা এবং গৃহিণী মা হিরাকে অনেক অনুপ্রেরণা জোগান আরচ্যারি খেলতে। এছাড়া বাড়ীর আশেপাশের মানুষও অনেক উৎসাহ যোগান। আরচ্যারি নিয়ে হিরার স্বপ্ন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হতে চাই এবং খুব শিগগীরই যেকোন প্রতিযোগিতায় ক্যারিয়ারের প্রথম স্বর্ণপদক জিততে চাই। তবে আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে চাইনিজ তাইপেতে গিয়ে বাছাইপর্বে কোয়ালিফাই করা।
বিকেএসপিতে ভর্তি হবার আগে আরচ্যারি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না হিরার, স্কুলে থাকতেও তেমন কোন খেলাধুলা করিনি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন গ্রাম্য খেলায় অংশ নিয়ে পুরষ্কার পেতাম। বিকেএসপিতে এসে আরচ্যারি বেছে নিলাম। পরে খেলাটার নিয়ম-কানুন জেনে খুব ভাল লাগলো। এখন আরচ্যারিই আমার ধ্যান-জ্ঞান। যতদিন সম্ভব খেলাটা চালিয়ে যেতে চাই। দেশে হিরার ভাল লাগে মাথুই প্রু মারমার খেলা। অন্য প্রিয় খেলা ক্রিকেট আর ভাল লাগে মুশফিকুর রহীমের খেলা। অবসরে টিভি দেখে আর আড্ডা দিয়ে সময় কাটান হিরা। 
বান্দরবানের ছেলে প্রেননয়। যখন সে ক্লাস ওয়ানে পড়ে, তখন থেকেই গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করে বেড়াতো। ঘুঘু, বুলবুলি শিকার করতাম। আমার হাতের টিপ ছিল ভাল। প্রচুর ঘুঘু আর বুলবুলি পাখি মেরেছি। এখন অবশ্য বুঝতে পারি, পাখি মারা অন্যায়। তবে এই পাখি মারার অভিজ্ঞতাই এখন কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি আরচ্যারিতে। বান্দরবানের কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এ্যান্ড কলেজে ক্লাস সেভেনে পড়–য়া প্রেননয়ও হিরার মতো প্রথম বিদেশে যাচ্ছে খেলতে। তার অবশ্য হিরার মতো সাফল্য নেই, এবারের বাংলাদেশ গেমসে আমি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছি। সহজ সরল প্রেননয়ের চোখেমুখে এখনও গ্রাম্য সারল্য খেলা করছে। কথাবার্তায়ও কোন প্যাঁচগুজ নেই। সেও এবারই প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছে। উপরন্তু ঢাকায়ও এসেছে কম। তার ভাল লাগে পাহাড়-ঝর্ণা-ঝিড়ি-গাছপালা। এই পরিবেশেই সে মানুষ। কোয়ান্টামের মেডিটেশনের কারণে তার একাগ্রতা বেড়ে গেছে। বেড়েছে মনোবল। 
দেশে ইমদাদুল হক মিলনকেই আদর্র্শ আরচ্যার হিসেবে মানে প্রেননয়, তিনি আমাকে অনেক উপদেশ দেন। একদিন তাঁর মতো সফল আরচ্যার হতে চাই। ২০১২ সাল থেকে আরচ্যারি ক্যারিয়ার শুরু করা প্রেননয়ের লক্ষ্য চাইনিজ তাইপে গিয়ে নিজের সেরা স্কোর ২৮১ থেকে আরও ভাল স্কোর গড়া। নিজের বাবা-মা আরচ্যারি খেলতে যথেষ্ট উৎসাহিত করে বলে জানায় প্রেননয়, তারা বলেন, লেখাপড়া ভাল করতে না পারলে অসুবিধে নেই, কিন্তু আরচ্যারিতে অবশ্যই ভাল করতে হবে। ---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়