মাহবুবুর রশিদ:
সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। নদী দুই উপজেলাকে আলাদা করলেও দু’পারের বেশিরভাগ অংশই কানাইঘাট উপজেলার অন্তর্গত। প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর মনোমুগ্ধকর এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বহুদিন ধরেই ভগ্ন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী মানুষের নৌকাই একমাত্র যাতায়াতের ভরসা।
কানাইঘাটের লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কাড়াবাল্লা ও জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নের আটগ্রাম এলাকাকে যুক্ত করে সুরমা নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি বহু বছরের। অন্তত ১০টি গ্রামের হাজারো মানুষ প্রতিদিন নদী পার হয়ে বিভিন্ন কাজে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরমার নদীর উত্তরপাড়ে কানাইঘাট উপজেলার কাড়াবাল্লা, কান্দিগ্রাম, বড়চাতল, মাজরগ্রাম, এরালিগুল, দনা বাজার, সুরমা বাজার, রাতাছড়া, খাশিয়াপুঞ্জি, রতনেরগুল, বালিছড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াত এ পথ দিয়ে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকা হয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। এ গ্রামগুলো দৃষ্টিনন্দন ও প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর। তাছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর এপারে থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পারাপার হয়।
দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী সেতুর দাবি জানালেও কোনোভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের বারবার আশ্বাসের পরও স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের হতাশা দিন দিন বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত নদীর পানি কমে আসার সুযোগে আটগ্রাম খেয়াঘাটের দায়িত্বে থাকা আলী আহমদ নিজ উদ্যোগে প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেন। এতে মানুষের ভোগান্তিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
দনা গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমদ বলেন,“বছরের পর বছর স্থায়ী ব্রিজের অপেক্ষায় আছি। কাঠের সেতুটি কিছুটা সুবিধা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি পুরোপুরি সমাধান নয়। আমরা চাই স্থায়ী সেতু,যা আমাদের জীবন বদলে দেবে। নেতারা অনেক কথা দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।”
স্থানীয় যুবক সুহেল জানান,“স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকার পাচ্ছে। আগের মতো নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না, ক্লাসেও সময়মতো পৌঁছাতে পারছে। যে ব্যক্তি নিজ খরচে সেতুটি করেছেন, আমরা তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”
বয়োবৃদ্ধ একজন ব্যক্তি বলেন,“আমাদের মতো বৃদ্ধদের জন্য এটি বড় আশীর্বাদ। এখন দ্রুত হেঁটে নদী পার হতে পারছি। আগে সাঁকো দিয়ে চলতে খুব ভয় লাগত।”
সেতুটির নির্মাতা স্থানীয় খেয়া ঘাটের দায়িত্বে থাকা আলী আহমদ বলেন,“মানুষের কষ্ট কমাতে গত বছর থেকেই কাঠের সেতু তৈরি করি। এবার প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। দুই পাশে রেলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ। সামান্য টাকার বিনিময়ে মানুষ এখন মালামালসহ মোটরসাইকেলও আনতে পারছে। তাদের সুবিধা দেখে আমার কষ্ট সার্থক মনে হয়।”
দৃষ্টিনন্দন এই কাঠের সেতুটি এখন শুধু যাতায়াতের মাধ্যমই নয়, পর্যটকদেরও আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন সেতুটি দেখতে। কেউ হাঁটেন, কেউ বসে নদীর স্নিগ্ধ হাওয়ায় সময় কাটান; অনেকে আবার স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, কাঠের সেতুটি আপাতত ভরসা দিলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়। বর্ষা মৌসুমে স্রোত বেড়ে গেলে কাঠের সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই সরকারি উদ্যোগে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণই তাদের চাওয়া।
স্থানীয়দের দাবি,সুরমা নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর করা।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
বিশেষ খবর

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়