নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে ভোটের মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত রবিবার রাত ৮টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীনের কেটলি মার্কার সমর্থনে কানাইঘাট পৌর শহরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাওয়ান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মারওয়ানুল করিমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী নির্বাচনী মিছিল বের করলে মিছিলকে কেন্দ্র করে নৌকা মার্কার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা বাকবিতন্ডার জের ধরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক ভাবে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফয়সাল আহমেদ ও থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক বাজারে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীনের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা তাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছ, এতে তালামিয নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, তালামিয কর্মী আলী হুসাইন সহ ছাত্রলীগের আরো ২/৩ জন কর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে আহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সিলেট ওয়েসিস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, নৌকার সমর্থকরা কারো উপর হামলা করেনি। মূলত রবিবার কানাইঘাট বাজারে নৌকা মার্কার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের বাদ মাগরিব দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করা হয়। সেই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সহ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। সভা শেষ করে নৌকার সমর্থকরা জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে বিদায় দেয়ার সময় নৌকা মার্কার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীনের সমর্থকরা কেটলি মার্কার মিছিল নিয়ে উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় নৌকার অফিসের সামনে বাজার পয়েন্টে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সহ নেতৃবৃন্দ কেটলি মার্কার সমর্থকদের উত্তেজনা পূর্ণ স্লোগান না দিয়ে শান্তিপূূর্ণ ভাবে মিছিল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু তারা নেতৃবৃন্দের কথা না শুনে নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকলে উভয় প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ নৌকার সমর্থকদের সরিয়ে দেন।
তবে স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মূলত প্রতীক বরাদ্দের পর নৌকার প্রার্থীর সমর্থনে কানাইঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল সহ প্রচারনা করে। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাওয়ান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মারওয়ানুল করিমের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছাম উদ্দিনের কেটলি মার্কার সমর্থনে প্রকাশ্যে নির্বাচনী মিছিল ও প্রচারনা চালালে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর ধরে উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গত রবিবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের কিছু সমর্থকরা বাজারে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। পরে উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা বাজারে পাল্টা পাল্টি মিছিল বের করে।
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, সংগঠনের উপর মহলের নির্দেশে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন ফুলতলীর কেটলি মার্কার পক্ষে কাজ করছেন। রবি বার রাতে কানাইঘাট বাজারে আমরা কেটলি মার্কার প্রচারনা চালিয়েছি, নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে মিছিল দেইনি। তাদের গায়ে পড়ে নৌকা মার্কার কিছু সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে।
এ আসন থেকে মূলত ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের লড়াইয়ে সমানতালে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ (নৌকা), আনজুমানে আল-ইসলাহর কেন্দ্রীয় সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (কেটলি), স্বতন্ত্র প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ড. আহমদ আল কবির (ট্রাক)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলের বড় অংশ আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদের পক্ষে মাঠে কাজ করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ড. আহমদ আল কবিরের পক্ষে দলের উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীরা সক্রীয় রয়েছেন। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীনের পক্ষে ছাত্রলীগ সহ আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীকে প্রচারনা করতে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য এবং এ তিন প্রার্থীর অনুসারী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়