Tuesday, October 12

কানাইঘাটে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা!


মাহবুবুর রশিদ ::

তালিবুর রহমান(ছদ্মনাম)। ১২ বছরের কিশোর। গত ৮ অক্টোবর শুক্রবার মোবাইল ফোন দেখতে না দেওয়ায় ভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে সে। এরপরই ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা  করে। 

সে কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব সর্দারমাটি গ্রামের মাসুক আহমদের ছেলে। 


মানসিক অস্থিরতা,অর্থনৈতিক সংকট, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনার চাপসহ নানামুখী কারণে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

সিলেটের কানাইঘাটেও এসব কারণে দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা।

হঠাৎ করে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর এবং চলতি মাসে কানাইঘাটে  ৪ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।  হঠাৎ করে এমন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলছেন সচেতন মহল। 

গত শুক্রবার ওই কিশোরের আত্মহত্যা করার কথা  নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন জানান, পূর্ব সর্দারমাটি গ্রামের মাসুক আহমদের ছেলে ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল দেখা নিয়ে ঝগড়া হয়। এতে অভিমান করে সে বাড়ির সকলের অগোচরে অভিমান করে ঘরের একটি সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। ১২ বছরের কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল।

এর মাত্র একদিন আগে গত ৭ অক্টোবর কানাইঘাট উপজেলার দিঘীরপার পূর্ব ইউনিয়নে শাহীন আহমেদ (২৫) নামে এক যুবক হাওরের মাঝে একটি গাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেন।  এক সন্তানের জনক শাহীন পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। তিনি দিঘীরপার পূর্ব ইউনিয়নের ছত্রনগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে। তবে শাহীন কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা জানা যায়নি।

গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে  অলি উল্লাহ (২৫) নামে এক যুবক বসত ঘরে তীরের সঙ্গে গলায় শাড়ি প্যাঁচিয়ে আত্নহত্যা করেন। তিনি কানাইঘাট পৌরসভার নন্দিরাই গ্রামের আব্দুল লতিফের পুত্র।
নিহতের পিতা আব্দুল লতিফ জানান, রোববার সকালবেলা তিনি তার ছেলে অলি উল্লাহকে বাড়িতে রেখে বাজারে আসেন। দুপুর অনুমান ১২টায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যের অজান্তে অলি উল্লাহ বসত ঘরে গলায় শাড়ি প্যাঁচিয়ে আত্মহননের ঘটনা ঘটান। পরিবারের লোকজন অলি উল্লাহকে উদ্ধার করে দ্রুত কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অলি উল্লাহ  প্রায় দু’বছর থেকে মানসিক রোগে ভুগছিলেন বলে জানা যায়।

গত  ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড় টার দিকে স্বামীর বসত ঘরের একটি কক্ষের তীরের সাথে গলায় রশি পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন ৩ সন্তানের জননী গোলসানারা বেগম (২৮) । গোলসানারা দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর পশ্চিম নালুহারা গ্রামের সুহেল আহমদ এর স্ত্রী । জানা যায়, আত্মহননকারীর স্বামী সুহেল আহমদ এ সময় মসজিদে জুম্মার নামাজে ছিলেন। এই সুযোগে একা বাড়ীতে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে গোলসানারা বেগম।

এ ঘটনায় আত্মহননকারী গোলসানারা বেগম এর পিতা-ফয়জুল হক থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। তবে কি কারনে গোলাসানারা বেগম  আত্মহত্যা করেছেন তার কারণ জানা যায়নি। 

সচেতন মহল মনে করেন আত্মহত্যার এই প্রবণতা রোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন।

শাহবাগ জামেয়া মাদানিয়া ক্বাসিমুল উলূম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুফতী মাওলানা ইবাদুর রহমান বলেন,ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ,এর পরিণতি জাহান্নাম। একজন মানুষ যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তখনই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা রোধে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করে চললে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

কানাইঘাট সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজেশ কান্তি দাস বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘ সময় মানুষ গৃহবন্দী থেকেছে। এ সময় আর্থিক সংকটে চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তায় অনেকে আত্মহত্যা করতে পারে।  আত্মহত্যার এ প্রবণতা রোধে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সভা,সেমিনারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।


উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. মহি উদ্দিন বলেন, একজন মানুষ বিষণ্নতা, হতাশা, নিজের প্রতি বিতৃষ্ণাসহ নানা কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা মহাপাপ ও ঘৃণিত কাজ। আত্মহত্যা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়