Thursday, May 21

শৈশবের স্মৃতিতে রমজান

মাহবুবুর রশিদ::

চলছে পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাসটি আসবে, যাবে; আসবে না কেবল শৈশবের স্মৃতিমাখা রমজান। পবিত্র এই মাস নিয়ে আমাদের অনেকের ছোট বেলার অনেক মধুর স্মৃতি থাকে। আজ তব হাজির হই নিজ শৈশব-কৈশোরের এমনই এক স্মৃতি নিয়ে। বড়ই রোমাঞ্চকর রমজানের সেই স্মৃতি।

আমি তখন ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ি। সম্ভবত চঞ্চলতার পুরো বয়স ছিলো তখন। তা না হলে মসজিদে মুয়াজ্জিন থাকা সত্বেও মাইকে আযান দেওয়ার মতো একটা ইচ্ছে কেন জাগবে? নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়নে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। আযান আমাকে দিতেই হবে যে। একদিন সিদ্ধান্ত   নিলাম, আজ নিজ কন্ঠে মসজিদের মাইকে আযান দেব। বিধিবাম! বাঁধা হয়ে দাড়ালেন মুয়াজ্জিন। বেচারার সাফ কথা, তোমার মতো আরো অনেক বাচ্চা (আমি মনে মনে ভাবলাম আমি আবার বাচ্চা হলাম  কবে) আযান  দেওয়ার  জন্য   প্রতিদিন  বায়না  ধরে, আমি তাদেরকেও নিষেধ করি। আযানের মধ্যে ভুল-ক্রুটি হলে কিংবা মাইকের কোন ক্ষতি  হলে আমি গরীবের চাকরি চলে যাবে, ইত্যাদি বলে মুয়াজ্জিন সাহেব বয়ান শুরু করলেন।

নাছোড়বান্দা আমি। মনে মনে পণ করে বসলাম, মুয়াজ্জিনের চাকরি থাক কিংবা না-ই থাক, সে আমার দেখার বিষয় না। আমাকে একদিন মসজিদের মাইকে আযান দেওয়া লাগবেই লাগবে। সুবর্ণ সুযোগ ছিলো রমজান মাস। হাত ছাড়া করলে চলবে না। নয়তো ইচ্ছা অবাস্তবায়িত রয়েই যাবে। একদিন সেহরি খেয়ে তড়িঘড়ি   করে মসজিদে চলে গেলাম কেবলই ইথারে নিজ কণ্ঠে আযানের ধ্বণি ভাসাতে। ‘মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিবে সমধুর’। বাড়িতে ভাই-বোনদেরও বলে রাখলাম, আমার কন্ঠে আজ মসজিদের মাইকে শুনা যাবে পবিত্র ফজরের আযান; একটু চোখ-কান খোলা রাখা চাই। ও মা, মসজিদে এসে আমার চোখ ছানাবড়া। পাড়ার আরো কয়েকটা ছেলে মাইকের কাছে টিসিবির চাল নেওয়ার লাইনের   মতো দাঁড়িয়ে আছে। কে আগে এসেছে, কে আযান দেবে তা নিয়ে হট্টগোল। এর একটা সমাধানে তাদেরকে যে পৌঁছতে হয়। আমার সদয় উপস্থিতি সেই হট্টগোলের সমাধানের একটা পথ তৈরী করে দিল। তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, সমস্যার সমাধানকল্পে আমাকেই আযান দিতে হবে। মুয়াজ্জিন সাহেবও পাড়ার ছেলেদের অনুরোধে   আমার উপর আযানের ভার ছেড়ে দিলেন। এ যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। 

খুশিতে অট্টখানা এই আমি। খে..কু খে..কু করে গলা খানা পরিষ্কার করলাম। একটু পরেই আসছে সেই মাহেন্দ্রণ। আমার কন্ঠ আজ ধ্বণিত হবে ইথারে, আমিই দিতে যাচ্ছি পবিত্র ফজরের আযান। চলছে ক্্ষণ    গণনা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রণ। মুয়াজ্জিন মাইক্রোফোন রেডি করে আমার হাতে দিলেন। কাঁপছে আমার হাত, পা। যেন মোবাইলের ভাইব্রেশন সক্রিয়। কান দিয়ে বের হচ্ছিল গরম ধোঁয়া। এহেন অবস্থা দেখে পোলাপাইনের দল হাসতে লাগলো। আমি চমৎকার কন্ঠে এক পর্যায়ে আযান দেওয়া শুরু করলাম।

সবকিছুই ঠিকঠাক  ছিলো; ফজরের  আযানে “আসসালাতু   খাইরুম মিনান নাওম” বলতে হয়। আমি তা ভুুলেই গিয়েছিলাম। আযানের   পরপরই পাড়ার মুরব্বিরা আমার উপর েেপ বসলেন। শুনাতে লাগলেন নানা কথা। আযান না জেনে আমি কেন মাইক্রোফোন হাতে নিতে গেলাম। মুয়াজ্জিন সাহেবও আমার উপর বেশ ক্ষেপেছেন । আমার কোন জবাব নেই, নিজেকে তখন রুবট মনে হচ্ছিল। উপায়ান্তর না দেখে অসহায়ের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছি। এমন সময় আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন হুসন স্যার। তাঁর কাছে আমি নিয়মিত প্রাইভেট পড়তাম। স্যার এসেই মুরব্বিদের বললেন, তার আযান ঠিক আছে। “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম”এর অর্থ ঘুম হইতে নামাজ উত্তম। আর সে জানে যে, রমজানে সেহরি খাওয়ার পর সবাই সজাগ থাকবে নামাজের জন্য।  যার   জন্য   সে   মনে   হয়   “আসসালাতু   খাইরুমমিনান নাওম” বলেনি। হুসন স্যারের কথা শুনে সবাই তাজ্জব হয়ে গেলেন, আমি বেঁচে গেলাম। সেই আযানের কথা ভুলিনি, ভুলবো না কোনদিন। হারানো দিন বুঝি আসিবে না ফিরে, মন কাঁদে তাই স্মৃতির তীরে।

লেখক:-সম্পাদক,কানাইঘাট নিউজ ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়