Tuesday, July 16

আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত


ফিরোজ আহমা::
আকিকার  মাধ্যমে নবজাতক শিশুর বাবা-মায়ের দানশীলতা প্রকাশ পায়। গরিব, এতিম ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে গোশত বিলি-বণ্টনের মাধ্যমে আত্মীয়তার হক আদায় হয়। নবজাতক শিশুর জন্য সবাই দোয়া করেন। নতুন একটি প্রাণের আগমনকে কেন্দ্র করে আকিকা দেওয়ার ফলে, আল্লাহতায়ালা নবজাতকের কাছে যত বালা-মুসিবত ছিল, সেগুলো উঠিয়ে নেন
আকিকা করা সুন্নত। আকিকা শিশুর অধিকার। নবজাতক শিশুর জন্য আকিকা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আকিকার বরকতে নবজাতক শিশুর বালা-মুসিবত দূর হয়ে যায়। নবজাতক শিশু সন্তান লাভের শুকরিয়া আদায়ের নিদর্শন হিসেবে বাবা-মাকে সন্তানের জন্য আকিকা করতে হয়। এক্ষেত্রে সন্তান ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন, উভয়ের জন্য আকিকা করতে হবে।
আকিকার সময় : নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। হজরত রাসুল (সা.) নিজে সপ্তম দিনে আকিকা করেছেন। যদি কোনো কারণে সপ্তম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে চতুর্দশতম দিনে আকিকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, একবিংশতম দিনে আকিকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, অন্য যে কোনো দিনে আদায় করে নিতে হবে। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ।’ কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মু-ন করে নাম রাখবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)।
আকিকার পশু ও সংখ্যা : উট, গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হবে। কোরবানির পশুর মতো আকিকার পশু সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হতে হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সি ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন। (তিরমিজি শরিফ, ১ম খ-, পৃ. ১৮৩; আবু দাউদ, ২য় খ-, পৃ. ৪৪)।
হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দ্বারা আকিকা  করবে। (তিরমিজি শরিফ, ১ম খ-, পৃ. ১৮৩; আবু দাউদ, ২য় খ-, পৃ. ৪৪)।
আর যদি গরু, মহিষ বা উট হয় কোরবানির মতো ৭ ভাগে সাতজন বা তার চেয়ে কম নামে আকিকা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের আকিকার অংশ হবে একভাগ। ছাগল বা ভেড়ার মতো দুই ভাগ ও একভাগ করার প্রয়োজন নেই।
আকিকার গোশত বিতরণ : আকিকার গোশত ইচ্ছে হলে রান্না করে আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে খাওয়ানো যাবে। তবে আকিকার পশুর গোশত তিনভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সাদকা করে দিয়ে বাকি এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া সুন্নত। আকিকার গোশত সচ্ছল আত্মীয়স্বজনকেও দেওয়া যায়।
আকিকার গোশত খাওয়া : আকিকার গোশত খেতে কারও কোনো বাধা নেই। আকিকার পশুর গোশত নিজেরা খেতে পারবে। অন্যদেরও খাওয়ানো যাবে।
আকিকার পশুর চামড়া : আকিকার পশুর চামড়া বাজারে বিক্রি করে, বিক্রিয়কৃত টাকা গরিব-মিসকিনের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
আকিকার কল্যাণ : আকিকার  মাধ্যমে নবজাতক শিশুর বাবা-মায়ের দানশীলতা প্রকাশ পায়। গরিব, এতিম ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে গোশত বিলি-বণ্টনের মাধ্যমে আত্মীয়তার হক আদায় হয়। নবজাতক শিশুর জন্য সবাই দোয়া করেন। নতুন একটি প্রাণের আগমনকে কেন্দ্র করে আকিকা দেওয়ার ফলে, আল্লাহতায়ালা নবজাতকের কাছে যত বালা-মুসিবত ছিল, সেগুলো উঠিয়ে নেন।
আকিকার কুসংস্কার : আকিকার পশু নানার বাড়ি থেকে দিতে হয়। আকিকার গোশত বাবা-মা, নানা-নানি ও দাদা-দাদিরা খেতে পারে না। সন্তানের চুল মু-ানোর সময় মাথার তালুর ওপর ক্ষুর ধরে রেখে আকিকার পশু জবাই করতে হয় ইত্যাদি কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে। আকিকা করতে হয় নবজাতকের কল্যাণের উদ্দেশ্যে। তাই আকিকার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশ্লীল নাচ-গান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, আকিকার সঙ্গে শিশুর নাম রাখার সম্পর্ক রয়েছে। আকিকার সঙ্গে শিশুর বালা-মুসিবত দূর হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আকিকার সঙ্গে প্রথম চুল মু-ানোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই সামর্থ্য থাকলে দ্রুত আকিকা সম্পন্ন করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : ইসলামিক চিন্তাবিদ
ও  গবেষক

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়