Wednesday, July 17

মিন্নি এখন মানসিক রোগী: মিন্নির বাবা

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রিফাত শরীফের স্ত্রী এবং এই মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ এপর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বরগুনা পুলিশ লাইন্সে প্রায় ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় মিন্নিকে। কিন্তু মিন্নিকে গ্রেপ্তার ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন তাঁর বাবা।  

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন আজ বুধবার দুপুরে বলেন, মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ষড়যন্ত্র। মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং এই খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আড়াল করার জন্যই এগুলো সাজানো হচ্ছে। তিনি সঠিক তদন্ত করে যারা প্রকৃত দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার মেয়ে ও পরিবার ষড়যন্ত্রের শিকার বলেও দাবি করেন মোজাম্মেল হোসেন।
মিন্নির বাবা বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ এসে আসামি শনাক্ত করার জন্য মিন্নিকে পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায়। আমি সঙ্গে যাই। এরপর আমাকে নাশতা খেতে দিয়ে বাইরে বসিয়ে রেখে মেয়েকে পুলিশ লাইনসের ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। আমি রাত ১০টা পর্যন্ত মেয়ের জন্য বাইরে অপেক্ষা করি। 
এরপর আমাকে জানানো হয় মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কী জন্য আমার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আমার মেয়ে এই মামলার ১ নম্বর সাক্ষী। গত ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল, তখন আমার মেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। 
সে নিজের জীবনের দিকে তাকায়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য। আমরা কিসের বলি হলাম? স্বামীকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে খুন করার পর থেকে আমার মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি জানি না এখন তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, কীভাবে আছে, তাও জানতে পারছি না।
মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেন, মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই খুনের নেপথ্যে যারা আছেন তারা খুবই ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী। তাদের কাছে দুনিয়ার সবই হার মেনে যাবে। আমরা খুবই সাধারণ মানুষ, তাদের কাছে খুবই সামান্য। আমরা তাদের হাতে যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারি। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি, আমাদের এই ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচান।
এর আগে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মিন্নি। তার বক্তব্য রেকর্ড ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইন্সে আনা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে থাকে। মিন্নিকেও নজরদারিতে রাখে পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মিন্নিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তিনি জানান, পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য বর্তমানে মিন্নিকে পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়েছে। রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এর আগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা রিমান্ডে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতে হাজির করে মিন্নির রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ। রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদকের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রোমহর্ষক ওই হত্যাকাণ্ডের প্রথম ভিডিওতে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে তার স্ত্রী মিন্নির প্রাণপণ প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়। দেশজুড়ে ব্যাপক সমবেদনা তৈরি হয় তার জন্য। কিন্তু সেই মিন্নিই এখন মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে হয়ে গেলেন আসামি।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন দুপুরে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকেই। কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে ভিন্ন কিছু।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়