Thursday, May 23

দুঃখ প্রকাশ করলেন হুমায়ূন পুত্র নুহাশ

বিনোদন ডেস্ক:

সম্প্রতি একটি মোবাইলসেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন তৈরি করে সমালোচনার মুখে পড়েন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পুত্র নুহাশ হুমায়ুন। ‘রানিং রাফি’ নামে বিজ্ঞাপনটি অনলাইনে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে তুমূল আলোচনা-সমালোচনা। এবার এই বিজ্ঞাপনটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন নুহাশ। 

পাহাড়ি অঞ্চলের গল্প নিয়ে নির্মিত ৩ মিনিট ৮ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখানো হয়েছে, বান্দরবানের আদিবাসী কিশোর রাফি রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারের সময় স্থানীয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ডেকে দেয়ার জন্য দৌঁড়ে দ্বারে দ্বারে যায়। কারণ চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় মসজিদের সংখ্যা কম হওয়ায় মুসলিমরা আজানের শব্দ শুনতে পান না। ফলে তাদের পক্ষে সঠিক সময়ে সেহরি কিংবা ইফতার করা সম্ভব হয় না।
বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর অনেকেই বিজ্ঞাপনটির ঘটনা প্রবাহ পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্কের বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গল্পে থাকা অসঙ্গতিগুলোর সমালোচনা করেছেন দর্শকরা। তাদের প্রশ্ন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক কিশোরের নাম কীভাবে রাফি হয়? স্থানীয় আদিবাসীদের মতো মুসলিমরাও কেন বাঁশের তৈরি বাড়িতে থাকেন?
শুধু তাই নয়, এমন বিজ্ঞাপন নির্মাণ করায় সারাদেশে কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা। তবে এই ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন এটির নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন।
এবার সমালোচনা নিয়ে মুখ খুলেছেন নুহাশ। তিনি বিজ্ঞাপনের ওই গল্পকে বন্ধনের গল্প হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুক হ্যান্ডেলে বলেন, আমার নির্মিত নতুন একটা বিজ্ঞাপন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আমি এরসঙ্গে কিছু যোগ করতে চাই। এই বিজ্ঞাপনটি আমি নির্মাণ করেছি কিন্তু এটার মূল ভাবনা আমার ছিল না। থার্ড পার্টি যখন কনসেপ্টটা দেয়, আমার কাছে ভাল লাগে। কনসেপ্টটা হলো পরিবার নিয়ে। একটা প্রত্যন্ত গ্রাম। যেখানে মুসলিমরা হলো সংখ্যালঘু। এটা রমজান মাসের উপর ফোকাস করা একটা বিজ্ঞাপন। 
কিন্তু এর মূল ভাবনা শুধু রমজানের রোজা রাখায় সীমাবদ্ধ না। এটা একাত্মতা আর বন্ধনেরও গল্প। আমার কাজটি যেন বাস্তবসম্মত হয়, তাই আমি আমার টিমে এথনিক কমিয়্যুনিটি থেকে প্রতিনিধি রেখেছিলাম।
দুঃখ প্রকাশ করে নুহাশ বলেন, যেহেতু বিজ্ঞাপনের প্রথমে লেখা দেখায়-‘A Nuhash Humayun Film’, তাই পরিচালক হিসাবে এর সব দায়িত্ব আমারই। এই বিজ্ঞাপনটা আমিই নির্মাণ করেছি, গল্পটাও আমার পছন্দ হয়েছে, এর স্ক্রিপ্ট আমি পরিমার্জন করেছি, যেই সোর্স থেকে তথ্য পেয়েছি– তাও বিশ্বাস করেই ব্যবহার করেছি। এই বিজ্ঞাপনের সব দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়েই, আমি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে, যারা বিজ্ঞাপনটি দেখে কোনোভাবে কষ্ট পেয়েছেন অথবা যাদের কাছে মনে হয়েছে আমি চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছি। আমি বিনীত ভাবে জানাতে চাই, কাউকে কষ্ট দেয়া বা আঘাত করা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।
সমালোচনা ভবিষ্যতে দায়িত্ববান ও যত্নশীল করে তুলবে এমন বিশ্বাস নিয়ে নুহাশ বলেন, তাকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সমস্যা মিডিয়াতে তেমনভাবে সামনে আসে না। আমরা সেইসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনটা নির্মাণ করেছি খুব সরলীকরণ করে, দেখে ভাল লাগবে এমন একটা গল্প নিয়ে। যেখানে অবশ্যই আগে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসা প্রয়োজন ছিল। অনেক মানুষ আমাকে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। কিছু ভাল, কিছু খারাপ আর কিছু বেশ কঠিন। অবশ্যই এইসব মতামত আমাকে নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো অনেক দায়িত্ববান ও যত্নশীল করে তুলবে।
সমালোচনায় পরিবারকেও টেনে আনা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এটাও দেখলাম অনেকেই এখানে টেনে আনছেন আমার পরিবারকে, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন আমাকে, যেই ছেলেটি বিজ্ঞাপনের প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন-তাকেও নোংরাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এইসব ঘৃণা প্রকাশ মূল বিষয়ের সঙ্গে সংগতিহীন। এই বিজ্ঞাপনের গল্পটি আমার ভাল লেগেছিল, কারণ এটার মূল ভাবনা ছিল একাত্মতা প্রকাশ। আমার ভাবতে খুব খারাপ লাগছে, এই বিজ্ঞাপনটা কোনো ভাবে বিভেদ তৈরি করছে! কোনভাবেই সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। যারা এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে লিখছেন, কথা বলছেন, আর ভাল মন্দ যাই ভাবছেন-আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি আপনাদের কথা শুনছি, শিখছি আর আর পরিণত হচ্ছি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়