Tuesday, April 9

গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য কানাইঘাটের বাখাইরপাড় গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ঢাকনাইল দক্ষিণ ১১ মৌজার এজমালী জলমহালের টাকার হিসাব নিকাশ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট ঘটনায় একজনের মৃত্যু সহ পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের ঘটনা নিয়ে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে বাখাইরপাড় গ্রাম।

গ্রেফতার আতঙ্ক ও হামলার ভয়ে বাখাইরপাড় গ্রামের আব্দুল জলিল পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আতঙ্কে বসবাস করছেন তাদের পরিবারের শিশু সহ নারীরা এমন অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ঢাকনাইল দক্ষিণ ১১ মৌজার এজমালী জলমহালের মাছ বিক্রির টাকার হিসাব নিকাশ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকনাইল ফখরচটি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ও গোয়ালজুর গ্রামের আব্দুল লতিফ পক্ষের লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল।

থানায় ও আদালতে এনিয়ে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি কয়েকটি মামলা দায়ের করেন। এর জের ধরে গত ১৩ মার্চ বাখাইরপাড় গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আব্দুল লতিফ পক্ষের লোক বাখাইরপাড় গ্রামের পঞ্চাশ উর্ধ্ব আমির উদ্দিন মারা যান।

আব্দুল জলিল গংদের হামলায় আমির উদ্দিন নিহত হয়েছেন বলে আব্দুল লতিফ পক্ষের লোকজন অভিযোগ করেন।

অপর দিকে জলিল মেম্বারের লোকজন জানিয়েছেন, হামলায় নয় হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমির উদ্দিন মারা গেছেন।

আমির উদ্দিন মারা যাওয়ায় কানাইঘাট থানায় আব্দুল জলিল পক্ষের ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত নামা ২০/২৫ কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অধিকাংশ আসামী বাখাইরপাড় গ্রামের আব্দুল জলিল পক্ষের এক গোষ্ঠীর লোক হওয়ায় তারা গ্রেফতার ও হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বর্তমানে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। 

যারা মামলার আসামীও নয় তারাও গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ায় পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে বাখাইরপাড় গ্রামের অধিকাংশ পরিবার।

বাড়িতে তাদের শিশু সন্তান ও নারীরা হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন তারা। 

জানা গেছে আমির উদ্দিন নিহতের পর বাদী পক্ষের লোকজন দ্বারা আসামী পক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা ও নারী ও শিশুদের ভয়ভীতি প্রদান ও একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টার ঘটনায় কানাইঘাট থানায় পৃথক ২টি ও সিলেট আদালতে আরো একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেছেন আমির হত্যা মামলার আসামী পক্ষের লোকজন।

এ ৩ টি অভিযোগের বাদী হচ্ছেন মহিলারা। 

অপর দিকে আমির উদ্দিন নিহতের পর হত্যা মামলা সহ আরো একটি মামলা করেছেন বাদী পক্ষের লোকজন। এনিয়ে বাখাইরপাড় গ্রামে একদিকে বাদী পক্ষের লোকজন অপর দিকে বিবাদী পক্ষের মধ্যে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ গত সোমবার দিবাগত রাতে আমির উদ্দিন হত্যা মামলার আসামী পক্ষের আত্মীয় বাখাইরপাড় গ্রামের অন্ধ বাহার উদ্দিনের বসত ঘরে অগ্নি সংযোগের অভিযোগ এনে তার স্ত্রী মিনারা বেগম হত্যা মামলার বাদী পক্ষের ৬ জন আসামী করে গত সোমবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর থানা পুলিশের এসআই লিটন মিয়া ঐ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

অভিযোগের আসামীরা বলছেন, তারা বাহার উদ্দিনের বসত ঘরে আগুন দেননি। হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ঘর পুড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে বসত বাড়ির মালিক অন্ধ বাহার উদ্দিন ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম এবং আশপাশ বাড়ির নারী ও শিশুরা বলছেন তাদের বাড়ির পুরুষরা প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলার ভয়ে বাড়ি ছাড়া হওয়ায় এই সুযোগে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমির উদ্দিনের পক্ষের গোয়ালজুর গ্রামের কামাল উদ্দিন, বাখাইরপাড় গ্রামের রহমত উল্লাহ, হারুন রশিদ, ইসলাম, ইমরান, সুলতান গংরা বসত ঘরে গভীর রাতে আগুন লাগানোর ঘটনা তারা দেখেছেন।

এলাকায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের ঘটনা নিয়ে গত সোমবার সরেজমিন বাখাইরপাড় গ্রামে গেলে বাহার উদ্দিনের বসত ঘরে অগ্নি সংযোগের চেষ্টার ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী খবর পাওয়া গেলেও আমির উদ্দিন হত্যা মামলার বাদী পক্ষের কিছু লোকজন কর্তৃক আসামী পক্ষের লোকজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। 

এলাকার সচেতন মহল ঢাকনাইল ১১ মৌজার এজমালী জলমহালের সম্পত্তি ও মাছ বিক্রির টাকার হিসাব নিকাশ নিয়ে গ্রামগুলোর মানুষ দু’টি পক্ষে অবস্থান নিয়ে মারামারি, হানাহানি, মামলা মোকদ্দমা, পাল্টাপাল্টি হামলা, হুমকি প্রদান সহ নানা ঘটনায় লিপ্ত হওয়ায় যে কোন সময় আবারো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন।

উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে তারা সিলেটের উর্ধ্বতন প্রশাসন ও কানাইঘাটের রাজনৈতিক মহল ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

এব্যাপারে কানাইঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, ঢাকনাইল দক্ষিণ ১১ মৌজার বিলের টাকার হিসাব নিকাশ নিয়ে যে সব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে তা পুলিশের নজরে রয়েছে। এলাকার আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এনিয়ে কোন পক্ষ কাহারো প্রতি কোন ধরনের অন্যায় কর্মকান্ড করলে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/০৯ এপ্রিল ২০১৯ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়