Tuesday, October 30

ভালো নেই কানাইঘাটের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অলিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধের বহু স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম কাড়াবাল্লা। এই গ্রামের মৃত মুবাশ্বীর আলীর পুত্র অলিউর রহমান (৬৬)। একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের রক্তঝরা দিনগুলোতে  ১৮ বছরের একজন টগবগে তরুণ ছিলেন। যুদ্ধের শুরুতেই দেশমাতৃকার টানে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। জীবন বাঁজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকহানাদার বাহিনীর মর্টার-শেলের আঘাতে আহত হলেও পিছপা হননি, সরে দাড়াননি যুদ্ধের ময়দান থেকে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু অলিউর রহমান নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি। ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে গিয়ে আজ নানা কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। মুক্তিযুদ্ধার যে ভাতা পান, তা দিয়ে সংসারে দু’মুঠো ভাত জুটলেও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হয় ।
আবেগপ্রবণ কণ্ঠে যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা অলিউর রহমান কানাইঘাট নিউজকে জানান, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হলেও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারিনি। কারও দয়া বা অনুদান চাই না, সরকারের সহযোগিতায় সুদমুক্ত বা কম সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাংক ঋণ চাই। বসত-ভিটা নদীর ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। নতুন ঘর-বাড়ি নির্মাণ,ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধচলাকালীন সময়ে ৪নং সেক্টরের অধীনে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। ৪নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব:) সি.আর দত্ত ও সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদি’র রণকৌশল নিয়ে কানাইঘাট সদর, চতুল বাজার, জকিগঞ্জ সদর, আটগ্রাম, জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের শেষ সময়ে ১লা আগষ্ট  দরবস্ত এলাকায় সমরযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর মর্টার-শেলের আঘাত তাঁর ডান পা ও হাতে লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে ভারতের শিলচরের মাছিমপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ডা. জয়ন্ত দত্তের অধীনে ২রা আগষ্ট থেকে ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে পুণরায় যুদ্ধে অংশ নেন। ৭১’র ১৬ই ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে লাল-সবুজের পতাকা বুকে জড়িয়ে বিজয় মিছিল করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৮ ডিসেম্বর সিলেট সদর হাসপাতাল (তৎকালীন সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)-এ ভর্তি হন। অধ্যাপক কবির উদ্দিন আহমদের অধীনে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়ী কানাইঘাট গ্রামে ফিরেন যান। তাঁর যুদ্ধাহত কার্ড নং- ১৭৮৫, রেজি. নং-১৮১৩, লাল মুক্তিবার্তা নং-৫০১০৬০১৪৭, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধা যুদ্ধাহত গেজেট নং-২১৪৩, ভারতীয় তালিকা-২৩৭৫৮, বেসামরিক গেজেট- ৪১৬১। 

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/৩০ অক্টোবর ২০১৮

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়