Saturday, February 24

কানাইঘাট পাথর কোয়ারিতে লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারির গভীর গর্ত থেকে পাথর উত্তোলনের সময় পাথরের চাকা ধসে পড়ে এক পাথর শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল অনুমান ৭টার দিকে লোভাছড়া পাথর কোয়ারির সাউদগ্রামে। নিহত পাথর শ্রমিক ফরহান উল্লাহ (৫০)। সে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কাইলা গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর পুত্র। পাথরের চাকা ধ্বসে পড়ে ফরহান উল্লাহর ঘটনাস্থলে মৃত্যু হলে তার লাশ পাথরের গর্তের মালিক স্থানীয় সাউদগ্রামের আনোয়ার হোসেন আনই ও তার স্বজনরা এবং প্রভাবশালী পাথর খেকো চক্র গুম করার চেষ্টা করে। জানা গেছে, নিহত এ শ্রমিকের লাশ সিওমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মামলা না করে নিহতের পরিবারকে কিছু আর্থিক অনুদান দিয়ে রফাদফার চেষ্টা করছে লোভাছড়া পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রনকারী পাথর খেকো চক্র ও ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। পাথর কোয়ারিতে এক শ্রমিকের প্রাণ হানির সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি লুসিকান্ত হাজং দুপুর ১টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩টি সেইভ মেশিন, প্রায় ৩’শ ফুট পাইপ পুড়িয়ে ধ্বংস করেন লুসিকান্ত হাজং এবং শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় সাউদগ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র রেজা আহমদ (২৫) কে আটক করেন। পরে তাকে শনিবার রাতে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৭টার দিকে পাথর কোয়ারির সাউদগ্রাম মৌজার পাথর ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আনইর ঝুকির্পূণ গভীর গর্ত থেকে পাথর শ্রমিক ফরহান উল্লাহ সহ আরো কয়েকজন শ্রমিক পাথর উত্তোলন করার সময় পাথরের বড় একটি চাকা গর্তের মধ্যে ধ্বসে পড়লে ফরহান উল্লাহর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ সময় তার সাথে থাকা আরো কয়েকজন শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাথর শ্রমিক ফরহান উল্লার মৃত্যুর খবরটি ধামাচাপা দিতে তার লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না এনে দ্রুত সিওমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত শ্রমিক ফরহান উল্লাহ’র পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, অভাবের তাড়নায় দু-মুঠো ভাত জোগাড় করতে এলাকার বেশ কিছু শ্রমিকের সাথে ফরহান উল্লাহ লোভাছড়ায় আনোয়ার হোসেন আনই এর গর্তে কাজ করতে আসেন। কিন্তু পাথর খোকেদের হিংস্র থাবায় তার কপালে সে সুযোগ ঘটেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোয়ারীতে গর্তের মাটি চাপা পড়ে পাথর শ্রমিক ফরহান উল্লাহর মৃত্যু হয়েছে, তার লাশ সিওমেক হাসপাতালে রয়েছে। তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি লুসিকান্ত হাজং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাউদগ্রামের আনোয়ার হোসেন আনইর গর্তে এ প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। এব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হবে। সাউদগ্রাম এলাকায় লীজ বর্হিভূত পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গর্তের মালিক আনোয়ার হোসেন আনই’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রসজ্ঞত যে, প্রতিবছর লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে গর্ত তৈরি করে পাথর উত্তোলনে শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অনেক শ্রমিকের লাশ কোয়ারির নিয়ন্ত্রনকারী ইজারাদার ও পাথর খেকো চক্র গুম করে ধামাচাপা দিয়ে থাকেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় পাথর শ্রমিক ফরহান উল্লাহ নিহতের ঘটনায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ দেয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়