মিছবা উল হক চৌধুরী:
সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলার নাম হচ্ছে কানাইঘাট। আর এই উপজেলার একমাত্র শতবর্ষী এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯০৫ সনে এম.ই. স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রাচীন বিদ্যাপীঠটিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ৬৫০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ২৭টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১০ জন। শিক্ষকের এই অপ্রতুল সংখ্যার জন্য বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান।
অফিসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেই কোন কেরাণী। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে চার জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে একজন চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মইনুল হক কানাইঘাট নিউজকে জানান,শীঘ্রই অস্থায়ীভাবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পাওয়া আরেকজন শিক্ষকও তারা হারাতে চলছেন। অন্যদিকে কোন অফিস সহকারী(কেরানী) না থাকায় শিক্ষকদেরকে অফিস সহকারীর কাজগুলো করতে হচ্ছে। সমস্যার শেষ এখানেই নয়! বিদ্যালয়টিতে মাত্র একজন পিয়ন আছেন।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মইনুল হক বলেন,মাঝেমধ্যে আমাকেও বেল বাজাতে হয়। বিদ্যালয়ে কোন অফিস সহকারী আছে কি না কিংবা পিয়ন কতজন কর্মরত আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হতাশা জড়িত কন্ঠে বলেন, আমিই প্রধান শিক্ষক,আমিই অফিস সহকারী।
উপজেলার অন্যতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এহেন পরিস্থিতিতে অভিভাবক মহলে হতাশা দেখা দিয়েছে।নিজেদের সন্তানেরা ভালো মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমন দাবিও কারো কারো। ছোট্ট ক্লাস রুমে গাদাগাদি করে চলছে পাঠদান। প্রতিটি শ্রেণিতে দু’টি করে শাখা থাকলেও শিক্ষক সংকটের কারণে পৃথক পৃথক রুমে ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
এই স্কুলের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরা। এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্তমানে সিকৃবিতে অধ্যয়নরত জাহাঙ্গীর আলম বলেন,প্রাণপিয় বিদ্যাপীঠ এর এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আমি হতবাক।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,ঘন ঘন বদলিজনিত কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট এবং এমন দৈন্যদশা!
সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বলেন,এখানে নতুন কোন শিক্ষক যোগদানের পরপরই বদলি হওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিক্ষকদের সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও অভিভাবক মহলকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এই স্কুলেরই প্রাক্ত শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যেও স্কুলটি নিয়ে নেই কোন উচ্চাকাঙ্খা,নেই কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ।
সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র তানভীর পারভেজ বলেন,প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১০ সাল থেকেই শিক্ষকদের বদলি হওয়ার মিছিল শুরু হয় এবং অধ্যবদি চলছে।
স্কুলটির সাফল্য ও সম্ভাবনা ঠিকে থাকবে কি না এমন প্রশ্ন কানাইঘাটের সচেতন অভিভাবক মহলের। তারা মনে করেন শীঘ্রই নতুন শিক্ষক পেলে স্কুলের ব্যাপারে তাদের যাবতীয় সংশয় কেটে যাবে। শিক্ষক সংকট নিরসনের ব্যাপারে তারা শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
শিক্ষাঙ্গন
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়