Saturday, April 2

বিলুপ্তির পথে 'চশমা পরা হনুমান'

বিলুপ্তির পথে 'চশমা পরা হনুমান'

পাঠক কলাম: হঠাৎ করে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন চশমা পড়ে আছে। আর ড্যাবড্যাব করে আপনার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চশমা পড়া হনুমানের কথা বলছি। এজন্যই এদের নাম চশমা পড়া হনুমান। শরীর কালচে বাদামি, বুকের দিকটা সাদাটে। লেজ লম্বা। শরীরের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫৫ থেকে ৬৫ সেমি., লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫ থেকে ৮০ সেমি.।

বাংলাদেশে তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে চশমা পড়া হনুমান দুর্লভ প্রজাতির। এদের আবাসস্থল এদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি বনগুলোতে এদের বাস। তবে এরা বাঁশবন বেশি পছন্দ করে। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনগুলোতে কিছু চশমা পড়া হনুমান এখনও টিকে আছে।

চশমা পড়া হনুমান দলে বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। একসঙ্গে ১৯টি পর্যন্ত দলে থাকে এবং একাধিক স্ত্রী বা পুরুষ থাকে। একটা পুরুষ হনুমান দলটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিটি দলে ৩ থেকে ৬টি স্ত্রী হনুমান এবং সঙ্গে বাচ্চা ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হনুমানও থাকে। স্ত্রী হনুমান দল ছেড়ে কখনও যায় না। প্রাপ্তবয়স্ক হলে পুরুষটি দল ছেড়ে গিয়ে নতুন দল তৈরি করে। এভাবে এরা নিজেদের মধ্যে জিনগত বৈশিষ্ট ধরে রাখে।

এরা উদ্ভিদভোজী। কচি লতাপাতা, ফুলফল খায়। দিনের বেশিরভাগ সময় এরা গাছের মগডালে খাবারের আশায় ঘুরে বেড়ায় এবং সেখানেই খাবার খায়। চশমা পড়া হনুমান গাছেই থাকতে পছন্দ করে। সহজে মাটিতে নামতে চায় না। বিপদের আশঙ্কা দেখলে চিৎকার করে দলের অন্যদের সাবধান করে দেয়।

বনে গাছের বীজের বিস্তারে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চশমা পড়া হনুমানের প্রধান শত্রু মানুষ। মাংসের জন্য চোরা শিকারিরা ফাঁদ পেতে এদের ধরে। এদের পিত্ত ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। বনের পরিবেশে চশমা পড়া হনুমানের টিকে থাকার পথে বাধা হচ্ছে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল ধ্বংস। এদের টিকিয়ে রাখতে বনজ সম্পদের আহরণ, নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস রোধ করা এখন শুধু সময়ের দাবি।

লেখক : কেয়া আনজুম
সাংবাদিক, ঢাকা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়