Saturday, August 8

প্রধানমন্ত্রীর জন্য এক কাঠমিস্ত্রির ভালোবাসার নিদর্শন


চয়ন জামান, কুলাউড়া :: স্বপ্ন আর প্রত্যাশার পেছনে ছুটে চলা। একটি চেয়ার তৈরীতে চলে গেল ৫ বছর। চেয়ারটির নকশা, ওজন আর কাঠ ব্যাবহারে আনা হয়েছে বৈচিত্র। ৭ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য আর ৩ ফুট ১ ইঞ্চি প্রস্থ। ওজন ১০ মন ১০ কেজি। প্রায় ২০ ফুট সেগুন, মেহগনী আর আকাশী কাঠ দিয়ে তৈরী হয়েছে এই আর্কষণীয় চেয়ার। চেয়ারটি নাড়া চাড়া করতে প্রয়োজন পড়ে ৮ জন মানুষের। প্রতিদিন ২-৩জন শ্রমিক ২-৩ ঘন্টা করে কাজ করার পরও লাগল এসময়। জাতীয় পতাকা, নৌকা, জাতীয় ফুল, হাতির শুড় আর নানা জাতের ফুল ঠাঁই পেয়েছে রাজকীয় এই চেয়ারটির কারুকাজে। এখন চলছে চূড়ান্ত ঘষামাজা আর রং লেপনের কাজ। আর ১-২ দিন গেলেই চেয়ারটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এত সময় ক্ষেপনের রহস্য কিন্তু একটিই। চেয়ারটি যে প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। চেয়ারটির মিস্ত্রি আতিক হাসান(২৮) নামের টগবগে এক যুবক। দেশের প্রত্যন্ত পল্লীর এই যুবক বুক ভরা স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে চোখ ধাঁধঁনো এই চেয়ার প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিবেন বলে তার দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু কিভাবে তার এই উপহারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবেন তা জানানেই তার। কিন্তু চেয়ারটি মিস্ত্রি যে আহ্লাদে মনের মাধুরী আর আনন্দ আবেগে তৈরী করেছেন তা জানার কথা নয় প্রধানমন্ত্রীর। তাই যদি তার এই চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ না করেন তা হলে তার দীর্ঘ স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর শ্রম পণ্ড শ্রমে পরিণত হবে এমন দুশ্চিন্তাও আছে তার। এদিকে, চেয়ারটির কারুকাজে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই দাম হাকছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২লক্ষ টাকা দাম উঠেছে। অনেকেই নানা প্রলোভনে ফেলে চেয়ারটি কিনতে চাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই তাকে নড়াতে পারছেন না তার সিদ্ধান্ত থেকে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে পরিচিত বা আপনজন কাউকেই বসতে দিচ্ছেন না চেয়ারটিতে। আগে একটি বদ্ধ ঘরে চেয়ারটির কাজ করলেও এখন শেষ পর্যায়ে হওয়ায় কিছুটা উম্মুক্ত। লোকজন এই আর্কষণীয় কারুকার্যময় চেয়ারটি দেখার জন্য ভিড় করলে তা দেখার সুযোগ দিলেও ছবি তুলতে দিচ্ছেন না তিনি। তবে সাংবাদিকদের ছবি তোলার অনুমতি দিলে প্রধানমন্ত্রী তার এই চেয়ার দেখতে পারেন এমন আশ্বাসে বরফ গললো, মিললো অনুমতিও। গতকাল সরজমিনে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিংগাজিয়া বাজারে গেলে তালা বদ্ধ একটি ঘরে যত্ন করে রাখা চেয়ারটির পাশে দাঁড়িয়েই কথা হয় চেয়ার মিস্ত্রি মোঃ আতিক হাসান হৃদয়ের সাথে। এসময় চেয়ারটি দেখতে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার ভীড় লক্ষ্য করা যায়। কুলাউার দক্ষিণ হিংগাজিয়া গ্রামের মৃত মোঃ রেনু মিয়ার ও মোছাম্মৎ আঙ্গুর বেগমের পুত্র তিনি। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। যুগভেরীকে আতিক জানান প্রায় ১৮ বছর থেকে এ পেশার (কাঠ মিস্ত্রি) সাথে জড়িত। তিনি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধুকে জীবিত না দেখলেও তাঁর বীরত্ব আর নেতৃত্বের গল্প শোনে তিনি মুগ্ধ হয়ে তাঁর ভক্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলেও তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশ চালাচ্ছেন। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমার প্রিয় নেতার কন্যাকে আমার পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন উপহার আমার নিজ হাতে তৈরী করে তাঁকে দিব। আর এই ভাবনা থেকেই তৈরী করি এ চেয়ার। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ ইচ্ছা থাকলেও এছাড়া আর অন্য কিছু কি দেওয়ার সাধ্য আছে আমার। তিনি বলেন, চেয়ারটি তৈরীর প্রথম দিকে চিন্তা ছিল কি ভাবে তা নিখুঁত আর আকর্ষণীয় করা যায়। আর এখন কাজের শেষে চিন্তা হল কিভাবে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবো। তিনি কি আমার মত দরিদ্র একজন মানুষের ছোট্ট এই উপহারটি গ্রহণ করবেন। তিনি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, ভাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই উপহারটি তৈরী করেছি। আমি উপহারটি আমার প্রিয় নেতার পরিবারকে দিতে চাই এই বিষয়টি আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবরটা পৌঁছান। আতিক জানান এর আগে তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে একটি চেয়ার তৈরী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য কিন্তুু সেটি তার মনের মত না হওয়ায় বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১ লক্ষ টাকা দিয়ে তা কিনে নেন সিলেটর ধণাঢ্য ব্যাক্তি বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব রাগীব আলী। এরপর হৃদয় টুঙ্গিপাড়া, জাতীয় জাদুঘরসহ নানা স্থানে ঘুরেছেন নতুন করে তৈরীকৃত চেয়ারটির নকশার ধারনা নিতে। পেয়েও যান নকশার ধারনা। এরপর বাড়িতে ফিরে কারিতাস থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। কাজটি শেষ করার আগ পর্যন্ত রাত জেগে তাকে কাজ করতে হয়েছে। কারণ দিনের বেলা তাকে কারখানার মালিকের কাজ করতে হয়। সেখান থেকে যে পারিশ্রমিক তিনি পান তা দিয়েই চলে তার অভাবের টানপোড়নের সংসার। তাই বেশীরভাগ কাজ তিনি রাত জেগেই সেরেছেন। তিনি জানান চেয়ারের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে গিয়ে দৈনিক মজুরীর প্রাপ্য টাকা শেষ হয়ে গেলে অনেকদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ঈদের সময় নতুন জামা কাপড় না কিনে তা বাঁচিয়ে এই টাকা দিয়েই চেয়ারটির নকশার কাজ করেছেন। তারপরও তিনি মহাখুশি তার স্বপ্ন আর প্রত্যাশার সেই চেয়ারটি যে এখন প্রস্তুত করতে পেরেছেন। এখন যদি তৈরীকৃত চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারেন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তার উপহারটি গ্রহণ করে চেয়ারটিতে বসেন তবেই তার দীর্ঘ এ কষ্টের সফলতা আসবে। আতিক জানান, শোকের মাস আগস্টেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তার তৈরী করা চেয়ারটি তার হাতে তুলে দিতে চান। এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আ. স. ম কামরুল ইসলাম, আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক, কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ একেএম শফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম শাজালাল, মৌলভীবাজার জেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাপ্তাহিক কুলাউড়ার সংলাপের প্রকাশক ও সম্পাদক প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা মুহিবুর রহমান, যুবলীগ নেতা আব্দুল হাই শামীম, ব্রাহ্মণবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাছুম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক তরুণ ক্রীড়া সংগঠক মিনহাজ উদ্দিন আহমদ কমরু, কুলাউড়া উপজেলা নবীণ লীগের সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, বঙ্গবন্ধু অন্তঃপ্রাণ এ ছেলেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার জন্য দীর্ঘ ৫ বছর থেকে নানা অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও চেয়ারটি বানিয়ে যে ভালোবাসার নজির দেখিয়েছে তা সত্যিই অভাবনীয় ও প্রশংসার দাবীদার। তার এমন শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসার জন্য আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিনিত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার তৈরীকৃত চেয়ারটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আকুল আবেদন জানাই। যুগভেরী

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়