Monday, August 3

মানবতা ও মনুষ্যত্বের অবক্ষয়


মিলন কান্তি দাস: আমরা জানি “ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব”। আর এই কথাটি কোনভাবেই আমাদের মুখের কথা নয়। কথাটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও লিপিবদ্ধ করা আছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার স্বীয় মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সুদুর প্রসারী চিন্তাধারা এবং ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ের মাধ্যমেই সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে নিজেদের স্থানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মানুষ তার আপন পৃথিবীকে আরো সুন্দরভাবে বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ অদম্য জয়ের নেশায় মানুষের সফলতার সংখ্যাটাই বেশী। ব্যার্থতার সংখ্যা কম। আজ আমরা যেদিকে তাকাই, সেদিকে দেখি শুধু মানুষের জয়যাত্রা, মানুষের জয়গাণ। আজ কোথায় নেই মানুষ? মানুষ বিশ্বজগতের সর্বত্র বিরাজিত। তাই অভিনন্দন হে মানবজাতি। মানুষের যে গুণাবলীর জন্য একজন মানুষ মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে সমাদৃত, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তার মনুষ্যত্ববোধ ও মানবতাবোধ। মনুষ্যত্ববোধ এবং মানবতাবোধ আছে বলেই কিন্তু মানুষকে মানুষ বলা হয়। নতুবা মানুষ পশুর স্বীকৃতি পেত। আর পশু মানুষের স্বীকৃতি পেত। প্রতিটি মানুষেরই তার ব্যাক্তিক আচরণের মধ্যে কিছুটা পশুত্ব উপলব্ধি করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ তার মনুষ্যত্ববোধ, মানবতাবোধ তথা সর্বপরি বিবেকবোধ সাথে সাথে জাগ্রত করেই তার পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। বেশির ভাগ মানুষই তার বিবেকবোধকে কাজে লাগিয়ে পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন রাখতে সমর্থ হয়। এভাবেই পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করেই চলে একজন মানুষের দৈনন্দিন পথ চলা। পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করেই মানুষ কল্যানকামী একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তার কর্মসাধনা চালিয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষ যে মানুষ ছিল তা অন্ততপক্ষে এই পৃথিবীতে একবারের জন্য হলেও কেউ বলে। যেমন: প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর পর আমরা কেউ না কাউকে বলতে শুনি যে, “লোকটি ভালো মানুষ ছিল"। সুতরাং এটা ধরে নেওয়া যায় যে, ঐমানুষটি যতই খারাপ হোক না কেন, তার একটা না একটা ভালোগুণ ছিল। যে গুণটির কারনে আজ তার মৃত্যুর পরেও কোন না কোনজন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে। সুতরাং বলা যায়, মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব তা প্রমাণিত সত্য। তবে মাঝে মাঝে মানুষের মধ্যে পশুত্বের মাত্রা এতোটাই তীব্রতা ধারন করে যা হয়তো পশুর পশুত্বকেও হার মানায়। মানুষের এই হিংস্র আচরণ আমাদেরকে আবার নতুন করে ভাবায় আসলেই কি আমরা মানুষ!!! যদি মানুষ হিসাবে আমরা আমাদেরকে দাবী করে থাকি, তাহলে আমাদের এমন আচরণ থাকবে কেন! এরকম অসংখ্য প্রশ্ন মনের জানালায় এসে উকি দেয়, বিবেকের কাঠগড়ায় এসে দাড়ায়। এসব সীমাহীন প্রশ্নের মাধ্যমে হিংস্রতার, অমানবিকতার, পশুত্বের কারন খুজি, খুজে ফিরি তার অর্থ। হয়তো তাতে মিলে এই হিংস্রতার, পাশবিকতা, পাষন্ডতা থেকে দায়মুক্তির একটু হলেও স্বান্তনা। তাই হয়তো অবিরাম, অবিশ্রাম আমার এই খুজে ফেরা। বিষয়টা আবার নতুন করে আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে সাম্প্রতিক সময়ে একটি শিশুকে সম্পূর্ণ অমানবিক ও মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যাকান্ডের কারনে। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট মহানগরের নিকটবর্তী কুমারগাও নামক স্থানে।
ঘটনার এবং নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শিশু সামিউল আলম রাজন ও পাষন্ড খুনীদের আজ আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। হিংস্র পাষন্ডরা যেভাবে ঐ শিশু বাচ্ছাটিকে নির্মমভাবে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে তা লিখতে গেলে কলমের কালিও স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেক লিখা আছে যেগুলো লিখতে গেলে কলমের কালি লিখার কোন ভাষা খুজে পায়না, সামিউল হত্যাকান্ড তাদের একটি। আমি বারবার এই হত্যাকান্ড নিয়ে লিখতে গিয়ে ভাষা জ্ঞানহীন হয়েছি। কলমের কালির নিক্ষেপিত হওয়ার সাথে সাথে বারবার অশ্রুসিক্তও হয়েছি। ইতিহাসের পাতায় দেখেছি আর পত্রিকার পাতায় পড়েছি মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের কথা। আর সাম্প্রতিক সময়ে অনেকবার পড়েছি এবং দেখেছি এবং দেছে যাচ্ছি আইএস, তালেবান জঙ্গিদের নৃশংস হত্যাকান্ড, দেখে যাচ্ছি, ফিলিস্থিনের মাটিতে বোমা নিক্ষেপ করে হায়না ইসরাইলী শাসকচক্রের শিশু হত্যাকান্ডের দৃশ্য। এগুলো দেখেছি এবং নিজ অবস্থান থেকে বিশ্ববাসীর সাথে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আজ যখন নিজ বাড়ীর আঙ্গীনার প্রায় পাশেই ঘটে গেল শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকান্ড, তখন প্রতিবাদের ভাষাটাও যেমন কেমন হয়ে যায়। তবে মনের ভিতর এই শান্তনা খুজে ফিরি যখন দেখি যারা বাংলাদেশের মানুষ সামিউল হত্যাকারী ঘাতক পশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে রাজপথে নেমে এসেেেছ। অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে এরকম ও বলেছে যে, সামিউল আলম রাজন হত্যকারী ঘাতকদের জনতার হাতে তুলে দেওয়া হোক। জনতাই এর প্রকৃত বিচার করবে। মানুষের এই প্রতিবাদী ভাষা আবারো প্রমাণ করলো, মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের এই প্রতিবাদী আচরণ আরো প্রমাণ করে, পৃথিবীতে এখনো মানুষের সংখ্যা বেশী। মানুষরূপী পশু জারজদের সংখ্যা এখনো পৃথিবীতে সীমিত। যখনই এ পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছে, তখনই মানুষ তার স্বীয় বিবেকবোধ জাগ্রত করে প্রতিবাদমূখর হয়েছে এবং ন্যায় ও সত্যকেই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে বা করার চেষ্টা করেছে। তাই আমি এখনো মানুষের উপর বিশ্বাস হারাইনি। মানুষের মানবিকতা আছে বলেই আমরা আজও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর আগামীর, সুন্দর পৃথিবীর। পরিশেষে আবারো শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকারী ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। এই চরম অন্যায়ের শাস্তিটি দৃষ্টান্ত হোক। আর যেন বাংলার বুকে কোন শিশুকে পাষন্ড পিটিয়ে হত্যা করতে না পারে। সেই দৃষ্টান্ত বিচার বিভাগ স্থাপন করুক। শান্তি পাক সামিউল আলম রাজনের আত্মা। জয় হোক মানুষের মানবতাবোধের।
 মিলন কান্তি দাস বিকম (সম্মান), এমকম (হিসাব বিজ্ঞান) মোবাইলঃ ০১৬৮২-৩৫১৮৫৮।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়