Tuesday, February 11

কানাইঘাট উপজেলা ভাঙবেন না!


সরওয়ার ফারুকী:
'কানাইঘাট' শব্দের বয়স বড়জোর দেড়শো বছর। ১৮৮০ সালের আগে কানাইঘাট শব্দের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু দেড়শো বছর বয়সের এই শব্দ কয়েক হাজার বছরের ঐতিহাসিক চিহ্ন ধারণ করে বেড়ে ওঠছে। 

জৈমিনি মহাভারতের বিবরণ অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার বছরেরও অধিক বয়সী কানাইঘাটের ভূখণ্ড! কেচ্ছা-কাহিনী যা-ই থাকুক না কেন— এ ভূমি যে পুরা বঙ অঞ্চলের চাইতেও পুরনো- তা জ্ঞানী মাত্রই অবগত। 

প্রাচীনত্বের অহঙবোধে এ জমিন অনেক নামীদামীদেরও টেক্কা দিয়ে চলে!


শেষ এক হাজার বছরের জ্যান্ত ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায়— এ অঞ্চলের মেজাজ-মর্জি খানিকটা আলাদা। 

বিশ্বখ্যাত কিংবদন্তী হজরত শাহজালাল (র.)-র বাহিনিও এখানে আসেন নি, অথবা আসতে চাননি। এভাবেই একটু আলাদা চলতে চেয়েছে বৃহত্তর জৈন্তা। 

ব্রিটিশদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়ও সমগ্র উপমহাদেশের মধ্যে জৈন্তা রাজ্যই সর্বাধিক সময় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিল। 

ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনেই প্রথম 'কানাইঘাট' শব্দ ও স্থানের উৎপত্তি। ১৮৮০ সালে জৈন্তাকে প্রশাসনিক প্রয়োজনে বিকেন্দ্রীকরণ করলেও ব্রিটিশরা ভাগবাটোয়ারা করেনি। একইভাবে পাক আমল হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও কানাইঘাটের আলাদা পরিচয়ে আঘাত আসে নি।
কানাইঘাটের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কানাইঘাটবাসীর চলাফেরা, মনমানসিকতার সাথে দেশের অপরাপর অঞ্চলের আছে কিঞ্চিৎ পার্থক্য। এই পার্থক্যই কানাইঘাটবাসীর সৌন্দর্য। শেষ দেড়শো বছরের শিক্ষা-আন্দোলন, তাহযিব তামাদ্দুনের অন্যরকম চর্চা, কানাইঘাটের অসংখ্য উলামায়ে কেরামের আত্মত্যাগ এই জনপদের মনোজগত গঠনে অসামান্য অবদান রেখেছে। 

অন্যরকম এক ছন্দ ধারণ করেই কানাইঘাটবাসী পরস্পরকে ভালোবেসে একই উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে থাকতে চেয়েছে, থাকছে।

জনগণ চেয়েছে আইনি সহযোগিতা তার দুয়ারে দ্রুত পৌঁছানোর জন্যেই নতুন একটি প্রশাসনিক থানা— যা অসৎ লোকদের দৌরাত্ম ঠেকাতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু  অফিসার করতে গেলেন জনগণের ভ্রাতৃত্ম, ঐতিহ্য, ঐক্য, আত্মীয়তায় ফাটল ধরিয়ে দিতে!


নগরায়নের এই যুগে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জরুরি প্রয়োজন। সে প্রয়োজনের নিমিত্তেই দীর্ঘদিন ধরে ওমন একটা জনদাবিও ছিল। 

কিন্তু ঢাকায় বসে, কলমের ডগায় জনগণের দাবী নয় ওমন একটা কাল্পনিক ম্যাপ তারা এঁকে দিতে চাইলেন! অপরিপক্ক, ইতিহাস-ঐতিহ্যবিমুখ, ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত অফিসারের মনমর্জির দৌরাত্ম্যে কি হাজার হাজার বছরের ধারাবাহিকতা ভেঙে খানখান হয়ে যাবে!! ওমন শঙ্কায় কানাইঘাবাসী সত্যিই সঙ্কিত।

আমরা স্থানীয় ও জাতীয় নেতৃত্বের কাছে, প্রশাসনের সকল সচেতন কর্মকর্তাবৃন্দের বরাবরে এ দাবীই পেশ করছি— যা জনগন চায়।

মোঘল বাদশাহরা যা পারেনি, ব্রিটিশরাজত্বে যা হয়নি, পাক সরকারও যে কানাইঘাট ভাঙেনি— স্বাধীন বাংলাদেশে, গণতান্ত্রিক যুগে আপনারা তা করবেন না, করবেন না।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়