Sunday, June 28

কীভাবে কাটাবেন রমজান


আল্লামা আনোয়ার শাহ: রমজান ইবাদতের বসন্তকাল। অধিক পরিমাণে নেকি অর্জনের সিজন। এ সিজন বছরান্তে একবার আসে। তাই এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আকাবিররা রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রুটিন মোতাবেক কাটাতেন। নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, তালিম ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে রমজানের কদর করতেন। উম্মুল মোমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজান শুরু হলে রাসুল (সা.) এর ইবাদতের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকত না। সাহাবি উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসুল (সা.) আমাদের বললেন, 'রমজান তো এসে গেছে। এটি বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং খাস রহমত নাজিল করেন। গোনাহখাতা মোচন করেন। দোয়া কবুল করেন। ইবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ লক্ষ করেন এবং তা নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। অতএব তোমরা বেশি বেশি সৎকর্ম করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। হতভাগা ওই ব্যক্তি, যে এ মাসে তার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।' (তিরমিজি)। অতএব রমজানে ফরজ নামাজ, রোজা, তারাবি ছাড়াও অতিরিক্ত নফল ইবাদত করা দরকার। রুটিন করে ইবাদতে লেগে যাওয়া উচিত। যেমন : ১. প্রত্যেক ফরজ নামাজের আগে-পরে নফল নামাজ পড়া। এমনিতেই নফল ইবাদত দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সমর্থ হয়। তদুপরি রমজানের নফল অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে রমজানে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।' (মেশকাত)। রমজান উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা অবিরত ঘোষণা করতে থাকে, 'হে কল্যাণ প্রত্যাশী! নেক কাজে অগ্রসর হও, হে মন্দ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি! এবার তুমি ক্ষান্ত হও।' (মেশকাত)। *. নামাজের পর জিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া। জিকির হলো সব ইবাদতের প্রাণ। ইবাদতের বিধান দেয়া হয়েছে মূলত আল্লাহপাকের জিকির বা তাঁর স্মরণের জন্যই। আল্লাহ বলেন, 'হে মোমিনরা! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করো। আর সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবিহ পাঠ করো।' (সূরা আহজাব : ৪১, ৪২)। * কোরআন তেলাওয়াত করা। রমজানের আমলগুলোর মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত অন্যতম। রমজানে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় এ মাসের সঙ্গে কোরআনের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। বোখারির বর্ণনায় এসেছে, রমজান এলে নবী করিম (সা.) জিবরাঈলের সঙ্গে কোরআনের দাউর করতেন। অর্থাৎ তিনি জিবরাঈলকে শোনাতেন এবং জিবরাঈল নবীজিকে কোরআন শোনাতেন। বুজুর্গ ওলামাদের সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, রমজানে তারা অধিক পরিমাণে কোরআন খতম করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর ব্যাপারে বর্ণনায় রয়েছে, তিনি রমজানে দিনে এক খতম, রাতে এক খতম এবং তারাবিতে এক খতম, এভাবে ৬১টি খতম দিতেন। *. তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়া। রমজানে তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ আসে। সাহরি খাওয়ার জন্য আমাদের ঘুম থেকে জাগতে হয়। তখন যদি তাহাজ্জুদের নিয়তে দুই-চার রাকাত নামাজ পড়ে নিই, তাহলে এক মাসে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে উঠবে। এরপর সারা বছর তা ধরে রাখা সহজ হবে। তাহাজ্জুদের মর্যাদা সব নফল নামাজের মধ্যে বেশি। পূর্ববর্তী বুজুর্গদের আমল ছিল তাহাজ্জুদ পড়া। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'তোমরা তাহাজ্জুদের নামাজকে নিজেদের ওপর আবশ্যক করে নাও। কেননা তা পূর্ববর্তী নেক্কারদের রীতি ছিল। এটি তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্যস্থাপনকারী, গোনাহ মোচনকারী এবং অন্যায় থেকে বিরত রাখে।' (তিরমিজি)। জগদ্বিখ্যাত আল্লাহর ওলি জুনায়েদ বাগদাদি (রহ.) এর ইন্তেকালের পর তার জনৈক শাগরেদ স্বপ্নযোগে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ তায়ালা আপনার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছেন। তিনি উত্তর দিলেন, 'শেষ রাতের কয়েক রাকাত তাহাজ্জুদের অছিলায় আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।' *. দানের হাত প্রসারিত করা। এ মাস দানের সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে বেশি। ফরজ জাকাতও রমজানে আদায় করা উত্তম। রাসুল (সা.) রমজানকে সহানুভূতির মাস আখ্যায়িত করেছেন। এ মাসে ধনীরা গরিবের কষ্ট অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। তাই তাদের প্রতি দানখায়রাত করা উচিত। হাদিসে এসেছে, 'রমজানে নবীজির দানের গতি ছিল প্রচ-বেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি।' (বোখারি)। *. বেশি বেশি দোয়া করা। কারণ রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 'রমজানের দিনে ও রাতে অসংখ্য কয়েদিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। রমজানের দিনে ও রাতে প্রত্যেক মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল হয়।' (আততারগিব)। *. শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইতিকাফ রমজানের বিশেষ একটি আমল। এতে অনেক ফজিলত রয়েছে। একদিনের ইতিকাফ দ্বারা দোজখ তিন খন্দক দূরে সরে যায়। এক খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্ব সমান। তাছাড়া ইতিকাফকারী ব্যক্তির জন্য লায়লাতুল কদর পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত। যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।' রমজানে চারটি বিশেষ আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, 'রমজানে তোমরা চারটি আমল বেশি বেশি করবে। এর মধ্যে দুইটি আমল দ্বারা আল্লাহ খুশি হন। তা হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লা পাঠ করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর দুইটি না করে কারও উপায় নেই। তা হলো জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করা।' (ইবনে খুজায়মা) অনুলিখন : মাহবুবুর রহমান নোমানি

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়