Tuesday, June 23

বাংলাদেশের কাছে হেরে যে অবস্থা ভারতীয় দলের


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: মিরপুরে রোববার রাতে বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি টিম হোটেলে ঢুকে সোমবার গোটা দিনে আর বেরোলেন না। ব্রেকফাস্ট টেবলে তাকে দেখা যায়নি। লাঞ্চও রুমে নিয়েছেন। বাইরে বেরনোর প্রশ্ন নেই। টিম মিটিং বা বিপর্যয়ের কাটাছেঁড়া সব কিছুতেই ভারত অধিনায়ককে নাকি চরম নিস্পৃহ দেখিয়েছেন। সাম্প্রতিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নাকি এতটা বিষণ্ণ কখনও দেখায়নি। রোববার মধ্যরাত-পরবর্তী কয়েকটা প্রহর। বহু দিন ধরে সযত্নে লালিত স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলার পর কেটে যাওয়া কয়েকটা ঘণ্টা। একটা ওয়ান ডে সিরিজ জয় যে বাঙালি মনকে এমন ঝকঝকে শরতের আকাশ এনে দিতে পারে, বাংলাদেশ রাজধানীর রাজপথে না দাঁড়ালে অনুভব করা কঠিন। রাস্তার মোড়। সুপার মার্কেট। রেস্তোঁরা। বাজার। বাসস্ট্যান্ড। ফ্লাইওভার। ফেসবুক। টুইটার। যে দিকে তাকান, যে দিকে যান, সর্বত্র ইফতারের আনন্দকে দ্বিগুণ বলে মনে হবে। টিভি চ্যানেলে শোয়ের পর শো। প্রাইম টাইমের স্লটে এর বাইরে কিছু রাখা যাচ্ছে না। পাবলিক প্লেসে যে সব জায়গায় টিভি ঝুলছে, সেখানেও মীরপুরে ধোনি-বধের বাইরে কিছু নেই। অফিসযাত্রী থেকে কলেজপড়ুয়া, খুচরো ব্যবসায়ী থেকে হোটেলকর্মী, সব ফেলে দাঁড়িয়ে দেখছে আর অভিভূত হয়ে যাচ্ছে। কারওয়ান বাজার মোড়ের প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের বাইরের চত্ত্বরটাকেই ধরা যাক। বুম, ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে এ-পারের সাংবাদিককুল সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের উপর। মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে কোচের ‘কোট’ নিতে হবে। ছেলেটা কত বছর দেশকে টানবে? অজন্তা মেন্ডিস হয়ে যাবে না তো? নিরন্তর ভিডিও রেকর্ডিংয়ের যুগে কতটা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব তার শিল্পকে? শুধু হোটেলের তিন তলার ঘরগুলোকে যা নিঃসঙ্গ দ্বীপপুঞ্জ মনে হয়। এত দিন বিকেল পাঁচটা বাজলে, ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে টিমের আরও পাঁচ-ছ’জনকে সুইমিং পুলে দেখা যেত। সোমবার দেখা গেল জিম শেষ করে সুরেশ রায়না আর স্টুয়ার্ট বিনি মিনিট পাঁচেকের জন্য এলেন, কী ভেবে চলেও গেলেন। শাস্ত্রী— তাকেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও দেখা গেল না। টিমের আবেগের মুখ বিরাট কোহলিও নিশ্চুপ। রোববারের হারের পর কোনও কথাবার্তা বলেননি। শাস্ত্রী এত দিন ড্রেসিংরুমে উদাত্ত বক্তৃতা দিতেন, প্লেয়ারদের চাঙ্গা রাখতে ডিনার স্পনসর করতেন। তাকেও কিছু টিমকে বলতে শোনা গিয়েছে বলে খবর নেই। সবচেয়ে মূহ্যমান লোকটা অবশ্য এরা কেউ নন। তিনি এমএসডি। শোনা গেল, রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও টিমকে টেনে ওঠানো যাচ্ছিল না। বাস পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার শক্তিও ছিল না কারো। ‘রাত হয়ে যাচ্ছে’ বলে-টলে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় টিমকে বাসে তোলা হয়। আর ধোনি উঠে চলে যান একদম শেষ সিটে। বসে পড়েন নিঃশব্দে। পাশে কেউ ছিল না। ধোনিও কাউকে আর ডাকেননি। তিনটে ব্যাপার নাকি শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে ভারত অধিনায়ককে। তার ক্যালকুলেশন ছিল যে, দু’শো পঁচিশ হাতে থাকলেও ম্যাচ থাকত। আশা করেছিলেন, টপ-মিডলের চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরেও জাদেজা শেষ পর্যন্ত থেকে গেলে সেটা সম্ভব। কিন্তু বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতে প্রথম বলে বোল্ড হয়ে যান জাদেজা। বল করতে নামার আগে বোলারদের বলে দিয়েছিলেন যে, লুজ বল একটাও করা যাবে না। ম্যাচটা সেখানে অনেক আগে শেষ হয়ে গেল। নিজে নেমেছিলেন বহু দিন পর চার নম্বরে, ব্যাটিংকে ধরবেন বলে। এমএসডি ঘরানার ‘দে ঘুমাকে’ মেজাজে ঢোকেননি, টিমকে নির্ভরতা দিতে হত বলে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও মর্যাদা পায়নি। একটা পার্টনারশিপ বানানোর সঙ্গী পাননি। হারের পর একটা বার্তাই নাকি দিয়েছিলেন টিমকে। বলে দিয়েছিলেন, সব দায় আমার। তোমাদের ভাবার কিছু নেই। সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার আগে টিম ম্যানেজারকেও বলে দেন, আমি যাব কথা বলতে। আর আমি একাই যেতে চাই। পারব ম্যানেজ করে নিতে। টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তায় ছিল যে, এ বার আগ্নেয়গিরির মুখে পড়তে হবে। কিন্তু ধোনিকে আটকানো যায়নি। যে আগ্নেয়গিরির মুখ বন্ধ করে তার ‘আমাকে সরিয়ে দিন’ বলে চলে যাওয়া। সোমবার কেউ কেউ বললেন, ওটা নিছকই প্রশ্নের উত্তরে বলা। ধোনি অধিনায়কত্ব ছাড়বেন বা ছেড়ে দিতে চাইছেন, এমন জল্পনা চালানো অর্থহীন। টিমের পক্ষ থেকে অনেক বেশি করে তুলে আনা হচ্ছে বরং তামিম ইকবালের ক্যাচটা বিরাট কোহলি ধরার পরেও সেটা না দেওয়া। যা নিয়ে উষ্মাও বেরোচ্ছে। বলা হল, ফুটেজের যে ফিড তৃতীয় আম্পায়ার পেয়ে থাকেন, সেটা ভারতীয় ড্রেসিংরুমেও আসে। বারবার চালিয়ে বোঝা গেছে যে, ওটা আউটই ছিল। আর ওখানে তামিম আউট হয়ে গেলে ম্যাচ ঘুরে যায়। এটাও বলা হলো যে, কোহলি আম্পায়ারের কাছে আউট না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে, তাকেও পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। ভারত অভিযোগের দিকে যাচ্ছে না সেটা এখন অজুহাত দেখাবে বলে। ক্লান্তিকেও বিপর্যয়ের একটা কারণ হিসেবে তুলে আনা হল। কোহলির উদাহরণ দিয়ে যেমন বলা হল, ম্যাচে ফ্রি-হিট পেয়েও মারতে ভুলে গেলেন। টানা ক্রিকেট খেলে যাওয়ার ক্লান্তি নাকি এতটাই প্রভাব ফেলছে এখন ক্রিকেটারদের মনে। সে সব আর এখন শুনবে কে? মনে রাখতেও বা চাইবে কেন? বর্তমানেই লোকে বেশি বাঁচে, অতীতে নয়। আর বর্তমান বলছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের এত যন্ত্রণার পরেও আরও একটা ম্যাচ খেলতে হবে। আরও একবার দেখা করতে হবে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। যতই ইচ্ছে না করুক। যতই ম্যাচটা নিয়মরক্ষার হোক। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়