Sunday, May 17

কুকুরের দুধ পান করে বেঁচে আছে শিশু !


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। কুকুরের দুধ পান করে বেঁচে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী ভোলাহাট উপজেলার নয় বছরের শিশু সেলিম। মাত্র সাত মাস বয়সে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের সেলিমের পিতা লালচাঁনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার মায়ের। কোলের শিশু সেলিম মায়ের সাথে চলে আসে বজরাটেক-সবজা স্কুলপাড়া গ্রামের গরীব নানার বাড়ীতে। পরে তার মায়ের আবার বিয়ে হয় অন্যখানে। সেলিমের মাকে নিয়ে তার সৎ পিতা চলে যায় চট্রগ্রামে। নানা বাড়ীতে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠতে শুরু করে সেলিম। গরীব নানা ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে অভাবে সংসার চালায়। এ সময় জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও সেলিমের ভাগ্যে জোটেনি ঠিকমত। একটু বড় হলে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেলিম যখন চলতে শুরু করলো তখন আশপাশের এবাড়ি ওবাড়ি থেকে নিজের খাবার জুটিয়ে নিত। এভাবেই আরেকটু বড় হলে রাস্তার মোড়ে ও হাট-বাজারে সে তার ঠিকানা খুঁজে নেয়। এসময় এমনকি নিজের ক্ষুধা মিটাতে হাট-বাজারে থাকা কুকুরের দুধ খেয়েও শিশু সেলিম নিজের জীবন বাঁচায়। প্রায় প্রতিনিয়তই কুকুরের দুধ খেতে থাকে সে। কুকুরগুলিও সেলিমকে অন্য কুকুরছানাদের মতই সন্তান স্নেহে তাদের দুধ খাওয়াতে থাকে সেলিমকে। এতে আশেপাশের মানুষেরা কেউ খুব মজা পায় আবার কেউ অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে ঘটনার রহস্য খুঁজে। কিন্তু দু’মুঠো খাবার দিয়ে সেলিমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি তেমন কেউ। সম্প্রতি উপজেলা সদর মেডিকেল মোড়ে এক সংবাদকর্মীকে এক দোকানে চা খেতে দেখে সেলিম এসে টাকার জন্য আবদার করে। এমন সময় আশপাশের অনেকেই বলে উঠে সে কুকুরের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ঘটনাটি শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না সাংবাদিকের। কিন্তু শিশু সেলিমকে জিজ্ঞেস করতেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলো সে নিজেই। জানালো তার ক্ষুদ্র বঞ্চনাময় জীবনের অভিঞ্জতার কথা। এদিকে দরিদ্র নানার পক্ষে নিজ সংসার চালিয়ে সেলিমের তেমন খোঁজ রাখা আর সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আধ-পাগল বাবা লালচাঁন ছেলে কোথায় কি করে সেটাও দেখেনি কখনও। মা-বাবার আদর যত্নের অভাব আর নানার সংসারের অনটনই ঠেলে দিয়েছে সেলিমকে বাস্তব জীবনের কঠিন পরীক্ষায়। আর মানুষের কাছে সাহায্য চাইলে কুকুরের দুধ খাওয়ার জন্য অনেকেই তাকে পাশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ দিকে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানের কাছে কুকুরের দুধ পান করা শিশুটির কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, পাগলা কুকুর জলাতঙ্ক-র‌্যাবিস ও অনান্য রোগ জীবাণু বহন করে। সে রকম কুকুরের দুধ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা কিন্তু এই শিশুটি যেহেতু দীর্ঘ দিন যাবত কুকুরের দুধ খেয়েও দিব্যি ভাল আছে ফলে ধারণা করা যায় ওই সব কুকুর রোগ জীবাণু বহনকারী ছিলো না। এখন আর তার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার কথা নয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়