Monday, April 27

কবি সওয়ার ফারুকী একজন আপাদমস্তক আধ্যাত্মিক কবি: ভাষাসৈনিক মাসউদ খান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেছেন, কবি সওয়ার ফারুকী একজন আপাদমস্তক আধ্যাত্মিক কবি। আধ্যাতিকতার মূল সুর তার কবিতায় বেজে ওঠে। তার পূর্ব পুরুষ ছিলেন শক্তিমান ও কালোত্তীর্ন কবি। উত্তরাধিকার সূত্রে তার রক্তে তিনি বহন করছেন আধ্যাত্মিকতা। আমরা যে ধরনের কবিতা প্রত্যাশা করি সে ধরনের কবিতা তিনি লিখেছ্নে। ‘একটি শব্দের জন্য’ কাব্যগ্রন্থটি একটি সময়পযোগী গ্রন্থ। এজন্য তাকে এসময়ের অন্যতম কবি বলা যায়। কৈতর সিলেট-এর উদ্যোগে কবি সরওয়ার ফারুকীর কাব্যগ্রন্থ ‘একটি শব্দের জন্য’-র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। শনিবার নগরীর দরগাহ গেইটস্থ দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আশির দশকের শক্তিমান কবি মুকুল চৌধুরী। কৈতর প্রকাশন, সিলেটের গল্পকার সেলিম আউয়ালের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাহিত্য সম্পাদক আইনজীবি কবি আব্দুল মুকিত অপি। গীতিকার কবি সাইয়িদ শাহীন ও কবি মামুন হোসেন বিলালের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবীন শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব:) সৈয়দ আলী আহমদ, রাগিব রাবেয়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. এম এ জলিল, মাসিক বিশ্ববাংলা সম্পাদক কবি মুহিত চৌধুরী, নগর সম্পাদক কবি সৈয়দ মবনু, কবি বেলাল আহমদ চৌধুরী, প্রভাষক কবি নাজমুল আনসারী, আইনজীবি আব্দুস সাদেক লিপন, প্রভাষক কবি মামুন সুলতান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুর রহিম, অধ্যক্ষ কবি বাছিত ইবনে হাবীব প্রমুখ। কবি আব্দুল কাদির জীবনের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন, কবি তাজুল ইসলাম, কবি উম্মে সুমাইয়া তাজবিন নীলা, কবি মিনহাজ ফয়সল, কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না, কবি নাইমা চৌধুরী, কবি জান্নাতুল শুভ্রা মনি, কবি তাসলিমা খানম বীথি, কবি আলমগীর হোসেন, মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে কবি মুকুল চৌধুরী বলেন, কবি সওয়ার ফারুকীর একজন মুগ্ধ পাঠক হলাম আমি। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বাংলা কবিতার যে ঐতিহ্য রয়েছে সে ঐতিহ্যের একজন ধারক হচ্ছেন এই কবি। তার কবিতার ভাষা অনেক সহজ ও সরল। মনের সুন্দর অনুভুতি দিয়ে তিনি তার কবিতাকে রাঙ্গিয়ে তোলেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ বলেন, সিলেটের একজন আলোকিত কবি হলেন সওয়ার ফারুকী। ইদানিং আমার পড়া আধুনিক কবিতার বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় বইগুলোর মধ্যে তার কবিতার বই অন্যতম। তার কবিতায় রুহের যে ক্রন্দন রয়েছে তা শুনা যায়। তার কবিতার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার পতাকা উড়ে। শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব:) সৈয়দ আলী আহমদ বলেন, একজন কবি সারাজীবন অনেক কষ্ট সাধনা করে ‘একটি শব্দের জন্য’ কবিতা লিখেন। এই কাব্যগ্রন্থে প্রচুর পরিমান আবেগ ও ভাবের গভীরতা রয়েছে। তার মাঝে নজরুলের মতো বিদ্রোহী কন্ঠ রয়েছে। এভাবেই কবি পাঠকদের আরো চমৎকার কবিতা উপহার দেবেন। কবি মুহিত চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত সুন্দর ধর্মীয় মূল্যবোধ লালন করেন কবি সওয়ার ফারুকী। আরবি ও ফার্সি ভাষার চমৎকার ব্যবহারে তিনি পুরনো ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। কবির কবিতায় মানবতার কথা যেমনি এসেছে ঠিক তেমনি চলমান রাজনৈতিক অস্থীরতার কথাও চমৎকারভাবে এসেছে। তিনি একজন প্রতিক্রিয়াশীল কবি। এই প্রতিক্রিয়া শব্দটাকে যারা খারাপ চোখে দেখেন আমি তাদের দলে নই। মানবতার কষ্ট দেখে যে কবির মন কাঁদেনা সে কবি একজন পরগাছা কবি। কবির অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি বলেন, আমার বইটি পাঠক পড়ে যদি উপকৃত হন তবেই লেখা স্বার্থক হবে। আমি চেষ্টা করেছি পাঠককে ভালো কিছু উপহার দিতে। আমাকে যারা বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। স্বাগত বক্তব্যে গল্পকার সেলিম আউয়াল বলেন, কবি সরওয়ার ফারুকী একজন ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তার পিতামহ ইব্রাহীম তসনা ফার্সি ভাষায় কাব্যচর্চা করেছেন। প্রবাসের এই যান্ত্রিক জীবনে থেকেও কবি তার সাহিত্যসাধনা অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে সাহিত্যসাধনা অব্যাহত রাখলে বাংলা সাহিত্য উপকৃত হবে। কবি মামুন সুলতান বলেন, কবির এই কাব্যগ্রন্থের মোট ৮২টি কবিতা যেন একজায়গায় বসেই পড়ে ফেলা যায়। তার কবিতার মধ্যে চমৎকার গতিময়তা লক্ষ্য করা যায়। পাঠক কখনোই কবিতা পড়া শেষ না করে উঠতে পারবেনা। একজাতীয় কোন শব্দ বা পংক্তি বারবার তার কবিতায় আসেনা। যা আমরা সহজেই বলতে পারিনা এমন অনেক জটিল কথাবার্তা তার কবিতায় এসেছে। কবি সৈয়দ মবনু বলেন, কবি সওয়ার ফারুকী আমাদের মাঝে নতুন কেউ নন। তিনি অতি পরিচিত একজন লেখক। তার কবিতার শেখড় অনেক গভীর। কবির এই কাব্যগ্রন্থে তার পূর্বপুরুষের কবিতার প্রতিধ্বনী পাওয়া যায়। প্রভাষক কবি নাজমুল আনসারী বলেন, বইটির প্রচ্ছদ খুবই চমৎকার। যে কেউই বইটিকে প্রথম দেখে কিনে ফেলবে। কবি তার কবিতায় অনেক পরিমিত বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি একজন সচেতন ও শিল্পউত্তির্ন কবি। সমাজে তার প্রচার ও প্রসার খুবই প্রয়োজন। কবির একটি বই তার সন্তানতুল্য। উল্লেখ্য, সভায় বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আব্দুল গফফারকে তার পাঠাগারের জন্য কৈতর সিলেট-্এর পক্ষ থেকে দুই শতাধিক বই উপহার দেয়া হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়