তালহা রহমান:
ঢাকা: আর মাত্র একদিন বাকি। এরপরই শুরু হবে বাঙালীর প্রাণের উৎসব। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ বঙ্গাব্দ ১৪২২ কে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। অসাম্প্রদায়িক বাংলার মাটিতে উগ্রবাদী হামলায় লেখক অভিজিৎ রায় ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান খুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিবাদ্য- ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’। রাজধানীতে বর্ষবরণের মূল আয়োজনটি হয় রমনা বটমূলে। বৈশাখের প্রথম সকালে ছায়ানটের আয়োজনে গানে গানে নতুনের আবাহনের এই আনুষ্ঠানিকতা চলছে প্রায় চার দশক ধরে।
তবে পুরনোকে পেছনে ফেলে বৈশাখ বরণের এই উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নিয়মিত আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নন, ঢাক-ঢোল-বাঁশি বাজিয়ে; শোলার পাখি, টেপা পুতুল হাতে নিয়ে বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রায় যোগ দেন সব বয়সের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
প্রতি বছর নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয় এ শোভাযাত্রা। আবহমান বাংলার প্রতীকী উপস্থাপনার সঙ্গে তাতে প্রাধান্য পায় সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, তারুণ্যের রঙে মূর্ত হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের প্রত্যাশা।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রঙিন করে তুলবে সেই দিনটিও মঙ্গলবার। প্রায় ২০ ফুট উঁচু বিশাল এক হাতে মুক্তবুদ্ধির কণ্ঠরোধের প্রতীকী উপস্থাপনায় সেদিন ফুটিয়ে তোলা হবে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির উত্থানের চিত্র। চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে বাঁশ আর কাঠামোতে এই প্রতীকটি তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার চারুকলা অনুষদে ঢুকতেই দেখা গেল রঙ, আঠা, কাগজ, বাঁশ আর কাঠের কাঠামো নিয়ে দারুণ ব্যস্ত তরুণ শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে বাঁশের ফ্রেমে ফুটে বেরুচ্ছে হাতি, ঘোড়া, পাখি, ভেড়াসহ বাংলার লোকজ সংস্কৃতির নানা মোটিফ। রঙ চড়ানোর পর এই ফ্রেমগুলোই জায়গা নেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অগ্রভাগে।
চারুকলার শিক্ষার্থী রনি জানান, প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ মুখোশ তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চারুকলার ভেতরে বিশাল কর্মযজ্ঞের একপাশে দেখা মিলল থরে থরে সাজানো ‘রাজা-রানী’র মুখোশ। লাঠির মাথায় এসব মুখোশ নিয়েই শোভাযাত্রা রঙিন করে তুলবেন অংশগ্রহণকারীরা।
১৬তম ব্যাচের ছাত্রী অমিত জানান, শুরুর দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রার নাম ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯৬ সাল থেকে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এখন এ আয়োজন বৈশাখ বরণের আবশ্যিক অনুসঙ্গ।
অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয় এই শোভাযাত্রার রেওয়াজ। এটি শুধু আমাদের দেশে নয়, সম্ভবত পুরো উপমহাদেশেই সবচাইতে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব।”
বর্ষবরণের এই প্রস্তুতিতে সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশের লোকজ শিল্পকর্ম তুলে ধরার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। দুটি স্টলে বিক্রি হচ্ছে বিচিত্র সব শিল্পকর্ম, মিনিয়েচার মাস্ক, পটচিত্র, পেপার ম্যাশের মুখোশ। দাম ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। পাশের একটি স্টলে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন চিত্রকর্ম, যা ‘ওপেন আর্ট ক্যাম্প’ এর ফসল। ইতিহাস বলে, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। বর্ষ শুরুর সে দিনটিই এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব।
বাদশাহ আকবরের নবরতœ সভার আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজি বাদশাহী খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ফসলি সালের শুরু করেছিলেন হিজরি চান্দ্রবর্ষকে সৌরবর্ষের মতো মিলিয়ে নিয়ে। তিনিই হিজরিকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় করেন এবং পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। বৈশাখ নামটি নেওয়া হয় নক্ষত্র ‘বিশাখা’র নাম থেকে। আর দুদিন বাদেই বিদায় নেবে বঙ্গাব্দ ১৪২১, পহেলা বৈশাখে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মেতে উঠবে বর্ষবরণে।
---ঢাকাটাইমস
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়