Saturday, January 31

টাকা জাদুঘর


সৈয়দ রশিদ আলম: ২৫ মে ২০১২। বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটির (বিএনসিএস) প্রথম মুদ্রা প্রদর্শনী শুরু হলো ঢাকার জিপিওতে। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি এই মুদ্রা প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হন। বিএনসিএসর সভাপতি অমলেন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক এম এ কাশেম, মুদ্রা সংগ্রাহক রবিউল ইসলাম ও এস বি সালাম তুহিনের সঙ্গে গভর্নর আলোচনায় বসলেন। কীভাবে একটি কারেন্সি মিউজিয়াম গঠন করা যায়, শুরু হলো সেই আলোচনা-পর্যালোচনা। বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি স্বল্পপরিসরে কারেন্সি মিউজিয়াম আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। টাকা জাদুঘরের প্রথম দিকের উপহারদাতা হিসেবে ছিলেন এম এ কাশেম, অমলেন্দ্র সাহা, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম। টাকা জাদুঘর ৫ অক্টোবর ২০১৩। মুদ্রা সংগ্রহকারী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লড়াকু গভর্নর ড. আতিউর রহমানের স্বপ্ন পূরণের দিন। এই দিন প্রতিষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম কারেন্সি মিউজিয়াম। নামকরণ করা হলো টাকা জাদুঘর। উদ্বোধন করলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সেদিন দেশের সব মুদ্রা সংগ্রহকারী, মুদ্রা গবেষক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। যা আছে টাকা জাদুঘরে একটা সময় বিনিময় মূল্য হিসাবে কড়ির প্রচলন ছিল। সেই কড়ি থেকে শুরু করে সমকালীন বিশ্বের, বিলুপ্ত জনপদের সব ধরনের ধাতব মুদ্রা, ব্যাংক নোট, মুদ্রা সংরক্ষণের সব উপকরণ টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করে দর্শনার্থীরা হাইব্রিড, পলিমার, বিলুপ্ত দেশের ব্যাংক নোট ও সব স্বাধীন দেশের, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ব্যাংক নোট টাকা জাদুঘরে দেখবেন। টাকা জাদুঘর বাংলার সুলতান, দিল্লির সুলতান, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়াসহ একাধিক দেশের ধাতব মুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। বিলুপ্ত দেশের মধ্যে পর্তুর্গিজ ইন্ডিয়া, পর্তুগিজ কেপভারদে, পর্তুগিজ মোজাম্বিক, কাতাংগা, ব্রিটিশ ইস্ট আফ্রিকা, মাস্কাট ও ওমান, কাতার অ্যান্ড দুবাই, রোডেশিয়া, জানজিবারসহ একাধিক বিলুপ্ত দেশে ধাতব মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। যে সব বিলুপ্ত দেশের ব্যাংক নোট প্রদর্শিত হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে চেকোস্লোভাকিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটিশ বার্মা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, জাপান বার্মা, জাপান মালায়া, ব্রিটিশ সিলোনসহ একাধিক দেশ। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রাও টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। কুষাণ মুদ্রা, প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত (পাঞ্চ মার্কড) রৌপ্যমুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। দিল্লির সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক শাহ, মোগল সম্রাট শাহজাহান, আওরঙ্গজেব, ফররুখশিয়ার ধাতব মুদ্রাও টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ম্যাপ সিরিজের এক টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা ও একশ টাকার নোট টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিশু-কিশোররা পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে এক লাখ টাকার একটি ব্যাংক নোটে নিজেদের ছবি তুলতে পারবে। পরিশ্রান্ত দর্শনার্থীরা নিচতলায় কয়েন ক্যাফে নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। দোতলায় উঠতে গিয়ে হাতের ডান দিকে রয়েছে একটি সেলস সেন্টার। সেখানে বাংলাদেশের সব স্মারক ব্যাংক কয়েন ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন। সেলস সেন্টারের দায়িত্বে রয়েছেন সেহেলী নার্গিস। তার কাছে গেলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। একটি চৌকস টিম দ্বারা টাকা জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা, মহাব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবীর ও উপ-মহাব্যবস্থাপক পরিমল চক্রবর্তী। টাকা জাদুঘরের কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন এক সময়ের ঢাকা জাদুঘরের কিপার মুসলিম মুদ্রা গবেষক ড. রেজাউল করিম। তাকে সহযোগিতা করছেন উপ-পরিচালক খন্দকার আনোয়ার সাদাত ও কিপার ড. আছিয়া খানম। শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার বন্ধ। শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করার জন্য কোনো প্রবেশ ফি দিতে হয় না। চলতি মাসে জাপান থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও জাপানের কয়েন সেট স্বল্পমূল্যে টাকা জাদুঘর থেকে ক্রয় করা যাবে। ঢাকা শহর থেকে নিজস্ব যানবাহনযোগে অথবা বাসে করে প্রথমে মীরপুর ১০ নং গোলচক্করে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে রিকশা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায় টাকা জাদুঘর। কিডনি ফাউন্ডেশনের পরের দালানটিই হচ্ছে টাকা জাদুঘর। আপনি যদি প্রাচীন ইতিহাস জানতে, গবেষণা করতে চান, সমকালীন ও প্রাচীন বিশ্বের সব মুদ্রা, ব্যাংক নোট ও মুদ্রা সংরক্ষণের উপকরণ দেখতে চান তাহলে যেতে হবে সেই টাকা জাদুঘরে। প্রযুক্তির সব উপকরণ দিয়ে টাকা জাদুঘর সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র ডিজিটাল জাদুঘর হলো টাকা জাদুঘর। আর বিলম্ব না করে আপনজনকে নিয়ে বেড়ানোর নতুন জায়গা টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করুন। লেখক : প্রাবন্ধিক ও টাকা জাদুঘরের নিয়মিত উপহারদাতা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়