Saturday, January 31

পরিকল্পিতভাবে অপসারণ হয়েছে, ক্ষোভ জানালেন সুজাতা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কানাইঘাট নিউজ: ক্ষোভটা প্রকাশ্যে বলেই ফেললেন ভারতের সদ্য প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। অবসরের সাত্র সাত মাস বাকি থাকতে যেভাবে তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হলো, তা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুললেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে সুজাতা বলেন, ‘আমার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হলো। এটার কি খুব দরকার ছিল?’ তিনি আরও বলেন, ‘গত আঠেরো মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই সব কাজ করে গিয়েছি। বিনিময়ে সেখান থেকে শুধুই নেতিবাচক মন্তব্যই শুনতে হয়েছে। এটা পূর্বপরিকল্পিত।’ সুজাতা জানান, দিনের পর দিন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকের জন্য চেষ্টা করেও সেই সুযোগ পাননি এবং সে কারণেও সুজাতা মনে করছেন, আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বক্তব্য, এত দিন সুজাতার কাজে কোনও সমস্যা তৈরি করা হয়নি। তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েই আগে থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়নি, বরং পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আঠাশ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সাংবাদিক বৈঠকে বসে আচমকাই বরখাস্ত করেছিলেন তখনকার পররাষ্ট্র সচিব এ পি বেঙ্কটেশ্বরনকে। সেই সাংবাদিক বৈঠকে তখন খোদ সচিব উপস্থিত। এ রকম কোনও অপমানের মধ্যে সুজাতাকে ফেলতে চাননি মোদি। আবার জয়শঙ্করের মতো দক্ষ কূটনীতিক ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়ে নিলে তাঁকে বিদেশসচিবের পদে আনার সুযোগ হাতছাড়া হতো মোদির। অতীতে যে সুযোগ মনমোহন সিংহকে হাতছাড়া করতে হয়েছিল, গান্ধী পরিবার তথা সরাসরি বললে সোনিয়া গান্ধী সরাসরি হস্তক্ষেপে।’ জয়শঙ্করকে দুবছর আগেই বিদেশসচিব পদে চেয়েছিলেন মনমোহন। জয়শঙ্করের যোগ্যতা নিয়ে মনমোহন এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে বিদেশসচিব করতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সোনিয়ার আপত্তিতে পেরে ওঠেননি। এত দিন পরে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই জয়শঙ্করকে শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের আসনে বসালেন মোদি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পররাষ্ট্র নীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদি। তাঁর সঙ্গে জয়শঙ্করের ব্যক্তিগত রসায়নের একটি ইতিহাসও রয়েছে। ২০১২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর তখন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। সেখানে বেশ কিছ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আযোজনের ক্ষেত্রে জয়শঙ্করের তৎপরতায় মুগ্ধ হন মোদি। এক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিদেশসচিবের এই সক্রিয়তা তখনই নজর কেড়েছিল মোদির। পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ধীরে ধীরে তাঁর উপর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মোদির। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর এবং সদস্যসমাপ্ত প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামার সফরকে সফল করে তুলতে প্রবল সক্রিয় ছিলেন জয়শঙ্কর ও তাঁর অফিস। কিন্তু সুজাতা বলেন, ‘ওবামার সফরের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি আমরা পরিশ্রম করে তৈরি করেছি। আমার মন্ত্রকের অফিসাররা করেছেন। পরমাণু চুক্তি নিয়েও যথাসাধ্য পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সর্বদাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।” সুজাতার দাবি, গত আট মাসে পররাষ্ট্র নীতিতে মোদি যে ঝড় তুলেছেন, তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ঢাক নিজে পেটান না বলে এবং ব্যক্তি নয় দলবদ্ধ কাজে বিশ্বাস করে এসেছেন বলে, আজ তাঁকে দাম দিতে হল।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়