Sunday, December 21

পাক সেনা প্রধান পারবেন কি?


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ যাকে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর অস্থিরতা মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত সফল বলে মনে করা হয় তিনি কি পারবেন পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জেঁকে বসা জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে পরাস্ত করতে? গত শুক্রবার তিনি ড. উসমান, যিনি আকা মোহাম্মদ নামে পরিচিত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা জারি করেন। এর মাধ্যমে তিনি এক অদৃশ্য সীমা লঙ্ঘন করেন, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক। উসমান ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে অপহরণ এবং ১৪ জনকে হত্যা করেছিল। সেসময় উসমান ১০ জনের একটি জঙ্গি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলো। তাকে অনেক আগেই ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু উসমান পাঞ্জাবে তালিবানদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। ফলে তাকে ফাঁসি দিলে তালিবানরা পাঞ্জাবে নির্মম প্রতিশোধ যজ্ঞ চালানোর হুমকি দিলে তার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু রাহিল শরীফ এবার সে পথেই হাঁটলেন। জেনারেল রাহিল শরীফ সেনা প্রধান হওয়ার আগে সেনা প্রশিক্ষণ কমান্ড ক্যাম্পে আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের উপর প্রশিক্ষণ কোর্স ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ইসলামি মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সেনা অভিযানের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালও আরও উন্নত করেন বলে কথিত আছে। এর পেছনে তার মূল উদ্দেশ্য সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একটি শক্তিশালি নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ জেনারেল রাহিল শরীফকে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। আরো দু’জন প্রার্থীকে টপকে রাহিল ওই পদে নিয়োগ পান। ফলে তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। রাহিল শরীফকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করার আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল- তাকে খুব বড় ধরনের পেশাদার সেনা কর্মকর্তা মনে করা হতো না। তবে ভারতের পাকিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক রানা ব্যানার্জী বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান যে, রাহিল শরীফকে তার নতুন ভূমিকার জন্য প্রশংশিত করা হচ্ছে। রাহিলকে তার পূর্বসূরী জেনারেল আশফাক কিয়ানীর তুলনায় অনেক বেশি অকপট যোদ্ধা মনে করা হয়। চলতি বছরের নভেম্বর রাহিল দুই সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। এসময় তিনি কুটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রের সীমা অতিক্রম করেই প্রতিরক্ষা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বর্তমান পাক সেনবাহিনীকে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ বিশৃঙ্খলামুক্ত বলে আখ্যায়িত করেন। চলতি বছরের সেপ্টম্বরে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ও আবদুল কাদরির দল যখন নওয়াজ সরকারকে হুমকির মুখে ফেলেছিল তখন আইএসআইয়ের সাবেক ডিজি জাহিরুল ইসলাম তাকে ক্ষমতা দখলের আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি জেনারেল রাহিল শরীফ। রাহিলের অধীনেই পাক সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তানে জার্ব-ই-আজব নামক অভিযানের অধীনে বিমান হামলা চালিয়ে এ পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক শীর্ষ জঙ্গিকে হত্যা করে। ধারণা করা হয় এর প্রতিশোধ হিসেবেই তালিবানরা সম্প্রতি পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত এক স্কুলে হামলা চালিয়ে প্রায় দেড়শ শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা করে। গত সেপ্টম্বরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। এর মধ্যে তিনি আইএসআই এর প্রধান হিসেবে রিজওয়ানকে নিযুক্ত করেন, যিনি ছিলেন তার নিজের রেজিমেন্টেরই সদস্য। ধারণা করা হয় নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্যই তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ডিসেম্বরে এক সেনা সম্মেলনে তিনি জানান যে, সন্ত্রাসবাদ মোকবেলা করাই তার প্রধান লক্ষ্য। জেনারেল শরীফের বাস্তব হবে পরীক্ষা লস্কর-ই-তৈয়বা, লস্কর-ই জানভি এবং বেলুচিস্তানে আল কায়েদাকে মোকাবেলা করা। ইতোমধ্যেই এই দলগুলো একটি বহুজাতিক সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে। এদের সাথে জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানী নেটওয়ার্কের সম্পর্ক আছে বলেও ধারণা করা হয়। এখন গুরুতর প্রশ্ন হল- এতোদিন যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জঙ্গী দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করে আসছিল এবং ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিল, সেই সেনাবাহিনী কি এখন পারবে ওই একই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে?

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়