Friday, December 19

মানবসেবায় আল্লাহ খুশি


জাওহার ইকবাল খান: ঋতুর পালাবদলে এখন চলছে শীতকাল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইচ্ছায় রাত-দিনের পরিবর্তনে ঋতুর এ পরিবর্তন সূচিত হয়ে থাকে। ঋতুর এ পালাবদল পরম করুণাময় আল্লাহর কুদরতের এক মহানিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)। পৌষের শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে সারা দেশ। উত্তরের হিমেল হাওয়ার তীব্রতা সবাইকে জবুথবু করে তুলেছে। শীতের এ প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সবাই সাধ্যমতো আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সামর্থ্যবান শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য গায়ে চাপান কোট, বেস্নজার, সোয়েটার, কার্ডিগান কিংবা চাদর। তারা হাতে-পায়ে মোজা পরাসহ আরও রকমারি পোশাকে নিজেকে আচ্ছাদিত করে নেন। কিন্তু শীতের এ তীব্রতা বাস্তুহারা ও ছিন্নমূল মানুষের অসহায়ত্বকে আরও প্রকট করে তুলেছে। শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য হতদরিদ্র মানুষের নেই নূ্যনতম সম্বল। কনকনে শীত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নেই তাদের উপযুক্ত আশ্রয় বা বাসস্থান। সহায়-সম্বলহীন বাস্তুহারা এসব মানুষের হাড় কাঁপানো শীতে ফুটপাতে বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। শুকনো গাছের ডালপালা, লতাপাতা আর খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাদের প্রাণপণ লড়াই করতে হয়। এ হাড় কাঁপানো শীতে যে বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছে, তাদের সহায়তা করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো সব সামর্থ্যবান ব্যক্তির ধর্মীয় দায়িত্ব ও নৈতিক অধিকার। কেননা কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, 'আর তাদের ধনসম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।' (সূরা আল-জারিয়াত : ১৯)। শীতার্ত কর্মজীবী বিশেষত দিনমজুর ও রিকশাওয়ালাদের শীত নিবারণের জন্য নেই প্রয়োজনীয় শীতের পোশাক। কনকনে ঠা-া বাতাসে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তীব্র শীতের প্রকোপে অসহনীয় কষ্ট ও নিদারুণ যন্ত্রণায় কালাতিপাত করছেন লাখ লাখ বাস্তুহারা, ছিন্নমূল, দুস্থ, নিঃস্ব ও বস্ত্র অভাবী নারী-পুরুষ। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবু তারা শীতের থাবা থেকে কোনোভাবে গা বাঁচিয়ে জীবন-সংগ্রামের নিত্যদিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভাবী, হতদরিদ্র এসব শীতার্ত মানুষের প্রতি সমাজের বিত্তশালী ও সামর্থ্যবানদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত প্রসারিত করা ঈমানি দায়িত্ব। এ সময়ে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র সরবরাহ করে তাদের তীব্র হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য সহায়তা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। অন্ন ও বস্ত্র অভাবী মানুষের দুঃখকষ্ট ও যাতনা লাঘব করা একদিকে যেমন গুরুদায়িত্ব, অন্যদিকে এটা নিঃসন্দেহে মহাপুণ্যের কাজ। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, 'এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সীলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন। (আবু দাউদ)। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে থাকে। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা এ সময়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নিউমোনিয়াসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হন। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অভাবী মানুষকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রাদি সরবরাহ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের শীত মোকাবিলার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। সময়মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শীতের দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি শীতজনিত রোগে মৃত্যুর হারও বাড়বে। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সামর্থ্যবানদের শীতার্ত বাস্তুহারা, ছিন্নমূল ও অন্ন-বস্ত্র অভাবী মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। সমাজ বাস্তবতায় মানুষ পরস্পর একে অন্যের অংশীদার। সমাজে একজন অন্যজনের সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হবে এটাই নৈতিক দাবি। পারস্পরিক মানবতাবোধ ও সহানুভূতি নিয়ে একজন বিপদে পড়লে অন্যজন পাশে দাঁড়ানো ধর্মীয় দায়িত্ব। তাই সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সামর্থ্য অনুযায়ী হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের সহায়তা করা একান্ত কর্তব্য। লেখক : শিক্ষক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়