Wednesday, October 29

সূর্যে খুঁজি স্রষ্টাকে


আবুল কালাম আনছারী: সমুজ্জ্বল আলোকময় সূর্য। মহান আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি। তার সৃজন কুশলতার নিপুণ শৈলীর মহা প্রমাণ। এ সূর্যালোকেই মানুষ জীবন ধারণ করে। হাঁটাচলা, পানাহার, বয়োবৃদ্ধি প্রভৃতিতে আশৈশব সূর্যের সঙ্গেই সম্পৃক্ত সবাই। সূর্যালোকেই পৃথিবী সবুজাভ থাকে। গাছপালা, তরু-লতার বৃদ্ধি ঘটে। আম, আনারস, আপেল, আঙুর, ধান-গমসহ যাবতীয় ফল-ফলাদি পরিপক্ব হয়। দিনের আলো, রাতের নিকষ কালোর অনুভূতি সে তো সূর্যেরই অবদান, যা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'মহান সত্তা আল্লাহ। যিনি সূর্যকে বানিয়েছেন উজ্জ্বল আলোকময়।' (সূরা ইউসুফ : ৫)। সূর্যের আলোর সঙ্গেই মিশে আছে পৃথিবী এবং সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব ও জীবন-মরণের সম্পর্ক। তার সাহায্যেই মানুষ দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। গবেষণা, আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের সুযোগ লাভ করে। সূর্যাস্তের কারণে অগণিত রহস্য ও তত্ত্বময় রজনীর আবির্ভাব ঘটে। সূর্যের আলোর সাহায্যে সৃষ্টি হয় লাখো-কোটি বস্তু ও বস্তু সমষ্টি। শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের বয়স, শৈশব, যৌবন এবং বৃদ্ধকালের পরিবর্তনে সূর্য ক্রিয়াশীল। মোটকথা, সূর্যই পৃথিবীর আলো। অন্যথায় পৃথিবী হতো তিমিরাচ্ছন্ন। এ কারণেই কোনো কোনো সম্প্রদায় সূর্যকে দেবতার আসনে সমাসীন করে তার পূজা-অর্চনা করে। অথচ তারা জানে না যে, সূর্যের এই ক্ষমতা ও অবদান নিরঙ্কুশ নয়। সূর্যালোকের কল্যাণ সবার জন্যই নিবেদিত। নির্দিষ্ট কোনো জাতি-গোষ্ঠীর জন্য তা সীমাবদ্ধ নয়। কেবল একটু স্থান-কালের ব্যবধান। কেননা 'সূর্য তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করে।' (সূরা ইয়াসিন : ৩৮)। সময় ও স্থানানুপাতে সারাক্ষণই সে প্রদক্ষিণ করে। কখনও এশিয়া, কখনও ইউরোপ, কখনও আফ্রিকা। আবার কখনও আমেরিকা কিংবা বিশ্বের অন্য কোথাও। মোটকথা রাত-দিনের কখনও সে এতটুকু স্থির থাকে না। তাই তো দেখা যায়, এক দেশে রাত হলে অন্য দেশে সন্ধ্যা নামে। কোথাও ভোরে পাখি ডাকে। কোথাও জোহরের আজান হয়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু জর গেফারি (রা.) একদিন সূর্যাস্তের সময় রাসূল (সা.) এর সঙ্গে মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সা.) বললেন, আবু জর, সূর্য কোথায় অস্ত যায় জানো! তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, সূর্য চলতে চলতে আরশের নিচে পৌঁছে আল্লাহকে সেজদা করে। (সহিহ বোখারি : ৪৬১৬)। সুনিপুণ সৃষ্টি রহস্য : এই যে দীপ্তিময় সূর্য, সকালে রক্তিমাভ ছড়িয়ে পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়। ক্রমান্বয়ে তার কিরণমালা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। সবখানে। এটিও মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। একটি ক্ষণস্থায়ী আলোর গোলক। পরিশেষে কেয়ামতের দিন এর আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এরশাদ হচ্ছে, 'আল্লাহ তায়ালা চন্দ্র ও সূর্যকে আজ্ঞাধীন করেছেন। তার প্রতিটিই নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলমান।' (সূরা রাদ : ২)। আজ্ঞাধীন করার অর্থ হলো, প্রত্যেককে যে কাজে নিয়োজিত করেছেন তারা তা অহর্নিশভাবে করে যাচ্ছে। হাজারো বছর অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো সময় তাদের গতি চুল পরিমাণও কম-বেশি হয়নি। তারা ক্লান্ত হয় না এবং নিজের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে অন্য কাজেও লিপ্ত হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের দিকে ধাবিত হওয়ার অর্থ এটাও হতে পারে, তারা সমগ্র বিশ্বের জন্য নির্ধারিত সময় অর্থাৎ কেয়ামতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ গন্তব্য স্থলে পৌঁছার পর মহাজগতের গোটা ব্যবস্থাপনা তছনছ হয়ে যাবে। 'তিনি সৃষ্টি করেছেন চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রপুঞ্জকে স্বীয় আদেশের অনুগামী করে। শুনে রাখো, তারই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দেয়া।' (সূরা আরাফ : ৫৪)। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রপুঞ্জকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, তারা সবাই আল্লাহর আদেশের অনুগামী। এতে প্রত্যেক বুদ্ধিমানের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে। কেননা বড় বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি মেশিনেও সাধারণত কিছু না কিছু দোষ থাকে। দোষ-ত্রুটি যদি নাও থাকে তবুও যত কঠিন ইস্পাতের মেশিন ও কলকব্জাই হোক না কেন চলতে চলতে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ঢিলে হয়ে যায়। ফলে মেরামত ও প্রসেসিং দরকার হয়। এ কারণে অনেক দিন ধরে অকেজো থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট মেশিনের প্রতি লক্ষ্য করুন, প্রথম দিন যেভাবে চালু করেছিল আজও সেভাবেই অক্ষত আছে। এগুলোর গতিতে এক মিনিট বা এক সেকেন্ডও পার্থক্য হয় না। কোনো কলকব্জা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না এবং কখনও ওয়ার্কশপেও পাঠাতে হয় না। শুধু আল্লাহর আদেশে চলছে। (মায়ারিফুল কোরআন (বাংলা) পৃ. ৪৪৬)। সূর্যের পরিণতি : অবশেষে সূর্যকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে এবং সূর্যের উত্তাপে সারা সমুদ্র অগি্নতে পরিণত হবে। যেমন এরশাদ হয়েছে, '(স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।' (সূরা তাকভির : ১)। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, 'কেয়ামতের দিন চন্দ্র, সূর্য সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হবে।' (সহিহ বোখারি) জাহান্নামিদের সঙ্গে সূর্যকেও সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। সূর্যের কী দোষ! বস্তুত সূর্যের কোনো অপরাধ নেই। তবুও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে সূর্য পূজারিদের সামনে তাদের ভ্রান্তি প্রকাশের জন্য। বিরাট শক্তির আধার মনে করে তারা যে সূর্যের পূজা করেছে, তাই আজ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হচ্ছে মূলত সূর্য পূজারিদের কর্মপীড়া বহুগুণে বৃদ্ধি করার জন্য। লেখক : সহকারী মুফতি, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়