Friday, October 24

মুখের ঘায়ে হেলা নয়


মুখের কিছু অসুখ আছে, যা সহজেই ভালো হতে চায় না। এই নিয়ে রোগী প্রায়ই দুশ্চিন্তায় থাকেন। ঘন ঘন চিকিৎসক বদলের পরও রোগী কাঙ্ক্ষিত ফল পান না। এ রকম একটি রোগের নাম লাইকেন প্ল্যানাস। এটি একটি অটোইমিউনজনিত রোগ। এতে মুখের আবরণ বা লাইনিং গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়। রোগী দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট ভোগ করেন। এ রোগের কারণ এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। দীর্ঘদিন লাইকেন প্ল্যানাসে আক্রান্ত থাকলে তা স্কোয়ামাস সেল ক্যানসারে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান মেডিকেল রিসার্চ জার্নাল-এ রোগটির ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কারো মুখের ভেতরে লালচে ঘা থাকলে তার দ্রুত চিকিৎসা করানোর তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এ রোগটি মানুষের মুখের ভেতরে গালের অভ্যন্তরে ও পেছনের দিকে বাক্কাস মিউকোসাতে দেখা যায়। এ ছাড়া মাড়ি, জিহ্বা, ঠোঁট ও মুখের অন্যান্য অংশেও হতে পারে। মুখের লাইকেন প্ল্যানাসের দুটি রূপে দেখা যায়। এর একটি হলো, রেটিকুলার ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস ও অপরটি হলো ইরোসিভ ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস। রেটিকুলার লাইকেন প্ল্যানাস কোনো কারণ ছাড়াই মুখের ভেতরে যেকোনো স্থানে হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে সাদা লেসিট্রাই লক্ষ করা যায়। মাঝে মাঝে ব্যথাও হয়। লবণ বা ঝালজাতীয় কিছু খেলে জ্বালা হতে পারে। এ ছাড়া বাক্কাস মিউকোসাতে প্যাপিউলও দেখা যেতে পারে। প্যাপিউল হলো শক্ত ফোলা ত্বক বা অস্বাভাবিক ত্বক, যা ১ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। স্ট্রাই বলতে ত্বকের অসম জায়গা বোঝায়, যা ব্র্যান্ড স্ট্রাইপ অথবা লাইনের মতো দেখায়। একটি মুখের ভেতরে স্পষ্ট দেখা যায়। মুখের ভেতরে ছড়িয়ে থাকে এই রোগটি। ইরোসিভ লাইকেন প্ল্যানাসে আক্রান্ত স্থানে লালচে বর্ণ দেখায়, যা ইরাইথিমা নামে পরিচিত। আক্রান্ত স্থানের চারপাশে সাদা রেডিয়েটিং দেখা যায়, যা একসময় মাড়িতে আলসার হতে পারে। মুখের ভেতরেও সাদা সাদা ঘা দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, মুখের লাইকেন প্ল্যানাস রোগের সঙ্গে ইমিউনো প্যাথজেনিসিসের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। যদিও এর জন্য দায়ী ইস্টোজেন শনাক্ত করা চিকিৎসকদের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি। ইমিউনো প্যাথজেনিসিস এমন একটি বিষয়, যা আসলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই ক্ষমতা কমে গেলেই এ ধরনের সমস্যা মুখে দেখা দিতে পারে। সিস্টেমিক ড্রাগ থেরাপি এনএস এআইডি এন্টিম্যালেরিয়াল জাতীয় ওষুধ যদি লাইকনয়েড লিশনের কারণ হিসেবে ব্যবহার হয়, সে ক্ষেত্রে এই ধরনের অসুখ বেশি হতে পারে। রোগটি পুরোপুরি সেরে ওঠে না বলেই রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। এ রোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মলম প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এটি আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত স্থানে স্টরয়েড জাতীয় ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। আবার মুখে খাওয়ার ওষুধও দেওয়া হয়। মুখের লাইকেন প্ল্যানাস জাতীয় রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক খেয়াল করেন লিভারে কোনো সংক্রমণ ঘটেছে কি না। লিভারের সংক্রমণের কারণেও এই রোগ হতে পারে- চিকিৎসকদের অভিমত এমনই। এ ছাড়া নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস-সি শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী মুখের ঘায়ের জন্য অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে রোগীকে। রোগীকে শুধু চিকিৎসক পরিবর্তন করলেই চলবে না, খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে- মেডিকেল গবেষকদের পরামর্শ এটাই। তবে মুখের ঘা থেকে মুখের ক্যানসার যে হতে পারে, সেটাও রোগীকে গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় রাখতে হব I

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়