Friday, October 24

কেউ কারও দাস নয় সবাই আল্লাহর বান্দা


আলী হাসান তৈয়ব সম্প্রতি থাইল্যান্ডে ১৩০ বাংলাদেশী দাস শ্রমিক উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাদের ওষুধ খাইয়ে, হাত-পা বেঁধে নৌকায় করে থাইল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রায় ৩০০ বন্দি ছিল। এরপর তাদের থাইল্যান্ডের উপকূলে জঙ্গলের মধ্যে লুকানো কিছু ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দাস-শ্রমিক হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। (বিবিসি)। হতভাগ্য এসব বাংলাদেশীর কষ্টক্লিষ্ট চেহারা ও করুণ আর্তি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে, যা বিবেকবান প্রতিটি মানুষকে কাঁদিয়েছে। আল্লাহর প্রেরিত মানবতার ধর্ম ইসলাম তাই দাস প্রথা নির্মূলে অতুলনীয় সফল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইসলামের আবির্ভাবকালে বিশ্ব-সমাজে যুদ্ধবন্দিদের দাস বানিয়ে নেয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। ইসলামের আগমনের পরও কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ রেওয়াজ অব্যাহত ছিল। ইসলাম কেবল শত্রুদের সঙ্গে তাদেরই অনুরূপ আচরণ করতে গিয়ে যুদ্ধবন্দিকে দাস বানানোর অনুমতি প্রদান করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে দাসত্ব কেবল আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সবার মালিক। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দাসত্বের নয়; ভ্রাতৃত্বের। মানুষের সঙ্গে মানুষের পার্থক্য নিরূপিত তাকওয়ার মানদ-ে। আর তাকওয়া একটি ব্যক্তিগত অর্জন। মানুষ বা সৃষ্টি-জীবের পক্ষে পার্থিব-জীবনের কোনো নিশ্চিত গুণ দেখে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় কাউকে তাকওয়া দান করা বা এর উত্তরাধিকার বানানো। (দ্রষ্টব্য সূরা হুজরাত : ১৩)। তাছাড়া ইসলাম দাস প্রথাকে প্রাকৃতিক নিয়ম বলে স্বীকার করে না। বরং একে ব্যতিক্রমী অবস্থা বলে গণ্য করে। এ অবস্থা বদলাতে ইসলাম প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করেছে। যাতে লোক-সমাজে সম্পর্কের প্রচলিত নিয়ম ও বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। এ কারণেই ইসলাম স্থায়ীভাবে দাস প্রথা নির্মূলে প্রয়োজনীয় বিধি ও আইন প্রণয়ন করেছে। দাসত্বের একমাত্র বৈধ উপায় বন্ধ হওয়ার পর ইসলাম নানা উপায়-উপলক্ষে দাসত্বের নিয়ম তুলে দিয়েছে। এসব উপায়ের মধ্যে রয়েছে_ বিভিন্ন পাপের কাফফারাস্বরূপ (ক্ষতিপূরণ) প্রদেয় তিনটি সুযোগের প্রথমটি করা হয়েছে গোলাম আজাদ করা। তেমনি যে দাস, সে যদি তার দাসত্বের মূল্য পরিশোধ করে স্বাধীন হতে চায়, তাকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, এমনকি বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তা পরিশোধের অবকাশ পর্যন্ত দিয়েছে। গোলাম আজাদ করাকে বড় নেকির কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ঘোষণা করেও দাসত্ব নির্মূলের পথ সুগম করেছে। শুধু তাই নয়, যে বাঁদি তার মনিবের সন্তান জন্ম দিয়েছে, মনিবের মৃত্যুর পর তার মুক্তিপ্রাপ্তিও নিশ্চিত করেছে। (সূরা নূর : ৩৩; আল-বায়ানুনি ওয়া খাতির : ২/২৯৫)। কোরআনে কারিমে দাসমুক্ত করাকে ধর্মের ঘাঁটি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, 'অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে, দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান_ এতিম আত্মীয়কে অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার।' (সূরা বালাদ : ১১-১৭)। মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য সম্পদ ব্যয় করা বড় সৎকাজ বলে গণ্য করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, 'সৎকর্ম শুধু এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই... আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক এবং মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য।' (সূরা বাকারা : ১৭৭)। তেমনি মহানবী (সা.) স্বাধীন ব্যক্তিকে কেনাবেচা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। নবী (সা.) বলেন, 'আমি কেয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হব, ১. যে আমার নামে শপথ করে অতঃপর বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে। ৩. যে কোনো মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে অথচ তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না।' (সহিহ বোখারি : ২২২৭)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়