মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
ইসলাম শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। বিশৃঙ্খল, বাউন্ডুলে, যাযাবর জীবনকে ইসলাম সমর্থন করে না। সুন্দর, গোছানো জীবনযাপনের জন্য ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলা আবশ্যক। আর ইসলামের এ বিধিবিধান মেনে চলতে গিয়ে আমরা যেন একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একটু বেশিই তাড়াহুড়া করে ফেলি। ফলে সওয়াব অর্জনের পথে কখনও কখনও গোনাহ হয়ে যায়।
তাড়াহুড়া করে অজু করা
অজুর ফরজ চারটি। মুখমন্ডল ধৌত করা, উভয় হাত কনুইসহ ধোয়া, মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করা এবং উভয় পা টাখনুসহ ধোয়া। এগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। হাত-পা, মুখমন্ডলের নির্দিষ্ট স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। কোনো জায়গা শুকনো থাকলে অজু হবে না। তাই তাড়াহুড়া করে অজু না করা ভালো। অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম শরিফ)।
দৌড়ে গিয়ে জামাতে শরিক হওয়া
আজানের কমপক্ষে ১৫ মিনিট ঊর্ধ্বে ৩০ মিনিট পর মসজিদে জামাত হয়। আজান শুনে নামাজের জন্য বের হলে জামাত ছুটে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং সুন্নত পড়ে কিছুক্ষণ জিকির করা সম্ভব। অথচ আমাদেরই কিছু ভাইকে দেখি দৌড়ে এসে কোনোক্রমে জামাতে শরিক হন। অথচ এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসবিরোধী কাজ। তিনি (সা.) বলেছেন, যখন নামাজের একামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে নামাজের দিকে আসবে না। বরং ধীরস্থির এবং প্রশান্তির সঙ্গে হেঁটে হেঁটে আসবে। অতঃপর নামাজের যতটুকু অংশ পাবে তা আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (ইমামের সালামের পর) পূর্ণ করে নেবে। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। ধীরস্থির পরিপূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে নামাজ আদায় করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দুটি নাপাক বস্তুর (প্রস্রাব, পায়খানা) চাপ থাকলে সালাত হবে না। (মুসলিম শরিফ)।
কাতার পূর্ণ না করে নতুন কাতার শুরু করা
সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা আছে। সে জায়গায় না দাঁড়িয়ে অনেকেই নতুন কাতার শুরু করেন। ফলে কাতারের ডান কিংবা বাম দিক অপূর্ণ থাকে। মুসলি্ল থাকা সত্ত্বেও কাতার পূর্ণ হয় না। এভাবে কাতার অপূর্ণ রাখা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন। (নাসায়ি, হাকেম)।
অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোনো ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন। (তাবারানির আওসাত, সহিহ তারগিব : ৫০২)।
সামনের কাতারে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। হয়তো এ কারণেই শুক্রবার কিংবা রমজানে তারাবির নামাজে এসে একদল মানুষ চাপাচাপি করে সামনে গিয়ে বসে। জায়গা না থাকা সত্ত্বেও অনেকটা আরেকজনের গায়ের ওপর বসে পড়ে। এতে আরেক মুসলি্লর কষ্ট হয়। এটাও ইসলামসম্মত নয়। কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মোমিন সেই ব্যক্তি যাকে মানুষ নিজেদের জীবন ও ধনসম্পদের ব্যাপারে নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন মনে করে। (তিরমিজি ও নাসায়ি)।
অনেকে আবার অনেক জায়গা নিয়ে নামাজে দাঁড়ান। একটু চেপে যদি আরেক মুসলমান ভাইকে দাঁড়ানোর জায়গা দেয়া যায়, তবে সেটা ভালো নয় কি? মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে সবার অধিকার সমান। মুরবি্ব দোহাই দিয়ে সামনের কাতারে জায়গা রাখা ঠিক নয়। জায়নামাজ বিছানো কিন্তু লোক নেই। জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, অমুক সাহেব জায়গা রেখে গেছেন।
নামাজের সামনে দিয়ে যাওয়া
নামাজ পড়তে আসতে যেমন আমাদের তাড়াহুড়া, তেমনি নামাজ পড়ে যেতে তার চেয়েও বেশি তাড়াহুড়া। ফরজ নামাজের পরই একদল মুসলমান হুমড়ি খেয়ে পড়েন মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য। যেন মসজিদ থেকে বের হতে পারলেই জানে বেঁচে যাবেন। জুমার ফরজের পর তো রীতিমতো হুড়াহুড়ি লেগে যায়। ফরজের পর অনেকেই সুন্নত পড়তে দাঁড়িয়ে যান। তাদের সামনে দিয়ে অনেকেই অবাধে চলে যান।
অথচ নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া সমীচীন নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সালাতের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ পাপ রয়েছে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হতো। হাদিসের বর্ণনাকারী আবু নসর বলেন, আমার মনে পড়ে না ৪০ দিন না ৪০ মাস, না ৪০ বছর বলেছেন। (সহিহ বোখারি)। একটু অপেক্ষা করলেই হয়। নামাজের পর মসজিদে বসে থাকাও উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ নামাজ পড়ার পর জায়নামাজে যতক্ষণ অজুসহ উপবিষ্ট থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। ফেরেশতারা বলে, হে মাবুদ, তাকে ক্ষমা কর। হে মাবুদ তার ওপর রহম কর। (সহিহ বোখারি : ৩০৬)।
তারপরও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে দরজার কাছে কিংবা সিঁড়ির কাছে দাঁড়ালে মসজিদ থেকে আগে বের হওয়া সম্ভব। সিঁড়ি কিংবা গেটের কাছে যারা দাঁড়ালেন, তারা ফরজ নামাজের পর দ্রুত সুন্নতের নিয়ত না করে একটু অপেক্ষা করতে পারেন। এতে অন্যরা বের হতে পারবেন। আজকাল অধিকাংশ মসজিদে সুতরা তথা আড়াল করার নানা ব্যবস্থা থাকে। আলেমদের অনেকের মতে, সুতরা গ্রহণ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সুতরা ব্যতীত সালাত পড়বে না, আর তোমার সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দেবে না, যদি সে অগ্রাহ্য করে তবে তাকে বাধা দেবে, কেননা তার সঙ্গে কারিন (শয়তান) রয়েছে। (হাকেম, বায়হাকি)।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়