Saturday, October 11

হারিয়ে যাবে আসল টাঙ্গাইলের শাড়ি!


রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: শাড়ি আর বাঙালি নারী যেন পরিপূরক একে অপরের। হালফ্যাশনেও এই পোশাকের প্রতি আকর্ষণ কমেনি এতটুকু। আর শাড়ির মধ্যে টাঙ্গাইলের শাড়ির কদর একটু আলাদা। দেশ তো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয় এখানকার শাড়ি। টাঙ্গাইলের মধ্যে আবার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চ-ী ও সদর উপজেলার বাজিতপুর অঞ্চলের শাড়ির মর্যাদা একটু আলাদা। রঙ, নকশা আর বুননে পারদর্শিতার কারণে দামও একটু বেশি। আর এই সুযোগে দেলদুয়ারের ধুলটিয়া, কালিহাতীর বল্লা, রামপুর এমনকি পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও শাহজাদপুরে মেশিনে বানানো শাড়ি চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বলে। চোরাইপথে ভারত থেকে আসা শাড়িও যখন একই নামে বিক্রি হয়, তখন তাঁতীদের দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। নানা কারণেই টাঙ্গাইলে ঐহিত্যবাহী তাঁত আর জামদানি শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ে বেশি। হাতে চালানো মাকুতে উৎপাদনও হয় তুলনামূলক কম। কিন্তু অন্য এলাকায় মেশিনে তৈরি হওয়ায় সেই শাড়ির দাম পড়ে তুলনামূলক কম। আর জহুরির চোখ না হলে দুই শাড়িতে পার্থক্য ধরা পড়া কঠিন। তাই কম দামে বিক্রি করা যায় বলে নকল শাড়ির কদরই এখন বাজারে বেশি। আর এ কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আসল শাড়ির কারিগররা। সুতার দাম বৃদ্ধি, কারিগর ও মহাজনদের মধ্যে লভ্যাংশের অসম বণ্টন আর শ্রমিকের অভাবে তাঁতশিল্পের আগামী দিনগুলো নিয়ে সংশয়ে পড়েছে তাঁতশিল্পীরা। পোষায় না বলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁতের একাংশ। তাঁতীরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারের দোহাই দিলেও আমদানি মূল্য যতটা না বেড়েছে দেশের বাজারে দাম নেওয়া হচ্ছে তুলনায় অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে এক ধরনের জোট করে রেখেছে। কেউ দাম কমায় না, তাই বেশি দামে কিনতে বাধ্য করছে তাঁতীদের। করোটিয়া হাটেই কদর কম আসল শাড়ির দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের হাট বসে টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। প্রতি বুধবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসে এখানে কাপড় কিনতে। এই হাটে এখন আসল টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যায় কমই। একটি উন্নতমানের টাঙ্গাইলের শাড়ি হাতে বানাতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচদিন। অথচ মেশিনে একদিনে তৈরি হচ্ছে চার থেকে পাঁচটি শাড়ি। এতে হাতেবোনা শাড়ির খরচ পড়ে মেশিনেবোনা শাড়ির চেয়ে বেশি। মেশিনেবোনা শাড়ির দাম হাতেবোনা শাড়ির তুলনায় প্রতিটি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম পড়ে। তাই ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে বেশি। পাইকারি বাজারেই তাই মার খাচ্ছে হাতেবোনা তাঁতীরা। কাসেম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, উচ্চমূল্যে সুতা ক্রয়, অতিরিক্ত মজুরি, রঙ, প্যাকিং, বিদ্যুৎ বিলসহ পরিবহন খরচ মিলিয়ে একটি কাপড় তৈরি করে সুলভমূল্যে বিক্রি করা যাচ্ছে না। ১০ বছর আগেও করটিয়া হাটে একদিনে কেনাবেচা হতো প্রায় ১৫ কোটি টাকার শাড়ি। এখন তা নেমে এসেছে দুই কোটিতে। ভারতীয় শাড়িও বিক্রি হচ্ছে টাঙ্গাইলের নামে! গত ঈদুল ফিতরের আগে নকল শাড়ি টাঙ্গাইলের শাড়ি হিসেবে এলসি করার অভিযোগে ভারতের ব্যবসায়ীরা শাড়ি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে আবার শুরু হয় সে শাড়ি আমদানি। কেবল আমদানি নয়, চোরাচালান হয়েও আসে শাড়ি। আর চোরাকারবারিদের দাপটে এ দেশীয় কারিগরদের পথে বসার দশা হচ্ছে। ভারতীয় শাড়ি আসা বন্ধ করতে না পারলে মসলিন শিল্পের মতোই টাঙ্গাইলের শাড়িও এক সময় হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কারিগররা। এ জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ‘কারিগরের অভাবে সিরাজগঞ্জ ও পাবনার কারিগর দিয়ে টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদাই এর কারণ। আবার ক্রেতারা শাড়ি চাইলেও স্বভাবতই দাম বেশি হলে কিনতে চায় না। এ কারণে দাম কম রাখতে নানা কৌশল নেয় ব্যবসায়ীরা। এর সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের একাংশ।’

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়