Sunday, September 21

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান উপ-নির্বাচনে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী


ফেনী: ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে রোববার সকাল থেকে দিনভর ভোট কেন্দ্রগুলো মূলত ভোটারবিহীন ছিল। বিকেলে ভোটের ফলাফলে দেখা যায়- আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল আলিম পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৬৬ ভোট এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার পেয়েছেন ৪ হাজার ২৮৯ ভোট। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে কিছু যুবককে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেলেও ভোট কেন্দ্র ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ভোটের আগে শনিবার রাতে নির্বাচনী এলাকার বিভিন স্থানে বোমাবাজির ঘটনায় সাধারন ভোটারদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন জানায়, যাদেরকে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে দেখা গেছে তাদের বেশীর ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে আসা বহিরাগত। অপরদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়-আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখল, নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, আগের রাতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ীতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি, বোমাবাজির প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী – কারারুদ্ধ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চেীধুরীর পক্ষ থেকে ভোট বর্জন করা হয়েছে। মিনার চৌধুরীর বাড়ীতে প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ফজলুল হক চৌধুরী ওরফে সাজু নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। এদিকে সকাল ৮টা থেকে সরেজমিনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবগুলি ভোট কেন্দ্র ভোটার শুন্য। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বন্দুয়া দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮টি বুথে সামান্য কয়েকজন ভোটার থাকলেও প্রতিটি বুথে গড়ে একশত ভোট পড়েছে। একটি বুথে কোন মহিলা ভোটার না থাকলেও সেখানের একটি ব্যালট বই (১০০ ব্যালট) শেষ। অপর একটি বুথে মুড়িসহ ৩৬টি ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়েছে বলে জানায় সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুল করিম। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন-তিনি কিছু জানেন না। ওই কেন্দ্রের ২০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আবদুর রহমান নামে একজন ভোটার সাংবাদিকদের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয় ভোটারদেরকে রাতেই কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সকাল থেকে যারা ভোট দিচ্ছেন- তারা ফেনী শহরের বিরিঞ্চ এলাকার অতিথি ভোটার (বহিরাগত)। তিনি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন-তার ভোট আগেই দেয়া হয়েছে। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে হাসানপুর শাহ আলম চৌধুরী স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রেও কোন ভোটার দেখা যায়নি। সেখানে ৩৫৪০ ভোটের ৭টি বুথে ভোট হয়েছে মাত্র ৯৭টি। এভাবে দক্ষিন আনন্দপুর ও উত্তর আনন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলী আজম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্র, কমুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ফুলগাজী সরকারী কলেজ, ফুলগাজী পাইলট হাই স্কুল, নিলক্ষী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোন ভেটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে ফুলগাজী কলেজ কেন্দ্রের দুই পশে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেশ কিছু যুবককে অপেক্ষা করতে দেয়া যায়। দুপুরে নিলক্ষী ভোট কেন্দ্রের বাইরে বেশকটি ককটেল বিস্পোরিত হয়। মিনার চৌধুরীর প্রধান সমন্বয়কারী ফজলুল হক চৌধুরী সাজু তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনের আগের রাত ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ীবাড়ী হামলা, বোমাবাজি ও গুলিবর্ষনের মাধ্যমে ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি করে। সকাল থেকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন ও আমজাদহাট ইউনিয়নের সবগুলি ভোট কেন্দ্রসহ উপজেলা অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয়। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে এজেন্টদের মারধর করে জোর পূর্বক ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। পশ্চিম বসিকপুর কেন্দ্রে মো. সেলিম নামে একজন যুবদল নেতাকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, স্থানীয় ছাত্রদল নেতা সাইফুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও জেলা এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক কেউ এতে উপস্থিত ছিলনা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুল আলিম-বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং সুষ্টু নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন- নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোন প্রার্থীর পক্ষে কারচুপি বা অন্যকোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়