Tuesday, September 30

বাঁচানো গেলো না তাজকিয়াকে


কানিউজ ডেস্ক: মৃত্যুর সাথে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী তাজকিয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বোম্বে থেকে তার লাশ ঢাকা এসে পৌছে। পরে দুপুর ২টায় এ্যাম্বুলেন্স যোগে সিলেটের পথে রওয়ানা দিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। আজ রাত সাড়ে ১০টা খাদিমপাড়া মদিনা মসজিদে জানাযা শেষে মেধাবী ছাত্রী তাজকিয়াকে দাপন করা হবে। লন্ডন প্রবাসী তার ভাই ফয়েজুর রহমান চৌধুরী এ তথ্য জানান। তাজকিয়ার জন্য সকলের কাছে তিনি দোয়া প্রার্থী। তাজকিয়া। পুরো নাম তাজকিয়া জান্নাত চৌধুরী। অসম্ভব মেধাবী একটি মেয়ে। আর তা না হলে কি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক পড়ার সুযোগ পায়। ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী তাজকিয়া সারাক্ষণ ক্লাস, ল্যাব আর পড়ার টেবিল নিয়েই ব্যস্ত থাকত। স্বপ্ন বড় পদার্থ বিজ্ঞানী হবে। মনে মনে ভাবে তারই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র অমিতের মত নাসায় কাজ করবে। সবকিছু চলছিলও ঠিকঠাক মতো। সামনে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষাও দেয়া কথা। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাজকিয়া। যেমনটা আমরাও হই মাঝে মাঝে; আবার সুস্থ হয়েও যাই। কিন্তু দিন যায় রাত আসে, গড়িয়ে যায় সপ্তাহ। সুস্থ হয়না তাজকিয়া। বদলানো হয় ডাক্তার। ধরা পড়েনা কিছুই। এক পর্যায়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকরা জানান, তাজকিয়া ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। আসমান ভেঙ্গে পড়ে তাজকিয়া ও তার পরিবারের ওপর। ধবংস স্তুপে পরিণত হয় তাদের সবকিছু। এ আঘাত যেন সুনামির চেয়েও ভয়কর। শুধু তাজকিয়া ও তার পরিবার নয়; শিক্ষক ও সহপাঠি কেউই ভাবেনি স্বপ্নের পথে এভাবে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে স্বয়ং মৃত্যু। সবাই দিশেহারা হয়ে খুঁজছে আশার অভয়। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে রাজধানীর ‘ধানমন্ডি জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কিডনী সেন্টার’-এ ভর্তি আছে তাজকিয়া। চিকিৎসকরা জানান, তার ‘একুইট মাইলোব্লাস্টিক লিউক্রেমিয়া’ ৪র্থ স্টেইজে আছে। এই স্টেইজের চিকিৎসা দেশের কোন হাসপাতালে নেই। যে কারণে তাকে বাঁচাতে হলে দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। প্রতিস্থাপন করতে হবে অস্থিমজ্জা ও কয়েকটি কেমো থ্যারাপীও দিতে হবে। ডাক্তারের এমন সংকেতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাজকিয়ার পরিবার। ছুটেছেন হন্য হয়ে। মেয়েকে নিয়ে এখন কি করবেন তাও ভেবে পাচ্ছেনা। আর পাবেনইবা কি করে? শেষ সম্বল মাথা গোজার ঠাই খাদিম পাড়ার ছোট বাসাটি বিক্রি করেও এতো টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে যে সম্ভব ছিল না। তারপরও থেমে থাকেননি বাবা আব্দুর রাজ্জাক। নিজে না পারলে কি হবে; তার দৃঢ় বিশ্বাস মেয়ের চিকিৎসার খরচ বহন করবে সিলেটবাসীর পাশাপাশি দেশের ১৬ কোটি মানুষ। এগিয়ে আসবে প্রবাসী বাঙ্গালীরাও। সে বিশ্বাস থেকেই মেয়েকে ভারতের মুম্বাইয়ে ‘টাটা মেরোরিয়াল হাসপাাতাল’-এ ভর্তি করান তিনি। অবশেষে সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তাজকিয়া।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়